সনৎকুমার সাহা
-
জুলফিকার মতিনের কবিতা
গত বছর ফেব্রুয়ারি বইমেলায় জুলফিকার মতিনের কাব্যসংগ্রহ (২০২২) বেরিয়েছে। হাতে পেলাম কিছুদিন আগে। খুশি হয়েছি। সেইসঙ্গে একটু উদ্বিগ্ন। মতিন কি কবিতা লেখায় ইতি টানছেন? অথবা এমন কি যে তিনি মনে করছেন, নতুন কথা আর তাঁর কিছু বলার নেই? র্যাঁবো, সমর সেন, এঁরাও প্রতিভার অবিমোচ্য দাগ পড়া মাত্রই বিদায় নেন। জীবন থেকে নয়, কবিতা থেকে। আমাদের…
-
শোকে-আক্ষেপে আমাদের পনেরোই আগস্ট
দিনটির শুরু আকস্মিক শোকের বজ্রপাতে। বঙ্গবন্ধু আর নেই। লেলিহান শিখা গ্রাস করে তাঁর চারপাশে কাছে থাকা আপনজন সবাইকে। একই ছকের গ্রাস আরো কজন। ভিন্ন ভিন্ন বাসস্থানে। দিনটি পনেরোই আগস্ট। উনিশশো পঁচাত্তর। ঘটনার বিবরণ মোটাদাগে এখন সবার আয়ত্তে। এক সুপরিকল্পিত সেনা অভ্যুত্থানে খুব ভোরে আক্রান্ত হয় ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর আবাসস্থল। কোনো রাষ্ট্রীয় নিবাস তিনি…
-
দীপা বন্দ্যোপাধ্যায় : কেবলমাত্র গানে গানে
দীপা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমার প্রথম দেখা আজ থেকে পঞ্চাশ বছরেরও আগে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজির ছাত্রী হয়ে তাঁর আসা। খুলনা থেকে। দৌলতপুরে বি.এল কলেজের ছাপ নিয়ে। তখন শিক্ষা ও সংস্কৃতির আবহ ছিল খুলনায় প্রাণবন্ত। মহেশ্বরপাশায় সুবোধ মজুমদার স্বয়ং একটা ইনস্টিটিউশন। অঙ্কশাস্ত্রের সর্বজনমান্য অধ্যাপক, কিন্তু আরো গভীরভাবে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে প্রাণবান সমন্বয়ের ধারক। সেখানে কেন্দ্রভূমিতে রবীন্দ্রনাথ। উদার আভিজাত্যে ধারণ…
-
শার্ল বোদলেয়ারের একটি গদ্যকবিতা
অনুবাদ ও টীকা : সনৎকুমার সাহা স্বপ্নের মতো এক ঘর, সত্যিকার বোধ জন্ম নেয়। বদ্ধ বাতাসে ভাসে হালকা গোলাপি নীল আভা। চেতনা সেখানে ভেজে অলস বর্ষণে। ঘ্রাণে মিশে থাকে তার খেদ ও বাসনা – নীলাভ সিঁদুরে ছায়া এ যেন সাঁঝের। গ্রহণের কালে খোঁজা শরীরের স্বাদ। আসবাব-তৈজস-সব প্রসারিত বাধ্য অভিলাষে, ছড়ানো-ছিটানো আর ঝিমুনি জড়ানো। তারা যেন…
-
আমাদের আবুল হাসনাত
আমরা আছি হাসনাত নেই, এটা কোনোদিন কল্পনা করিনি। বয়োজ্যেষ্ঠ যাঁরা, তাঁদের কেউ চলে গেলে কষ্ট পেয়েছি। কারো কারো তিরোধানে ক্ষতি অপূরণীয়। আমরা অসহায় বোধ করেছি। কিন্তু আমার জায়গা থেকে এটা মেনে নিয়ে সান্ত্বনা খুঁজেছি, তাঁরা তো আমার চেয়ে বয়সে বড়। এগিয়ে যাবার পথ তাঁরা তৈরি করেছেন। অনুসরণের দায় আমাদের। কিন্তু হাসনাত তো বেশ ছোট। বহুমুখী…
-
এক ও অদ্বিতীয় আনিসুজ্জামান
বলতে পারি না, আমি কখনো তাঁর ঘনিষ্ঠ ছিলাম। গত দু-বছরে দেখা হয়নি একবারও। মফস্বলে থাকি। ঢাকা যাইনি অনেকদিন। এক সাহিত্য-সংস্কৃতি মেলায় তিনিই এখানে এসেছিলেন। তারপর আর না। ফোনালাপও নয়। সংকোচ ছিল আমারই। অকারণে তাঁকে বিরক্ত করা – মন চায়নি। তাছাড়া তাঁর শরীরের অবস্থা! সাবধান হতে হয় বইকি। তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান – আমাদের সবার…
-
সন্জীদা খাতুনের শান্তিনিকেতনের দিনগুলি
তিনি সন্জীদা খাতুন। আমাদের অশেষ গর্বের এক নাম। এখন তিনি সব বাঙালির শ্রদ্ধার পাত্রী যে বাঙালি সংস্কৃতি নদীর মতো বহমান, দুপাশে স্থান-কালের সব বিভাজন উপেক্ষা করে ফুল ফোটায়, ফসল ফলায়, সব মানুষের মিলন ঘটায়, মনের কালি ধুয়ে দেয়, তিনি তাকেই পূর্ণপ্রাণের সবল তৃষ্ণায় নিজের ভেতর শুষে নেন। জহু মুনির মতো আবার তাকে জাহ্ণবী করে কালের…
-
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ
তাঁর জন্মশতবর্ষ-সূচনালগ্নে বঙ্গবন্ধুকে আমাদের কৃতজ্ঞ স্মরণ। তাঁর নেতৃত্বের প্রেরণাই সম্ভব করে স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়। ত্যাগের মহিমায় তা উজ্জ্বল। গণমানুষের চেতনায় তার ব্যাপ্তি এবং সর্বতোভাবে নৈর্ব্যক্তিক পরার্থকামনায় তা সংহত। তবে তাঁকেও মাড়াতে হয়েছে অভিজ্ঞতার কাঁটা-বিছানো পথ। হ্যাঁ-নার দ্বন্দ্বের পর্যায়ক্রমিক বহুমুখী বিস্তার, পরস্পরের সংস্রব ও সংঘাত – এসব এড়িয়ে নয়, বরং তাদের সঙ্গে জড়িয়ে থেকে…
-
রবীন্দ্রসংগীত শিল্পে অভূতপূর্ব নিবেদন
স্বপন দত্ত ও আনন্দময়ী মজুমদার, দুজনেই রবীন্দ্রসংগীত গান। আপন আপন কাজে সার্থকতা ও মর্যাদার আসন তাঁদের দুজনেরই। তবে তাঁদের প্রাণসম্পদ রবীন্দ্রসংগীত। ধ্যান ও নিষ্ঠার একান্ত আয়োজন। এই গানের জগতে তাঁরা আগন্তুক নন। ভাবুক শ্রোতার অভাব ঘটে না। নিবেদনে স্বকীয়তা, কমনীয়তা ও সৃষ্টিশীলতা দুজনের গানেরই বৈশিষ্ট্য। এদিকে আনন্দময়ী এই গান নিয়ে বিশাল কা– মেতেছেন। রবীন্দ্রনাথের গানগুলো…
-
আমার পড়া এক সেরা উপন্যাস মৌর্য
তাপস যখন আমার কাছে এসে জানাল যে, মেŠর্য উপন্যাসের প্রকাশনা উৎসব হবে, আমাকে আসতে হবে, কথা বলতে হবে, তখন আমার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল, আমি যেতে পারব না। এখন চোখে দেখি না, কানে শুনি না, মাথায় কিছু ঢোকে না এবং মনে কিছু থাকে না। এতবড় বিশাল একটি উপন্যাসগ্রন্থ পড়তে হবে, তারপরে এখানে এসে সুধীজনের সামনে দাঁড়াতে…
-
শাহানারা হোসেনের বেলাশেষের পাঁচালি
তাঁ কে প্রথম দেখি ১৯৬০ সালে। একা নন। স্বামী ডক্টর এ.বি. মোশাররফ হোসেনও তাঁর সঙ্গে। দুজনই এসেছেন আমাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় যোগ দিতে। আমি তখনো ছাত্র। তাঁদের বিষয়ে কিছুই জানি না। কিন্তু চোখে পড়াতেই মুগ্ধ। দুজনেই সাধারণের তুলনায় দীর্ঘদেহী-দিব্যকাস্তি। শাহানারা হোসেন যেন রাজহংসী। লালিত্যের সঙ্গে গাম্ভীর্যের মিশেল। দেবী প্রতিমার মতো। আপনা থেকে মাথা নত হয়।…
-
বাস্তবতার মাত্রাবিচার : উপন্যাসে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
সাহিত্য বাস্তবধর্মী, লেখক পুরোপুরি বাস্তববাদী, এ-জাতীয় কথা শুনে আমরা অনেকেই অভ্যস্ত। এমন বলাতে বিতর্ক বা বিভ্রান্তি জাগে না। চেনা ছকে চলচ্চিত্রের-দ্রম্নততায় মনের আয়নায় তার গড়ন বা বৈশিষ্ট্য ভেসে ওঠে। প্রত্যাশার জায়গাটাও। পড়ার পর মিলিয়ে নিতে পারি, তৃপ্তি বা অতৃপ্তিতে যোগ-বিয়োগ কতটা। অবশ্য তা মনোজগতের ব্যাপার। প্রত্যক্ষ্য ইন্দ্রিয়নির্ভর কোনো মাপকাঠি তার মেলে না। তবু ধারণা করা…