অলোক সেন
-
সমাচার
ললাটের কী বা দোষ লিখতে হবে ওইখানে সব! আশপাশে জায়গা অনেক যা ইচ্ছে, যেমন খুশি ঘাসের ওপর কিছুটা আলো ও কুয়াশামাখা আঁধার। কলমে নামুক শব্দমালা চিত্তদ্বারে চরণের চিহ্ন এঁকে যার – মাথা ভর্তি এই সে কপালে মাথা ভর্তি এই সে কপাল। সেই-ই তো ভালো, দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে আলো কপাল ঠুকে যে নেমেছে, ডাকো।
-
সভা
কোটর থেকে বাড়াল মুখ টিয়া কাঠঠোকরা সরে গেল হাসি হাসি মুখ, ওরা কেউ শাস্ত্র জানে না। স্নানঘর থেকে সোনার ময়না তবু উঁকি দিলো বারান্দায়, তারও কিছু বলার আছে, ময়দানে ভিড় তাই জানাল ইশারায় – ভাষণ রাখবে মাঠে। মাঠভর্তি শ্রোতা, তারা কেউ পাখি নয়। দোলে পক্ষীকুল, রহস্যময় শূন্যের খাঁচা দ্বার খোলা
-
গহনে যে আকাশ
ঊরুর গহনে যে আকাশ ‘খ’-পুষ্প সেখানে ঝরে, চন্দ্র-সূর্য, আছে গ্রহতারা আলোময় জন্ম, মৃত্যু; বলো, গিরিমুখ খুলে গেলে কী আহুতি। পারে পারে ঘাট কত মায়াবন, মরা ইতিহাস সেতুর ওপরে ওই দাঁড়িয়ে পথিক। বলো হে অক্ষরমালা, আজন্ম ঝঞ্ঝাট; অকিঞ্চিৎ লাগে জীবনের বাড়ি ফেরা।
-
হৃদয়-দুয়ারে ধরো গান
বাড়ালেই ধরে ফেলবে এই মগ্নতায় ঝোলের আলু কেটেছে, চাটনির আমও, অথচ তেল-মশলার টানাটানি কলুর কলও বন্ধ চিন্তামণি নিদ্রাতুর এই মনে জাগে! ধরে ফেলবে এই শুভ বাসনায় রাত্রির গেরো কাটাতে গোপালকে বলেছে শান্ত থাকো, হৃদয় দুয়ার মেলে গান – ধুয়ো দিতে দিতে দেখ, চোখ ভালোবেসে একদিন অন্ধ হবে ঠিক কলুর মালিক আবার জমাবে তেল কলে, বঁটিতে…
-
সিন্ধুপারের গজলডোবা
বড় পুকুরের ঘাটে বসে জল মাপো, হাওয়ায় আলস্যভরে ঠেস; যা ঘোড়েল মাছ জানি, ঠিকানা দেবে না, টিকি ছোঁয় সে সাধ্যটি কার! অথচ, কত না মাছ জলে, টোপ : সুগন্ধি শিফন; চোখের গহনে কালো টলটলে জল। ঠান্ডা, তবু গলা ধরে গান তান পঞ্চমে গড়াতেই খানখান, হুইল নেমেছে, ফাতনা আধো ডোবা হায়! পথ ভুল হলোও, মহাসিন্ধু পার…
-
স্মরণসভা
অভিভূত শব্দমালা পাশে সামনে ভবিতব্য, রুমঝুম ট্রাম পিছনে – ওহ! শোক মুখ থুবড়ে ছিন্নভিন্ন; স্রোতের মতন শুধু শোকার্ত কবিতা – শুদ্ধতম হাহুতাশ। নিরুপায় ঈশ্বরী, দুহাতে রত্নখচিত সেসব দুঃখিত কৌতুক – প্রত্যক্ষদর্শীরা এর কিছুই জানে না দ্যাখে, শব্দ ও চিত্রের গহন শোকের সভা বক্তা, নিরীহ ঘাসফুল।
-
শ্রাবণ ধারা
সামান্য লবণ কণা, একটু জিরে বাটা, সহযোগে আদা; অনুপাত ঠিক আছে, দ্যাখো তো? চাঁদ উঠল কি থালার ওপর। ঋতু পার হয়ে দুধ আসে সে জানে গোপন পথ Ñ অপেক্ষায় ব্যাকুল ডালিয়া। শোনো কৃষকমোহন, উনুনে রমণ কাঠে ও আগুনে নিরন্তর, দেহ গলতে গলতে – তুমি তো সেচন জানো, মাটির সরসতা; এখন শ্রাবণ, বাটি ভরা…
-
আরো কিছুদিন
আরো কিছুদিন, আরো … টোটো চড়ে এসেছেন মৎস্য মহারাজ আমাদের নিভৃত নিবাসে, আনন্দ প্রদানে। প্রতিবেশী কৌতূহলী, তার সুখ কম কুঁচো চিংড়িতে দিন যায় তবু দ্যাখে, কে ওড়াচ্ছে ঘুড়ি, কোন বারান্দায়। এ-ওকে কাটছে আকাশে ওই আকারে সাকারে ফোটাচ্ছে খই, নিচে রেখা বক্র ও সরল। এখন তৃতীয় স্তর; নিভৃত নিবাসে আনন্দ ছটফট করে বড় শ্বাসকষ্ট তার।
-
জোনাকি-গ্রামের আটচালা
বর্ষা টইটম্বুর জোনাকি-গ্রামে গোছায় গোছায় খলবল ডিঙি নৌকা করে টলমল। ধানে আর চালে ওজন কতটা খুঁটে আনতে দিনের আহার কী যন্ত্রণা, জানে, দাওয়ার পাশের পেঁপে গাছ। ঋতুকাল পার হয়, ফলেফুলে পদ্মাবতী গেহ আলো পায় সন্ধ্যার তুলসীতলা আবারো আষাঢ় নামে, গহন জীবন, জোনাকি-গ্রামের পাশে নব পাঠশালা। ইছামতী জল দেয়, রবি ক্ষেতে ছোলা ও বাতাসা ওই বুঝি…