রেহমান সিদ্দিক
-
বৃষ্টিনৃত্য
ঝাঁক ঝাঁক শাদা পরী নাচছে জানালায় বসে বৃষ্টিনৃত্য দেখছি অন্তহীন কাল দলবেঁধে ছুটে আসে শাদা ঘোড়া ক্ষুরের ধ্বনির সঙ্গে বৃষ্টির কী ভীষণ মাখামাখি ঘোড়াগুলো ঢুকে যাচ্ছে জলের গভীরে কত্থকের বিচূর্ণ মুদ্রায় নিরন্তর কে বাজায় কালের সানাই? কার আঙুল অন্তরীক্ষে দেখায় ম্যাজিক? একবার আমাকে বাজাও অশ^ক্ষুরের ধ্বনির সঙ্গে মিশে যাই
-
বৃষ্টির বাজনা
কান পেতে আছি কে যেন বাজায় এক অস্থির সেতার ধ্যানমগ্ন শিল্পীর আঙুল ফোটায় অজস্র ফুল নানান রঙের বাহারি নকশা-আঁকা, বিচিত্র ভঙ্গিতে চতুর্দিকে শাদা রক্তপাত ডুবে যাচ্ছে ঘর-বাড়ি-মাঠ-ঘাট পশুপাখি, শিশুরাও আজ জেগে আছে বাজনাটা কাউকেই ঘুমোতে দিচ্ছে না সারারাত জেগে আছি, কান পেতে আছি
-
মাতাল মহুয়া
ইমেজের অন্তহীন কুয়াশায় বিভোর রহস্য রূপের আঁধার খুঁটে খুঁটে আয়না বসায় এক মাতাল মহুয়া তামারং ক্যানভাসে আঁকে পাতার সবুজধ্বনি, লাল নীল ফুলের আহ্বান পাখিদের ডানার কম্পন চারদিকে টুপটাপ ঝরে পড়ে নিসর্গের শব্দ ধ্যানমগ্নতায় কখনো কুড়ায় আবার কখনো অনন্তের চোখে মুখে মাখে রং
-
মাছ ধরেছি
অথই জলে মাছ ধরেছি চিকন জালে আউল বাউল মাছ ধরেছি এই দ্যাখো না – মলা, ঢেলা, কানকাটা কই রূপচাঁদা আর রঙিন রোহিত দেখতে কি পাও আঁশের ঝিলিক? দিল-দরিয়ায়, রূপ-দরিয়ায় আমি কিছু মাছ ধরেছি জন্মকানা ও নিকারি, কিনবে নাকি?
-
সুবর্ণভূমি
অন্তহীন সবুজের হাতছানি আর ডাকে মাটির মমতা স্বপ্নের ডানায় ভর দিয়ে উড়ে উড়ে ভেদ করে মেঘের রহস্য অনন্তের লাল-নীলে পালক ভিজিয়ে আমি এসে নামলাম বোধিবৃক্ষে ফুটে আছে সংখ্যাতীত ফুলের প্রতীক ডালে ডালে নানান রঙের আলো জ্বলে সারাক্ষণ সাগরের তীরে নীল অশ্ব দেখায় দাপট জলরঙে আঁকবো ইমেজ ঢেউয়ের বিচূর্ণ সাদা ফণার ধরন দ্বীপের দিগন্তঘেঁষা পাহাড়ের নির্জন…
-
স্বর্ণলগ্ন
তিন স্বর্ণমাছি উড়ে উড়ে ঘোরে আনাগোনা সোনার আড়তে স্বর্ণপাতে খোঁজে ঘ্রাণ অর্ধেক ভোজন যদি হয়! চার ঝরছে আকাশ থেকে স্বর্ণবৃষ্টি স্বর্ণ-শীল পড়ছে গড়িয়ে শিশুরা কুড়ায় আর ভিজে ঝিল থেকে বিলে লাফিয়ে উঠছে স্বর্ণ-কই কিশোরেরা হইচই করে আর ধরে পাঁচ কৃষকের গোলাভরা স্বর্ণ মণ-দরে বিক্রি করে হাটে খুব দ্রুত বাড়ে স্বর্ণমাছ পুকুরেও সোনা ফলে হাঁকে ডাক…
-
পিতলের ঘুঘু
পিতলের ঘুঘু আমি, খুঁটে খাচ্ছি নিকেলের কণা ডানায় কালের চিহ্ন – শিল্পীর নিখুঁত কারুকাজ; তুলির রহস্য-মায়া, সাধনার অধরা কম্পন আমার গম্ভীর ডাকে প্রযুুক্তির বন ভারি আজ দ্বিপ্রহর বাজায় নূপুর নাকি অদৃশ্য মর্মর অরণ্যের বুক জুড়ে নিরন্তর বহে ছেলেবেলা পড়ন্ত বিকেল ছাড়ে দীর্ঘশ্বাস, হাওয়ার ঘর্ঘর কণ্ঠে ঝুলে আছে তীব্র তৃষ্ণা, ঘু-ঘু ডাকছি কেবল
-
গল্পবৃত্ত
সময় তোমাকে-আমাকে টোনাটুনির গল্পের মধ্যে ছেড়ে দিয়েছে আমি চাল আনি, তেল আনি, নুন আনি তুমি কোটনা কোট, বাটনা বাট আর অনন্তের চুল্লিতে জ্বেলে দাও অন্তরের আগুন সে-আগুনে রান্না হয় সুস্বাদু খাবার আমাদের চারচোখে বিভোর বিস্ময়