iqbal

  • চিত্রনাট্য

    পরিদের শরীরে কষ্ট মনে দুঃখের সংসার পূর্ণিমা রাত জ্যোৎস্নাজলে প্লাবনের রাত একদল পরি নামে শরীর থেকে মন থেকে খুলে ফেলে সব আবরণ উড়ায় বাতাসে পদ্মবিলে স্নানের উৎসব দুঃখদের কষ্টদের শরীরের মনের পদ্মবিলে দেবে বিসর্জন পূর্ণিমার জ্যোৎস্নাজলে ভিজে ভিজে গাইবে – সুখ-সংগীত – এমন একটি দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতে একজন চিত্রী রাত জাগে দিন জাগে সময় ফুরোয়…

  • ঘ্রাণ ফুল

    বাদামি-হলুদ দিন গত হলে সূর্য ডোবার মুহূর্তে দিলে সাড়া ঘর ছাড়া অলস রাতের ঘ্রাণ-ফুল। পীত সাগরে মাছের কোঠরে লাল শাপলার স্ফীত বক্ষটান। গোধূলির রঙে মিলনের দিন ফুরিয়ে আসছে বুঝি! বিরহের নদী ফুরাবে না যদি নীল মাছিটারে ডেকে নিও।

  • হাসান হাফিজুর রহমানকে নিয়ে

    সংশয় এই সন্তাপ-১ আম্মা চলে গেছেন সে এক পরিচিত অন্ধকার পথ; তাও তো অনেক বছর আগের কাহিনি; এখন অন্ধকার পথগুলো সবই রুদ্ধ-প্রায়, বাসার পাশেই চালের ট্রাকে কারা যেন আগুন দেন। অনাহারে মৃতপ্রায় মানুষগুলোর দীর্ঘশ^াস গরম ভাতের থালায়; রক্ত-নদীর তীরে বসে দেখি : ফুল থেকে পাতা থেকে ঘাস থেকে বিন্দু বিন্দু পানি গড়িয়ে পড়ে। পাশেই দাঁড়িয়ে…

  • কবির আত্মকথন

    এখনো মনে হয় কেউ না কেউ আছে কোথাও না কোথাও নিরিবিলি পড়ছে আমার কবিতা শিল্প-খোঁজা, আনন্দ-উদ্বেল তরুণ কি তরুণী বুঁদ হয়ে আছে, জগতের সকল নেতির মাঝে ব্যতিক্রম ওরা আছে, প্রবল নাদ ও ঢাকঢোল পিটানোর মাঝে ওরা মজে আছে, যেন দূর থেকে হাসছেন ঠাকুর। ভাগ হয়ে যাওয়া ব্রহ্মাণ্ডের বুকে ওরা গাইছে মানবিক গান যেন রাশি রাশি…

  • মন মহুয়ার জন্য

    বসে গেছি। মন মহুয়ার দেখা পাবো বলে। মন মহুয়া তো অভিমানী। ফিরবে না হয়তোবা। আমি তবু গোছগাছ করি। এই গোছগাছ গোপন গোপন। এই পথ চাওয়া একান্ত আমারই। সে এলে স্বপ্ন গড়াবে। দিগন্ত পেরিয়ে। না এলেও ইচ্ছা রূপ নেবে কাব্যময়। কথাগুলো একা একা বসে ভাবি। গরম কফির কাপে প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। আর মন মহুয়ার পেছনে পেছনে…

  • ত্রিভুজ কিংবা স্বপ্নে পাওয়া ভবিষ্যৎ

    পাশা খেলায় হারজিত এক নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার তবু শেকল পরা পা দেখলে পরাজিত জীবনের কথা মনে পড়ে যখন ঘুম ভেঙে গাছে ওঠার প্রস্তুতি নিয়ে দেখি বহু আগেই রোদ উঠে গেছে গাছে ঘাসের শিশিরে পা ফেলতে গিয়ে বুঝি কুকুরের স্নেহ মাড়িয়ে গেছে শিশির ছুতোরের গড়া কাঠের ত্রিভুজে গিয়ে বসি সময়কে বিদ্ধ করে দেখি রক্তমজ্জায় আর কী কী…

  • এলেবেলে

    ভুলেদের ভিড় ঠেলে কম্ফোর্ট জোন পেলে মনে ফের পড়বেই তোমাকে তোমাকে ফুলেরা ভুলে যাবে তোমাকে ভুলতে গানে যদি নাও হয় গানেদের গোরস্তানে রাজপথে না হোক আকাশের অলিতে গহিন যত গলিতে মেঘেদের পাখনাতে জমে থাকা রোদ্দুরে সমুদ্রে না পেলে আগুনের ফেনাতে খুঁজব না আমি আর তুমুল কোনো তারাতে আলোর তামাশা ছেড়ে তোমার তালাশে যাব আমি যাব…

  • সুলতানের নারীগণ

    নারীগণ হঠাৎ ক্যানভাস থেকে বেরিয়ে ছুটে যায়  মাঠে-গেরস্থালিতে পোড়া মাটির শরীর থেকে তেজোময় দ্যুতি ঠিকরে বেরোয় তাদের স্মৃতিতে নেই সুবিন্যস্ত পোশাক – নাকে নক্ষত্রফুল  তারা কি অনার্য নারী? আত্মপরিচয়ের ইতিহাস খুঁজি ঠিক তখনই কড়া নাড়ার শব্দে ঘুম ভাঙে চেয়ে দেখি স্কুল ড্রেস পরা আমার আত্মজা একজন সুলতানের নারী।

  • রেইকি

    কী নামে ডেকেছে লোকে আমি তা জানি না অন্যের কাছে তুমি কি চেয়েছো জানি না যতক্ষণ পাশে থাকো ছুঁয়ে থাকো প্রাণ কত নাম আসে যায়, কত নাম ঝরে তোমার বুকের পরে কত প্রিয় নাম একটি নামের ভাষা যদি মনে পড়ে প্রাণে দিও ঠাঁই – প্রাণ থেকে প্রাণে গেলে হারাবার ভয় নেই স্পর্শবিদ্যা অন্তহীন একবার ছুঁয়ে…

  • পাখি

    জাগাও পাখিকে যার ডানা ঝড় মুচড়ে ভেঙেছে মুছে দাও বিগত প্রেমিকদের চুমুচিহ্ন, কলস্বর বজ্রাহত, তবু দগ্ধ পালকেই যাই বজ্রের ভেতর খুলেছি শেকল, তার দাগ ছিল যেন দাসখত বহুদিন উড়তে না পেরে ভুলে গেছি ওড়ার কৌশল যখন হ্রদের বুক খুলে দেয় অদ্ভুত আয়না দেখি অন্ধকার গর্তে যাচ্ছি ছুটে উল্কার মতন  সেই গর্ত মায়াগুহা, এত তার জাদুটোনা…

  • মৌলিক

    গ্রাম্য অথবা শহুরে একটা প্রলেপ  থাকে দৃশ্য দৃশ্যান্তর এই হাবভাবে বেড়ে ওঠা ভিন্নতর দৃষ্টিভঙ্গি  প্রেক্ষাপট নিয়ে মহাজীবনকে উপভোগ করে তবু শূন্যতা এড়ানো সম্ভব হয় না যা দেখি তা সত্য কি না আর যা দেখি না তা কি মিথ্যা হয়ে যায়? নাড়িপোঁতা গ্রাম মনে এসে ভিড় করে  খোলা হাওয়ায় নিজেকে ছড়িয়ে দিই হাঁপানো শহর পার্কে গ্রাম্য পথঘাট…

  • চুকনগর ২০ মে ১৯৭১

    মানুষ হেঁটে যাচ্ছে চুকনগরের দিকে শতকে শতক হাজারে হাজার তারা ডুমুরিয়া, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, বাগেরহাট, রামপাল, মোল্লাহাট, মোড়লগঞ্জ, শরণখোলা, কচুয়া, পিরোজপুর, গোপালগঞ্জের মানুষ। দাউ দাউ করে জ¦লছে সব বসতভিটা, স্বজনহারা মানুষ ঘন হয়ে ওঠে তারা সরসকাটী, কলারোয়া, ঝাউডাঙ্গার মাঝ দিয়ে বর্ডার পাড়ি দেবে। কেউ-বা ভদ্রা, ঘ্যাংরাইল, তেলিগাতি, শোলমারী পার হয়ে চুকনগরে আসছে করোটির ভিতরে চিন্তা চুকনগর…