মহীবুল আজিজ
-
একটি আকস্মিক উদ্ধারপর্ব
এক বছরের ব্যবধানে ভায়োলেটের জীবনে ঘটে যাওয়া দুটো ঘটনা তাকে যারপরনাই বিধ্বস্ত করে দেয়। এপ্রিলে মারা গেল তার স্বামী মাইক। সিটি সেন্টারের রাউন্ড চার্চে গিয়েছিল ঈস্টারের প্রার্থনাসভায় যোগদান করার জন্য। সেখানেই অকস্মাৎ বন্ধ হয়ে গেল তার হৃদযন্ত্র। অথচ অল্পক্ষণ আগেও মাইক মনোযোগ দিয়ে শুনছিল প্রিস্টের কথাগুলি। তিনি বলছিলেন, সপ্তদশ শতাব্দীর বিখ্যাত কবি জন ডান এই…
-
ক্যাথারসিস এবং একটি সন্ধ্যা
অন্ধ্রের শ্রীধর ইধাপালাপ্পাকে দেখে ভাবনাটা এসেছিল। একখানা রঙিন পোস্টকার্ডের একদিকে তেলেগু ভাষায় লেখা ওর মায়ের চিঠি এবং অন্যদিকে বিশ^কর্মার মূর্তির ছবি। আমার জানা ছিল না পরদিনই বিশ^কর্মার পুজো, পূর্বদিন দেখেছিলাম মাঝারি সাইজের একটা ম্যারো কিনে এনেছিল সিটি সেন্টার থেকে। যাকে ঠিক চালকুমড়ো বলে তা এখানে এই ক্যামব্রিজে মেলা ভার। লন্ডনে গেলে বাংলাদেশি দোকানগুলিতে প্রচুরই মেলে…
-
মধ্যরাতের লিখন
ডিউটি পুলিশ আকবর যখন স্টেডিয়ামকে বাঁয়ে রেখে সার্কিট হাউজমুখী হয় তখন প্রথমে এক তারপর দুই এবং তারপর একজোটে এলাকার কুকুরেরা হেঁকে ওঠে। দিনের বেলা হলে হইচই আর শোরগোলের মধ্যে কুকুরের চিৎকারকে বিশ্রী বিড়ম্বনা মনে হলেও এখন এই মধ্যরাতে তার মনে হয়, কুকুরের ডাক আসলে এক ভিন্ন ধরনের সংগীত। হয়তো সেটিকে প্রাণিসংগীত বলা যেতে পারে। কুকুরেরা…
-
আনিসুজ্জামান : পরিমিতির প্রতীক
তখনো পর্যন্ত সামনাসামনি দেখা হয়নি, শুধু তাঁর স্বরূপের সন্ধানে পড়েছি। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে সাহিত্যের স্নাতক শ্রেণির পাঠ্যে কাজে লাগাই আনিসুজ্জামান-রচিত গ্রন্থটি। চর্যাপদ, মধ্যযুগ, বাঙালি মুসলমান লেখকদের তথা বাংলাদেশের সৃজনশীল-মননশীল সাহিত্য ও সমাজের বিশ্লেষণে তাঁর লেখা গ্রন্থর্ভূত চারখানা প্রবন্ধ সত্যিকার অর্থেই ছিল দিকনির্দেশনামূলক। সেই বিখ্যাত লেখক টানা করিডোর ধরে হেঁটে যান ধ্যানী-মৌন এক ভঙ্গিতে আর আমরা…
-
কামিলা
যেদিন কামিলা লুন্ড এ-বাড়িতে এসে ঢোকে তখন তাকে দেখায় উজ্জ্বল আর প্রাণবন্ত। তার নামের শেষাংশ বিশ্বের একটি সেরা এয়ারপোর্ট সুইডেনের লুন্ডের কথা আমাদের মনে করিয়ে দেয় এবং আমরা সংগতভাবেই জিজ্ঞেস না করেও বুঝতে পারি ওর দেশ সুইডেন। সে যখন তার প্রিয় বান্ধবী স্পেনের ফিওনা ভেলভেডিয়ারের সঙ্গে উচ্ছলতা ছড়িয়ে গল্প করে তখন অক্টোবরের শীত-শীত দিনের বিষণ্ন…
-
ভালোবাসার মানুষ টনি মরিসন
‘আমি কোনো গ্রাম বা কোনো সম্প্রদায় কিংবা আপনাদের জন্য লিখি না। কল্পনার নিতান্ত আত্মগত চর্চাও আমার কাজ নয়। আমার লেখালেখির কাজটাকে হতে হবে অবশ্যই রাজনৈতিক। এর অভিমুখ সেইটাই। সমালোচকদের মধ্যে আজকাল এমন একটা বাজে ধারণা চালু আছে, কোনো লেখায় রাজনৈতিক প্রভাব থাকলেই সেই লেখকের গায়ে কোনো না কোনোভাবে একটা দাগ লেগে গেল। আমার অনুভূতি ঠিক…
-
আল মাহমুদের কবিতা : সত্তার ভারমুক্ততার ভাষ্য
সিক্স মেমোজ ফর দ্য নেঙট মিলেনিয়াম-সিরিজের বক্তৃতায় ইতালো ক্যালভিনো লিখেছিলেন, চার দশককালের লেখালেখির প্রেক্ষাপটে একটা কাজই তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে – সত্তার ভারমুক্তি। মানবসত্তার আয়তন প্রভূত ভারে আক্রান্ত। তার সেই ভারাক্রান্ত অবস্থান থেকে, তার সামগ্রিক পরিপার্শ্ব থেকে, এমনকি হয়তো তাকে নিয়ে গড়া সাহিত্যের কাঠামো এবং ভাষা থেকেও ভার সরিয়ে নেওয়ার কাজটাই তিনি করতে…
-
বুদ্ধিজীবিতা যখন দৃষ্টান্তস্বরূপ
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী কেমন প্রবন্ধ লেখেন? তাঁর নির্বাচিত প্রবন্ধ (আগামী প্রকাশনী, ১৯৯৯) পড়তে বসে চকিতে গত প্রায় সিকি শতাব্দীর পরিসরে প্রকাশিত স্বতন্ত্র প্রবন্ধ-গ্রন্থগুলোর শিরোনাম মনে করে দেখি চমৎকার নাম- আমার পিতার মুখ (১৯৮০), তাকিয়ে দেখি (১৯৭৪), বৃত্তের ভাঙাগড়া (১৯৮৯), আরণ্যক দৃশ্যাবলী (১৯৭৫), উদ্যানে এবং উদ্যানের বাইরে (১৯৯২), অনতিক্রান্ত বৃত্ত (১৯৭৭), বেকনের মৌমাছিরা (১৯৮৫), নিরাশ্রয় গৃহী…