মুহম্মদ নূরুল হুদা
-
আমার মাতৃচুম্বনের আদি স্বর
মেঘেদের আড়ালে হাসছিলাম হাহা। ঠা-ঠা ডিগবাজি খাচ্ছিলাম সপ্ত-ঋষির পবনে-পর্বতে। মুহূর্তের তিমিরাক্ষী আলোকপোশাক রূপবদলরত অনবরত। ভীতসন্ত্রস্ত আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম স্বর্গমর্ত্য অমাদিগন্ত। আমার আগে-পেছনে আমাকে খুঁজে খুঁজে পাহারা দিচ্ছিল হাজার হাজার কোটি কোটি আমার আমি। যেহেতু আমার আগে-পেছনে আমার পেছনে-আগে ছুটছিলেন বড়শি হাতে আমার মানবজনক। জনক তো নয়, খলুই হাতে এক মৎস্যশিকারি। শিকারি তো নয়, সুদর্শন চক্র…
-
সিরাজীর সৃষ্টিসত্য
ব্যক্তিজীবনের সীমিত আয়ু পেরিয়ে ২৪ মে ২০২১ তারিখে আমার বন্ধু কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী চিরজীবনে প্রবেশ করেছে। এখন থেকে তার সুপুষ্ট রচনাসম্ভারই তার প্রধান পরিচয়। দেখতে দেখতে পঞ্চাশ পেরিয়ে ষাট পেরিয়ে সত্তর পেরিয়ে তিয়াত্তরে প্রবেশ করেছিল সিরাজী। কর্মজীবনের শ্রেষ্ঠ পালকটি তখন তার মুকুটে। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক রূপে প্রায় তিন বছর অতিক্রান্ত। তারপরেই দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে…
-
কবির কালান্তর
কালান্তরে এসেছিলে উড়ে কালান্তরে ফিরে গেলে ঘুরে আরম্ভের আগে ছিল আরম্ভ তোমার, আরম্ভের আগে থাকে আরম্ভ সবার, সবার থাকে না শুধু শেষ হয়ে শেষ তুমি কিন্তু কালান্তরে শেষেও অশেষ; সেই কথা কিছু আছে জানা, বাকিটুকু বাকি থাক অনন্ত অজানা। প্রায়-আদিপুরুষের নাম জগন্নাথ কুশারি পীরালি ব্রাহ্মণ কন্যা বিয়ে করে বাড়ি বানালেন খুলনার দক্ষিণডিহিতে; এমন বিয়ের ফলে…
-
স্বাধীনতা
স্বাধীন তুমি স্বাধীন আমি পরাধীন কে হে বল, পরাধীন কে হে বল, পরাধীন কে হে বল, অন্যকে যে করেছে অধীন ধরতে তাকেই চল, ধরতে তাকেই চল, ধরতে তাকেই চল। জননী-ধরণি স্বয়ংজন্ম, স্বয়ং জন্ম-স্বাধীন স্বয়ং জন্ম-স্বাধীন স্বয়ং জন্ম-স্বাধীন, ধরণিকে যে অধীন করেছে, কে সে অজেয় বীর কে সে অজেয় বীর কে সে অজেয় বীর? বাঘ বলো…
-
যাই
(কবি-সম্পাদক আবুল হাসনাতকে নিবেদিত) যাই, চলো যাই, যাবার বিকল্প নাই, চলো, রূপে ও অরূপে যাই; চলো, যেতে যেতে নিত্য বিবর্তনে যাই; স্থিরচিত্র থেকে স্বরূপ-অরূপ চিত্তে নিত্য সমর্পণে যাই। বদলপ্রবণ পায়ে এতদূর আমরা এসেছি। বিবর্তিত শুদ্ধচিত্তে বারবার আমাকে পেয়েছি। ফলনপ্রবণ দেহ, নিত্যবৃত্তে নবায়িত মন যুগলে ভ্রমণরত, সর্ব অঙ্গে ডানাসন্তরণ, বাঁক পার হয়ে বারবার অন্য এক বাঁকে; অনন্তবদলরূপ জীবেদের ডাকে শুধু ডাকে। আকৃতিবদল যদি বোধের ধরন সিদ্ধকাম মুনিঋষি বা বৈয়াকরণ মুহূর্তের রথযাত্রী, অনিত্য গড়ন, মূর্ত আর বিমূর্তের বিবিধ বাস্তবে; নীড় ভেঙে নীড়ে যাই সৃষ্টি কলরবে। ভ্রমণ মরণ নয়, মরণ ভ্রমণ : জন্মমৃত্যু নির্ধারিত দুই ইস্টিশন; সুরতবদল করে নিত্য পরিযায়ী সটান দণ্ডায়মান কিংবা শয্যাশায়ী পঞ্চভূতে যাত্রা অহর্নিশ: প্রাণীরা আহার-ঘ্রাণ ভেষজ-আমিষ। তারপর একদিন শীতলপাটিতে যদি মাটিতে বিলীন, মানুষ বদলযাত্রী রূপে রূপে দিগন্তে আসীন।