ট্রেনে উঠে পড়েছি

ভূমেন্দ্র গুহ

টিকিট কাটা হয়ে গেছে, বাক্স-প্যাঁটরা জলের বোতলটা
অব্দি গুছিয়ে নিয়ে সিটে ব’সে পড়েছি, আরও কিছুটা
সময় অপেক্ষা, নিজেকেও যতটা পারি গুছিয়ে
নিচ্ছি, গাড়ির ভোঁ নিয়ে আবেগ-টাবেগের কোনো
মানে হয় না। লোকটা তখনই এককাহন রাগ নিয়ে
এসে সাতকাহন বকবক করতে শুরু ক’রে দিলো।
কাউন্টারের শাটার নামানো : ‘লাঞ্চের সময়’।
খুব একটা সুখের অভিজ্ঞতা নয়, বাড়ি থেকে
বেরিয়ে প’ড়ে বেড়িয়ে না যেতে পারাটা ঢের
বিরক্তিকর। কে-ই-বা বিরক্ত হয় না, অথবা,
মনে হয়, সবাই বিরক্ত হয়। একটা মোটা-মতন
লোক শুয়ে ছিল, সে ব’লে উঠল, ‘এটা তো
আবার বুক-করা সিট, কতকগুলো লোক এসে
ঠেলে-ঠুলে আমাকে তুলে দিতে চাইল, কী
দিনকাল!’ ঠোঁট টিপে রেখে চুপ ক’রে থাকতে
হয়। এই ভাবেই আমরা বৈতরণী পার হই,
পরজন্ম গিয়ে পৌঁছই। আর সবকিছুই একই রকম
ভাবে চলে, চলছে। একটা কোনো অভিজ্ঞতা
আমাদের জুটে যায় না যার হাতে সম্পূর্ণভাবে

ব্যবহৃত হতে আমাদের ভালো লাগে : আমরা
হয় একটু এগিয়ে থাকি অথবা একটু পেছিয়ে
থাকি। জিনিসটা শুধুই আমাদের মাথা ঘুলিয়ে
দ্যায়, খুব-যে একটা আহত করে, তা-ও হয়তো
নয়। আমরা ব্যথা পাই, ঢের ব্যথা পাই – পাই
আমাদের হৃদয় ভেঙে যেতে থাকে এমন সব
কারণে যাদের কোনোভাবেই মহনীয় বলা
যায় না। প্রতিদিন আমাদের মাইনে পাওয়ার
দিন : মাইনে যা দেওয়া হয়, তা হাত পেতে
নিতেও হীনতায় ভুগতে হয়। একটা অপ্রীতিকর
বিস্বাদ জিভের ডগায় লেগে থাকে। ভেবে দেখলে
তা-ও এমন কোনো একটা মহামারি ব্যাপার
নয়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে একটা ডিমের
ডেভিল অথবা একটা চিকেন-রোল খেয়ে
ফেলা অথবা এক প্লেট দালদা-চপচপ চাউমিন
খেয়ে নেওয়া, সঙ্গে একটা বরফ-ঠান্ডা
কোক অথবা থামস-আপ – যে-ক’টা দাঁত
প’ড়ে আছে আজও, তার আর কী ক্ষতি
হতে পারে, না হয় প’ড়ে যাবে! হার্ট?
সরবিট্রেট তো খাচ্ছিই। সরবিট্রেট ভরসা।