সোহরাব পাশা

  • প্রিয় ভাষাপত্র 

    নিঃস্ব ভাষাপত্র ওড়ে              রাত্রির পাঁজরে  নিদ্রিত বসন্তের মুখর পাখি             দেখার উপমা নেই, পৃষ্ঠাজুড়ে অসমাপ্ত দীর্ঘবৃত্ত                 অন্ধ দীর্ঘশ্বাস  ভুল ছন্দে রাত্রির বিন্যাস  বিমুখ তীব্র হাওয়ার নিচে                    বিভ্রম…

  • জীবনানন্দের শেষ গল্প

    বর্ষার গল্পটাও ছিঁড়ে গেছে অন্ধকারে স্মৃতির নির্জন ব্যাধি মৃত্যু ছুঁয়ে থাকে মনে পড়ে জীবনানন্দের শেষ গল্প কী বিষাদ গভীর বৃষ্টির আর্তনাদ নৈঃশব্দ্য পাঁজরে সর্বনাশের করুণ পবিত্র গল্পের হলুদ-আগুন ছায়া …। বুনোরাত্রি। দীর্ঘ তাড়া খুব ছেঁড়া-প্রত্নপথ ধ্বংসস্তূপের ভেতর হারানো খোয়ানো মানুষের নিঃস্বতার অনিঃশেষ যাত্রা, সময় ধারণ করে দাহভাষা। বিভ্রান্ত ভ্রমণ মানুষের। নিদ্রাহীন বেদনার তীব্র দাহ ভিজে…

  • সন্ধ্যার কুসুম নদী

    রাত্রির দুপুরে হাঁটে গল্প ছেঁড়া রোদ দূরে ডাকে কেউ, মন পোড়ে ঝরে পড়া বসন্তের শব্দ অস্তমিত লাল আঙুর গাছের ছায়া বৃষ্টির হরিৎদাহ চোখে ফোটে গোলাপের কাঁটা; ঘুম জানালায় হেসে ওঠে স্বপ্নদীর্ণ জলরং ঠোঁট লাবণ্যের আগুন সিম্ফনি সন্ধ্যার কুসুম নদী অথৈ নৈঃশব্দ্যের গান স্নিগ্ধ শিল্পস্বর উজ্জ্বল ঐশ্বর্যের তুমি ডাউন ট্রেনে ফেরে – না ফেরা উন্মাদ রাত্রি-নিবিড়…

  • ভাষা : রৌদ্রদিনের সংস্কৃতি 

    ভাষা মানে সভ্যতার সংবিধান  ভাষা মানে রাষ্ট্রচিন্তা  ভাষা মানে মুক্তির সনদ ভাষা মানে রৌদ্রদিনের সংস্কৃতি  ভাষা মানে প্রফুল্ল দুপুর  ভাষা মানে হলুদ বিকেল  স্নিগ্ধ রোদের কোলাহল  ভাষা মানে সন্ধের তুলসীতলা – ভোরের আজান ভাষা মানে ভালোবাসার নিবিড় আলোপড়া –                   গভীর গোপন তীব্র মুখর মুগ্ধতা  ভাষা মানে লাবণ্য-কবিতা …

  • কাছে এলে অন্য কেউ 

    যখন সে যায় তার ছায়া সঙ্গে যায়, অবশিষ্ট    থাকে পাথরশূন্যতা  নীল মায়া স্মৃতির কঙ্কাল, ভালোবাসা তরল জিনিস  গলে যায়  শীতভোরে যেভাবে শিশির কলাপাতা  থেকে নিশ্চুপ গড়িয়ে পড়ে ধুলোর কার্পেটে, ঘাসে; শরীর এবং মন নদীর প্রতিভা নিয়ে ছোটে অন্য দুপুর যেভাবে অন্য গল্প ঠোঁটে হেঁটে যায়  হেমন্তের বিকেলের মাঠে  যেখানে খুব নিবিড় জমে থাকে গত…

  • তিনি উজ্জ্বল দাঁড়িয়ে আছেন 

    যাপনের সকাল দুপুর আর সন্ধে ভোরবেলা  বেদনার মেঘ বুকে নিয়ে পা ফেলেছো দূর দিগন্তের প্রান্তে, কখনো খোঁজনি তুমি বৃষ্টির আকাশ, স্বরচিত আলো জ্বেলে হেঁটে গেছো তুমি  বড়ো একা-ক্লান্তিহীন; একদিন এই বাড়িগুলি, ঘরগুলি বকুলতলার ছায়া  আমাদের আপন ছিল না, স্বপ্নভাঙা বুকভরা দীর্ঘশ^াস ছিল জীবনের  তোমার কণ্ঠে ধ্বনিত হলো উজ্জ্বল উচ্চারণ  – ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বধ্যভূমি, শহিদ মিনার –…

  • হঠাৎ আলোর শব্দ

    দীর্ঘ নির্জনতার বিষাদ বেদনার অজস্র পঙ্ক্তি, অবরুদ্ধ কষ্টকাল ভাঙা করোটির ভেতর অশ্লীল কাঁকড়ার পা বে-আব্রু রাত্রির লাল তৃষ্ণা  বারুদের বিশ্রীগন্ধ, করুণ কলহ দীর্ঘশ্বাসে বসে থাকা মাছরাঙাদের  শূন্য ঠোঁট  ঝরা পাতা বিষণ্ন দুপুর  মাথা নিচু বাড়ি ফেরা বিমর্ষ হাটুরে  হঠাৎ উধাও তার অন্তঃপুর  তীব্র শূন্যতা জড়ানো  পা ছিঁড়ে নীলিমার স্বপ্নঘুড়ি বাড়ি থেকে উড়ে যায় সব ঘরবাড়ি  পড়ে…

  • স্বল্পদৈর্ঘ্য ভোর

    স্বল্পদৈর্ঘ্য ভোরে সুন্দর একবার ছুঁয়ে দিলে ধুধু গভীর পতন জংধরা আঁধার ডাকে। হিংস্র লাল নখ নদীর ঠোঁটে শোকার্ত সংগীত। নষ্ট পর্ব অশ্লীল কুয়াশা খামচে ধরে একুশের রোদ। রুগ্্ণশিল্প।                                    ডাকে জয়নুলের কাক পোড়া স্মৃতির ছাই ওড়ে – খোঁড়াখুঁড়ি – কানামাছি খেলা। শিকড়ে বিশ্রী উঁই। ঝরে বৃক্ষ, লতাগুল্ম, নারী – মাঠ                               থেকে ফেরা উজ্জ্বল কিশোরী…

  • বুনোফুলের নির্জন গন্ধ

    কোথাও কী যাওয়ার কথা ছিল পথের গ্রীবায় গূঢ়সন্ধি                      বিচ্ছেদ ভ্রমণ, দেয়ালের নকশায় মলিন সন্ধ্যার                                  কঙ্কাল  গ্রন্থি-বাঁধা ছায়ার কুহক                      অসুখ-সময়…

  • সন্ধের ভিড়ে

    দীর্ঘ বিষাদের গুঞ্জনভরা মানুষের জীবন গহিন সন্তাপ রেখে গান উড়ে যায় নির্জন স্বপ্নেরা দূরে ওড়াউড়ি করে প্রিয় চোখে ভুল জানালায় প্রিয় ছায়া ভুলে থাকা দেখে; কে যেন প্রাচীর তোলে পথে তার চোখের হাসির গন্ধ ভেসে আসে বৃষ্টির ভেতর মন পোড়ে; অতীত ডেকে ওঠে নিঃশব্দে করুণ রঙিন ধুলোছায়া পড়া-রাঙা গোধূলি মেঘ রবীন্দ্রনাথের ধ্রুপদি ফিরে ফিরে আসে…

  • জ্যোৎস্নার গান

    জ্যোৎস্নার গান ভুলে যাওয়া অন্ধ মানুষ – স্বপ্ন ওড়ে – নিদ্রিত দুপুরে, নিঃস্বতার তামাশার রঙিন ফানুস ছিঁড়ে যায় উজ্জ্বল তিমিরে; রাত্রি জেগে থাকে কুয়াশার ঘোরলাগা দূর একাত্তরে, বিদীর্ণ পাঁজরে – মৃত্যু আর – বিষণ্ন রুগ্ণ ছায়ার ভিড়ে; জন্মান্ধ রাত্রির সিঁড়ির নিচে নিবিড় নির্জনে ভুল ওড়ে – মন পোড়ে – পৃথিবীর প্রিয় ফুলগুলি যায় ঝরে ময়লাদিনের…

  • কবি মাহমুদ আল জামান : স্বপ্নের বাতিঘর

    (১ নভেম্বর কবি মাহমুদ আল জামানের প্রয়াণ দিবসে) তোমার নাম প্রত্যহ নির্মম বিষাদে গান করে দীর্ঘশ্বাসগুলি নদীর প্রতিভা পায় ঢেউ ওড়ে, বালি ওড়ে – শূন্যতার ভিড়ে না-ফেরা প্রিয় পাখির আগুন-ছায়ায় জীবন কী ফুরিয়ে যায় নির্জনতার তুমুল আঁধারে মনপোড়া ওই কবর-চিতায় মাঝে মাঝে মাঝরাত গল্প করে নিঃস্ব বেদনার; জানালায় ‘মা’ – আকাশ দেখে, ‘দিঠি’র চোখ ভিজে…