দিলীপ কির্ত্তুনিয়া
-
তোমার জন্যে একটি কবিতা
একদিন না-দেখার মর্মার্থ বুঝেছি তুমি কতো প্রিয় হয়ে ওঠো! একদিন অভ্যাসের কাঠগড়া থেকে বেরিয়ে এসে দেখেছি তুমি কতো সুন্দর অনন্য তোমার রূপ। আমারই জল যখন মেঘ হয়ে ঘরে ফিরে আসে বৃষ্টির জল হয়ে তার বহুগুণ শক্তি। ওই যে আকাশের দূর ওই যে বহুদূর তার মধ্যে নতুন লুকানো তার মধ্যে অনেক অমিয়। তুমি দূরে গেলে…
-
আমার পক্ষ
আমি ফিলিস্তিনের পাশে আছি। ফিলিস্তিনের মাঠে যেসব ঘাস যেসব শিশুর খেলা আর স্কুলের পড়াশুনা আমি তার পাশে আছি। আমি সেই জানালাটার পাশে আছি যে জানালায় কবিতা লেখা হয় আকাশ দেখা হয় আর জোছনা এসে পড়ে ঝরে। আমি সেই হাটবাজারের পক্ষে আছি যেখানে মানুষের উত্তাপে উত্তাপে ওঠে জমে। মানুষ আনন্দমুখর হয় কোলাহল করে। আমি কোনো নির্জনতার…
-
শোনা কথা
শুনলাম যারা অনেক উঁচু অট্টালিকায় থাকে – আকাশের সিঁড়ি বেয়ে অনেক ওপরে – নামিদামি ফ্ল্যাটে তারা বৃষ্টির শব্দ শুনতে পারে না। এই রকম ফ্ল্যাটবাসীদের আরো কতিপয় অসুবিধা আছে। যেমন তাদের রাত্রি পোহায় অনেক আগে – আর সন্ধেও হয় অনেক পরে। সূর্যের আলো ধীরে ধীরে সরে। তারা মশকমুক্ত থাকে – জনকোলাহলমুক্ত – এটা ভালো কি না জানি…
-
কিছু কথা
একটা সুন্দর দৃশ্য শতধারায় মনে থাকে অনেক কাল। বহু অনুপম ঘটনা জীবনের শূন্যরেখা পর্যন্ত – যায়। কিছু কথা মন থেকে মোছে না কখনো। রক্তের প্রবাহে লেখা হয় চেতনার চিলেকোঠায় থেকে যায় কিছু সুবাস জাগানো কথা। আদিগন্ত সবুজে ভরা দুই একটা হাসি কান্না। সাগরের ঢেউ হয়ে ঘুরে বেড়ায় স্রোতে স্রোতে দুই একটা চোখের চাওয়া। প্রেম-চোখ, ভালোবাসা-চোখ…
-
চলে যাচ্ছি
আমার সারাক্ষণ কেবল নিজের কাছ থেকে পর হয়ে যেতে ইচ্ছে করে। আমি ভাবি কি – আমি আর নিজেকে চিনবো না নিজেকে দেখবো না – সরে যাক আমি। বহুদিন তো একসাথে থাকা হলো নিজের সাথে নিজের আলোতে নিজের অন্ধকারে – এবার চলে যাই অন্য কোথাও যেখানে আমি নেই – আমার সাথে পাথার দূরত্ব। ওগো পথিক, তুমি…
-
প্রবল নৈঃশব্দ্যের মধ্যে
প্রবল নৈঃশব্দ্যের মধ্যে খুঁটে খুঁটে কিছু পোকা দেখা যায়। দেখা যায় মত্ত হাওয়ার ভেতর গুঁড়ো গুঁড়ো ধূলিকণা উড়ছে। ঝরা পাতার সামান্য শব্দ বিস্ফোরণ হয়ে ওঠে। দৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়ার নিমেষগুলো কাছাকাছি আসে। ওই তো শব্দ – কানের ভেতর আগে শুনি নাই ভালোই তো উচ্চারণ কে কথা বলছে! যারা বাকহীন তারা যারা ভাষাহীন বোবা শুনতে পাচ্ছি –…
-
গোলাপ চেয়েছিলাম
গোলাপ চেয়েছিলাম – গোলাপ হাতের মুঠোয় এসে বলল – এই কাঁটাটুকু সহ্য করতে হবে । বৃষ্টি চেয়েছিলাম – শুকনো হাওয়ায় বিষণ্ন হয়ে গিয়েছিল মন বৃষ্টি বললো – বজ্র সহ্য করতে হবে তুমুল বাতাসকেও। তোমাকে চেয়েছিলাম – একটানা ভালবাসা পাওয়ার লোভে। একখানা সুন্দর অনর্গল পিঁড়িতে থাকবে বসে এই মতো ছিল আশা গহিন জলের পিপাসা – তুমি…
-
ভিক্ষা
খেলার মাঠ নেই – তাই যেখানে যেটুকু খোলা চত্বর পাচ্ছে সেখানেই ফুটবল নিয়ে নেমে পড়ছে ছেলেমেয়ের দল। হরতালের দিন ফাঁকা রাস্তায় নামছে ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের টিলায় উঠছে ছাদ-বারান্দাও তাদের নতুন টার্গেট একটি স্বর্গীয় মাঠ হয়ে উঠেছে। ফুটবল আর ক্রিকেটের ব্যাট নিয়ে ওরা শুধু ছুটছে আর ছুটছে। কিন্তু বাড়ি গাড়ি কারখানার জটিল পথ অতিক্রম করে যেতে…
-
স্মরণ করি
মেঘের জন্ম আকাশে ঝরে গেছ বর্ষণ ধারে। গাছের পাতা সবুজে ঝরে গেছ মাটিরও ’পরে। পৃথিবী ছেড়ে পৃথিবীর ওপারে। তোমাকে অভিষিক্ত করে স্মরণসুধায় বারংবার নমস্কারে
-
কী ভাঙবে
দিলীপ কির্ত্তুনিয়া কী ভাঙবে আমরা জানি না হয়তোবা পাথর ভাঙবে। কী হুড়মুড় করে ভেঙে যেতে পারে নদীতে – নদী পাড় হয়তোবা হবে। এই তো ভেঙেছে চিরকাল পাখির বাসা-গাছের ডাল। কোনো কোনো সময় দেয়াল। কিন্তু এসব ছাড়াও খেলাঘর ভাঙে। সংসার ভাঙে। মনও ভাঙে। ভাঙে বুক। ভাঙে কথা। ভাঙে অবিরল। অশীতিপর সময়েও ভাঙে। ভালোবাসা ভাঙে। শব্দ খুঁজতে…