ইমদাদুল হক মিলন

  • কাল

    কাল

    নয় কাঞ্চনকন্যা এই আখ্যান এখন একটু পিছন ফিরবে। বাসন্তীর ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরের বছর বর্ষাকালের কথা। পুব কুমারভোগের মীর্জা বাড়িকে লোকে বলে ‘বড়বাড়ি’। বাড়িটি ছিল জমিদার অশ্বিনীকুমার চক্রবর্তীর। বিক্রমপুর ছিল পরগনা। ছোট-বড় জমিদার ছিল অনেক। অশ্বিনীবাবু তেমন বড় জমিদার ছিলেন না। আবার খুব ছোটও ছিলেন না। দু-আড়াই হাজার কানি জমির মালিক ছিলেন। বাড়িটা ছিল তিরিশ-পঁয়ত্রিশ…

  • কাল

    কাল

    আট ভুতো ও নিমাইয়ের কাহিনি কোনো বাপ যে ছেলেকে এত ভালোবাসতে পারে, এত আদরযত্ন মায়া-মমতায় ভরিয়ে রাখতে পারে; তাও নিজের ঔরসজাত সন্তান নয়, স্ত্রীর অপকর্মের ফসল, নিমাই এক্ষেত্রে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। মানুষ প্রকৃত অর্থে নিজেকে সবচাইতে বেশি ভালোবাসে। নিমাইয়ের ক্ষেত্রে তা ব্যতিক্রম। নিজের চেয়ে হাজার লক্ষগুণ বেশি ভালো সে ভুতোকে বাসে। ভুতোর জন্মের পর যে…

  • কাল

    কাল

    সাত বাসন্তীর কাহিনি ঠাকুরের সঙ্গে ওই কাণ্ডটি ঘটাবার পর বাসন্তী খুবই মর্মবেদনায় ভুগছিল। তার মনে হচ্ছিল, কাণ্ডটা আসলে সে ঘটায়নি। তেঁতুলতলা বা বাঁশঝাড়তলায় তিনাদের যিনি বসবাস করেন, তাদের সত্যি সত্যিই কেউ না কেউ বাসন্তীর ওপর ভর করেছিল। বাসন্তীকে দিয়ে কাজটা সে করিয়েছে। ঠাকুরকে বাসন্তী কামনা করেছে ঠিকই কিন্তু এই পদ্ধতিতে সেই কামনার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে, বাসন্তী…

  • কাল

    কাল

    পাঁচ তখন রতনপুর বাজারটা ছিল পদ্মার কোলঘেঁষে। রিশিপাড়া ছাড়িয়ে দক্ষিণে দশ-পনেরো কানি আবাদি জমি। তার পশ্চিমে বাজার। নদীতীর থেকে একটা রাস্তা বেরিয়ে সোজা চলে গেছে উত্তরে। রিশিপাড়ার মুখে এসে দুদিকে দু-হাত ছড়িয়েছে। ওদিক থেকে হেঁটে এলে বাঁ-হাতের রাস্তা চলে গেছে কুসুমপুরের দিকে, ডান হাত গেছে রতনপুর পোস্ট অফিসের দিকে। পদ্মাপারে গিয়ে শেষ হয়েছে এই রাস্তা।…

  • মুখোশ পরা মানুষ

    মুখোশ পরা মানুষ

    রিসেপশন থেকে ফোন এলো। ‘স্যার, এক ভদ্রমহিলা আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।’ চায়ে চুমুক দিতে দিতে আসিফ সেদিনকার খবরের কাগজ দেখছিল। এখন খবরের কাগজ আর পড়া হয় না। শুধু চোখ বোলানো। হেডলাইনগুলি দেখা। ওসব হেডলাইন দেখতে দেখতে বলল, ‘কী নাম?’ ‘নাম বলেননি।’ আসিফ তেমন অবাক হলো না। সে যেখানেই যায় এরকম অনেক মহিলাই তার সঙ্গে…

  • কাল

    কাল

    চার আষাঢ় মাসের সেই ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতে ঠাকুরের নৌকা নিয়ে বাড়ি এসেছিল বদরু। বরইতলায় নৌকা বেঁধে উঠানে এসে দেখে জমসেদ তখনো ঘরের ছেমায় বসা। বড়ঘরের খোলা দরজায় পিতলের বড় কুপিটা জ্বলছে। ছোট ভাই দুটো, বোন দুটো মেজো বোনের ঘরের ছেমায় বসে কিচ্ছা শুনছে কফিলের কাছে। আধা-প্রতিবন্ধী মানুষটা আবার কিচ্ছার ওস্তাদ। কত কিচ্ছা যে তার ঝোলায়!…

  • কাল

    কাল

    দ্বিতীয় পর্ব তিন সেই রাতে ঠাকুরবাড়ির দিকে একটা নিমপাখি ডাকছিল। কৃষ্ণপক্ষের রাত। ঘুটঘুটে অন্ধকার দেশ গ্রামে। আষাঢ় মাস। আকাশে মেঘের চলাচল ছিল ঠিকই, তবে বৃষ্টি ছিল না। হাওয়ায় ছিল কদমফুলের গন্ধ। নিমপাখির সঙ্গে কুসংস্কার আছে প্রবল। পাখিটা কেউ কখনো চোখে দেখেনি। কোন পাখিটা যে নিমপাখি কেউ বলতে পারবে না। ডাকে রাতের বিভিন্ন প্রহরে। ডাকটা তিন-চারদিন…

  • হাসনাতভাইয়ের জন্য লেখা হলো পর

    হাসনাতভাইয়ের জন্য লেখা হলো পর

    হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনের অনুষ্ঠান হচ্ছে ‘ঢাকা ক্লাবে’। সন্ধ্যাবেলায় সেখানে অনেক লেখক ও টিভি নাটকের অভিনেতা-অভিনেত্রী একত্রিত হয়েছেন। আবুল হাসনাতও ছিলেন। মানে আমাদের সবার প্রিয় হাসনাতভাই। এক ফাঁকে আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে তিনি বললেন, ‘কালি ও কলম নামে আমরা একটা মাসিক সাহিত্য পত্রিকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আবুল খায়ের লিটুর ‘বেঙ্গল ফাউন্ডেশন’ থেকে পত্রিকাটি বেরোবে। আমাদের সঙ্গে…

  • কাল

    কাল

    ১ দেবকুমার ঠাকুরকে লোকে বলে দেবু ঠাকুর। গেল বর্ষায় সেই দেবু ঠাকুরের সঙ্গে রতনপুর গ্রামটিও খুন হয়ে গেল। খুনের রাতে গ্রামের লোকজন একত্র হয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করছিল। চারদিককার বাড়ি থেকে ডিঙিনাও, কোষানাও, হারিকেন, কুপিবাতি আর টর্চলাইট নিয়ে লোকজন ছুটে এসেছিল। গাছপালা-ঝোপজঙ্গল-বাঁশঝাড়ে ঘুটঘুটে অন্ধকার ঠাকুরবাড়ি কিছুটা আলোকিত হয়েছিল। সেই আলোয় দেখা গেল বড় ঘরের দরজায় পড়ে আছেন…

  • ভুলে যাওয়া নাম

    ভুলে যাওয়া নাম

    ‘আপনি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকেন কেন?’ মেয়েটির প্রশ্নে শুভ একটু থতমত খেল। ‘না, এমনি। কোনো কারণ নেই।’ ‘নিশ্চয় কারণ আছে। কারণ ছাড়া কেউ কারো দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকে না। তাছাড়া ব্যাপারটা যে আমি আজই প্রথম খেয়াল করলাম তা নয়। আগে আরো তিন-চারবার খেয়াল করেছি। আমাকে দেখলেই আপনি কেমন করে যেন তাকান।’ কথা লুকাতে গিয়েও…

  • টিয়া পাখির অভিমান

    টিয়া পাখির অভিমান

    ওয়াশরুমে ঢোকার আগে মোবাইল দুটো আমি বিছানার ওপর রেখেছিলাম। একটা ফোনে চিটাগাংয়ে কথা বলছিলাম, আরেকটা ফোন ছিল হাতে। কথা শেষ করে দুটোই বিছানায় ছুড়ে ফেলে ওয়াশরুমে ঢুকে গিয়েছিলাম। ফোন দুটো সাইড টেবিলে রাখল কে? একদম গুছিয়ে পাশাপাশি সুন্দর করে রাখা! এই ফ্ল্যাটে তো আমি ছাড়া কেউ নেই। তিনদিন হলো উত্তরার এই ফ্ল্যাটটায় আমি উঠেছি। লেকের…

  • গরিবকাল

    গরিবকাল

    মাঝে মাঝে গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায়। একটু এপাশ-ওপাশ করি, তারপর আবার ঘুমিয়ে যাই। চৌকিতে বাবার সঙ্গে ঘুমাই। মেঝেতে মা আর অন্য চার ভাই-বোন। আমি বড় ছেলে। বাবা খুব ভালোবাসেন আমাকে। আমিও বাবা ছাড়া কিচ্ছু বুঝি না। ক্লাস সেভেনে পড়া ছেলেটি এখনো পারলে বাবার কোলে চড়ে। বাবাও পারলে তাকে কোলে নেন। সকালবেলা অফিসে যাওয়ার সময়…