আমি কার কাছে

রহিমা আখতার কল্পনা

 

আমি কার কাছে আগুন শিখতে যাবো!

আমার আগুনে ঝাঁপ দিয়ে খোলা চোখে

পুড়ে পুড়ে নিভে গেছে লেলিহান অনেক দোজখ।

 

আমি কার কাছে শিখি বলো অনন্ত শূন্যতা!

অনিত্য আমিই নৈরামণি চলিষ্ণু চর্যায়

আমার শূন্যতা থেকে জন্ম ঘটে অযুত প্রাণের।

 

কার কাছ থেকে আমি পাঠ নেবো ঘাট-আঘাটার!

আমিই তো পদপিষ্ট মায়াকাড়াঘাট-

আমাকে মাড়িয়ে সবে উদিত সূর্যের দেশ খুঁজে খুঁজে

স্বজন-পড়শি ছেড়ে অন্ধরাতে নিরুদ্দেশে যায়।

 

আমি কার কাছে উষ্ণতা চিনতে যাই, বলো-

আমার উষ্ণতা দিয়ে মোম নয়, গলিয়েছি ঊষর পাথর

বহুশত বর্ষা যাকে ভিজিয়েছে, ছাই হয়ে যেতে যাকে

প্ররোচনা দিয়েছে হাজারবর্ষী তীব্র অগ্নি আর খরা।

 

আমি কার ছবি দেখে চিনবো দহন, তৃষ্ণা!

আমার দুচোখে কালীদহ নদী, বুকে আরবের মরু

পুড়ন্ত দুপুরে নেই একফোঁটা জল কোনো কলসেই।

 

আমি কাকে পাঠ করে শিখি শীতলতা, অবিচল ক্ষমা!

সহিষ্ণু পশুর নিষ্ঠা পূর্ণমাত্রা আয়ত্ত করেছি আমি

আমাকে চৌকাঠ করে চাঁদ হাতে ছুঁতে

ঘর ছেড়ে বের হয়ে গেছে স্বনির্ভর সকল স্বজন।

 

আমি কার অনুবাদে পড়বো মাটিকে সংশয়হীন-

আমিই যে নির্যাতিত ফসল-সম্ভবা মাটি

নির্বিবাদে সর্বপাপ সকল পুণ্যের গাথা গর্ভে ধরে রাখি

নিরুপায় সাক্ষী আমি সহস্র খরার

প্রতিবাদহীন আমিই পৃথিবী বোবা, আমিই পৃথিবী।