তানভীর মোকাম্মেল

  • বেহুলা বাংলা : সনেট

    অকূলের কূল বেহুলা তুমি ভাষাহীনদের প্রতিবাদের ভাষা তোমায় দেখে গাঙ্গুরপারে জেগে ওঠে নতুন দিনের আশা ঝড়ের রাতে শিখিয়েছিলে কেমন করে নৌকা বাইতে হয় কেমন করে কামট-কুমির-ভেড়ুয়াদের ঘটাতে হয় পরাজয় অলৌকিক ওই ভেলা যখন ছুটে চলে অজানা অমরায় চিরদুখী জীবনস্রোতও আমাদের সেদিক পানেই ধায় কখনো নামে বিষাদ সন্ধ্যা কখনো তা পায় সূর্যরশ্মির আলো সঙ্গে থাকলে বেহুলা…

  • লন্ডনি মা

    লন্ডনি মা

    হোয়াইট চ্যাপেল মেট্রো স্টেশন থেকে দুটো রাস্তা পেরিয়েই জেসমিনদের অফিস। ব্রিটিশ স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে এক বড় হাসপাতালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওদের অফিসে ওরা যে ছয়জন অ-ডাক্তার কর্মচারী রয়েছে তাদের অফিসিয়াল নাম হচ্ছে ‘লিংক অফিসার’। ওদের কাজ হচ্ছে এশীয়, বিশেষ করে এই উপমহাদেশ, মানে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার কিছুটা পিছিয়ে পড়া যেসব পরিবার ইস্ট লন্ডনে রয়েছে,…

  • ইছামতী     

    ইছামতী     

    ভবেশরঞ্জন মিত্র মহাশয় আজ ভোর সাড়ে ছয়টায় হাসপাতালে মারা গেলেন। আমরি হাসপাতালের কলকাতায় আরো কয়েকটা শাখা থাকলেও সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের হাসপাতালটা দেশপ্রিয় পার্কের ওদের বাড়ির কাছে বলে এ-হাসপাতালটাতেই ভর্তি করা হয়েছিল ভবেশবাবুকে। তাছাড়া এ-হাসপাতালে মিত্র পরিবারের মেজ ছেলে সুমিত মিত্রের বিশেষ বন্ধু ডা. রঞ্জন হালদার রয়েছেন। ফলে হাসপাতালের ছোটখাটো নানা বিষয়ে অনেক সহায়তা ও রোগীর চিকিৎসার…

  • বেহুলা বাংলা : সনেট এক

    কী বাঁধনে বেঁধেছ এক অজানা অচিন মায়াবী সুরে কত আকুতিতে চেয়েছি মুক্তি ছুটে চলে গেছি দিগন্ত দূরে তবু সার্সির মতো মোহিনী মায়ায় রেখেছ জড়িয়ে মুগ্ধ করে বারেবারে তাই ফিরে আসি এই জলজ বাংলার বিজন নীড়ে স্মৃতির বাংলা সবুজ বাংলা এই বেহুলা বাংলার বিষাদ তীরে নৌকা আমার তেরো নদী ঘুরে নির্জন এই ঘাটেই ফেরে সব স্রোত…

  • নদী ও নারীর জীবনকথা

    এ এমন এক নারীর জীবনকথা যাঁর জীবনে তিনটে নদীর প্রভাব ছিল প্রবল – রায়পুরার মেঘনা, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র ও ঢাকার বুড়িগঙ্গা। আর ছিল তিনজন মানুষের প্রভাব – শিক্ষানুরাগী দাদু প্রফুল্ল পাল, মা সরোজনলিনী পাল ও স্বামী অজয় রায়। নারীটি হচ্ছেন জয়ন্তী রায়। এদেশের প্রখ্যাত বামপন্থী নেতা কমরেড অজয় রায়ের সুযোগ্য স্ত্রী। জয়ন্তী রায়ের জীবনস্মৃতি মেঘনা পাড়ের…

  • স্বর্ণতৃষা

    স্বর্ণতৃষা

    নাহ, এয়ারপোর্টে কোনো অসুবিধা হয়নি। যদিও ঢাকা এয়ারপোর্টে সমস্যা হতে পারে – এরকম একটা আশঙ্কা মেজর আজমত শিরওয়ানীর ছিল। তবে পাসপোর্টের তথ্যে তিনি তো কোনো ‘মেজর’ নন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রাক্তন অফিসারও নন। স্রেফ ‘আজমত শিরওয়ানী’ নামে দুবাইয়ের এক ব্যবসায়ী। ফলে সমস্যা হওয়ার কথাও ছিল না। তবে ঢাকা এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশনে মেজর আজমত শিরওয়ানীর যে কোনো সমস্যা…

  • দেশভাগ

    প্রেমিক-প্রেমিকারা আজো   বনের ছায়ায়   লেখে নাম  অবিরাম কেবল   কিশোরী এক   কোন অভিমানে লিখেছিল গাছের বাকলে   ‘আমরা চলিয়া গেলাম;’ কারা কারা গিয়েছিল  কেই-বা কোথায় লক্ষ্মী কী রাখে খোঁজ    কে কেন হারায় কিংবা   রাতের আকাশে   অসীম শূন্যতার মাঝে যে তারা   রয়েছে ঢেকে    মেঘের ছায়ায় ভালোবেসে তারে    কেউ কী ফেরায়; শুধু কবি শোনে   ঝরা পাতার মৃদু মর্মরধ্বনি যেন…

  • লাল বেনারসি

    লাল বেনারসি

    আলমারিটা খুলতেই একগাদা জিনিস ঝপ ঝপ করে মাটিতে ঝরে পড়ল। পুরনো কাপড়, বাদামি কাগজের প্যাকেট, ভাঙা কাচের চুড়ি ও আরো বেশ কিছু টুকিটাকি জিনিস। বোঝা গেল, স্থানাভাবে জিনিসগুলি আলমারিতে রাখা হয়েছিল খুবই ঠাসাঠাসি করে। পুরনো দিনের নীল রঙের স্টিলের আলমারি। জায়গায় জায়গায় জং ধরেছে। আলমারিটায় লম্বা একটা কাচ লাগানো রয়েছে। তবে সে কাচের পারদেও কিছু…

  • বেহুলা বাংলা – সনেট ২

    আমারও স্বপ্ন ছিল   পুঁইমাচা   নিকানো উঠোন আমারও আকাশ ছিল    বৃষ্টিভেজা   সজল সঘন আমারও নদী ছিল   স্বচ্ছতোয়া   অবিরাম বহমান আমারও নারী ছিল   অভিমানী   বেহুলা তার নাম যখন ফাগুন মাসে   বনে বনে   আগুন শিমুল ছায়াঘেরা   ডালে ডালে    সুগন্ধী   আমের মুকুল সাক্ষী ছিল   বনদেবী   মৃদুকণ্ঠে   রেখো আমায় মনে বলেছিলে     এলোচুলে    বিবশ   বসন্ত তখন; শ্রাবণের মেঘ হয়ে   আজো দেখি  …

  • বেহুলা বাংলা – সনেট ১

    বাল্যে গড়ে মাটির পুতুল খেলেছি তোমার শরীর নিয়ে দুরন্ত কৈশোরে মুছেছি ঘাম ওই শুভ্র আঁচল দিয়ে যৌবনে কাঁধে রাইফেল ঘুরেছি নদীর পারে পথে-প্রান্তরে ছুড়েছি গ্রেনেড তোমার জন্যে বিজাতীয়  শত্রুর বাঙ্কারে প্রৌঢ়ে স্বজন নিয়ে গড়েছি পুতুলের একান্ত সংসার বার্ধক্যে তুমি হয়েছ বেহুলা আরো আপন আমার তোমাকে ছাড়া আর তো কোনো নিশিস্বপ্ন দেখিনি তোমাতেই পেয়েছি খুঁজে আমার…

  • ইকারুস

    ফিরে এসো ইকারুস ডানা পুড়ে যাবে সূর্যকে ছুঁতে নেই ওসব  দেবতাদের একান্ত ভুবন; ফিরে এসো মাটির কাছাকাছি রেখে দিবাকর   মাথার পেছনে নতজানু হও     মা-ভূমির কাছে; বরং রোপণ করো  একটি বৃক্ষের চারা গর্ভে       ধরিত্রীর নতুন বীজসৃজন    দেবে অমরত্ব তোমায় স্বপ্ন রাখো আকাশে দুটি পা    পৃথিবীর বুকে; ফিরে এসো ইকারুস থাকো    মা-মাটির কাছাকাছি ॥

  • কৃষ্ণগহ্বর

    অমূল্য সময় গেল   অবুঝ প্রেমে আর  বাকিটা বয়স   অতৃপ্ত কামে কিছুটা কাল   ইট-কাঠ-কড়িবর্গার ধামে আর বাকি কালবেলা    ঠুঁটো ঈশ্বরের নামে; এই সব কিছু নিয়ে   জীবন শিরোনামে দুর্বল লেখকের    ব্যর্থ চিত্রনাট্য যেমন পায় না   কখনোই   প্রাণ     উজ্জ্বল পর্দায় তেমনই   অজান্তে    আমাদের    অযুত সুখ-দুঃখ-স্মৃতি কত না আলোকবর্ষের   অপূর্ণ    স্বপ্নসাধ যত  অচিন এক   কৃষ্ণ গহ্বরে হারিয়ে যায়    চিরতরে  …