কবিতা
-
স্মৃতির কলহ
কী কী থাকে ঠোঁটস্থ? তোমার আনন কুশল কথা চলানন্দন চোখের ভিতর নদীকান্ত। কিন্তু আমি যাচ্ছি ভুলে যখন আবার দেখছি : বেশি মাত্রায় শহরিকা, বসনপ্রভা লোকরঞ্জন, এলোমেলো ভ্রামণিকা, অস্থিরতার প্রতিনিধি। নতুন পাঠ করতে গিয়ে ছাইদীপ্তি ঠোঁটের কাহন, চর্চানিধি ভ্রষ্ট। ঘটক সময় প্রতিযোগে, কষ্টরেখা বহুরূপী। ভেবেছিলাম আটপৌরে…
-
সুহৃদ অভিভাবক
[কবি শামসুর রাহমানের প্রয়াণ মাস স্মরণে] ক . বাঁচার আনন্দ কিংবা যন্ত্রণা, সবসময় বন্দনীয় মনে হয়েছে তার কাছে। যার পরিচর্যার পিঠে পিঠে ক্ষুধার্ত হয়েছিল পাখি শত স্নিগ্ধ সন্ধ্যার উপস্থিতিতে ফিনফিনে পালক মিথের বৈঠকে এসে মুখের প্রচ্ছদে বসেছিল; দৃষ্টির সীমানাটা মেপে ছুঁয়েছিল রূপায়িত সত্যের কলকণ্ঠের পরিচয় খ . লোকরুচির দশক শাস্ত্রেরই বিশেষ প্রিয়তা পাখি উদ্বেল…
-
সাঁকো
পরাবাস্তবের মাঠ থেকে কিছু দূরে এই সাঁকো, ধানিজমি, পাখিদের আলাপচারিতা। তারপর এলনিনোর হঠাৎ আবির্ভাব চোখের পাতায় নেমে-আসা স্বপ্ন থেকে জন্ম নেয় ক্লান্তি, অবসাদ অরণ্যের বাস্তুতন্ত্র লুট হলে ক্যানভাসে কালো রং বেড়ে যায় তারপর হাওয়া ওঠে ভেসে আসে পোড়াকাঠ, অস্থিকলস। ঋতুপরিবর্তনের পথের দক্ষিণ পাশে মূর্তিমান এই ঝড় – স্মৃতিভেজা স্বরলিপি বটপাতা, বৈঠার আওয়াজ চৈত্রের বাঁশির সুর…
-
বৃষ্টিনৃত্য
ঝাঁক ঝাঁক শাদা পরী নাচছে জানালায় বসে বৃষ্টিনৃত্য দেখছি অন্তহীন কাল দলবেঁধে ছুটে আসে শাদা ঘোড়া ক্ষুরের ধ্বনির সঙ্গে বৃষ্টির কী ভীষণ মাখামাখি ঘোড়াগুলো ঢুকে যাচ্ছে জলের গভীরে কত্থকের বিচূর্ণ মুদ্রায় নিরন্তর কে বাজায় কালের সানাই? কার আঙুল অন্তরীক্ষে দেখায় ম্যাজিক? একবার আমাকে বাজাও অশ^ক্ষুরের ধ্বনির সঙ্গে মিশে যাই
-
বৃষ্টির বাজনা
কান পেতে আছি কে যেন বাজায় এক অস্থির সেতার ধ্যানমগ্ন শিল্পীর আঙুল ফোটায় অজস্র ফুল নানান রঙের বাহারি নকশা-আঁকা, বিচিত্র ভঙ্গিতে চতুর্দিকে শাদা রক্তপাত ডুবে যাচ্ছে ঘর-বাড়ি-মাঠ-ঘাট পশুপাখি, শিশুরাও আজ জেগে আছে বাজনাটা কাউকেই ঘুমোতে দিচ্ছে না সারারাত জেগে আছি, কান পেতে আছি
-
বন্ধ করতে হবে
বন্ধ করতে হবে অতিরিক্ত যা-কিছু অবশিষ্টরা অপেক্ষমাণ দূষণের তালিকায় সেঁটে দাও বিদগ্ধদের নাম যে-ছবি চিৎকার করছে বন্ধুত্বের তাকে হৃদয় দাও। মুদ্রায় নাম লেখা বন্ধ করো চাঁদে যাওয়া বন্ধ করো খাদ্যের গায়ে নাম লেখা বন্ধ করো সূচিপত্র আর নির্ঘণ্ট দিয়ে জীবন চলে না বাহবা দেওয়া বন্ধ করো অভিধান বারবার বদলে যায় বানানরীতি আর জিহ্বার নৃত্য বন্ধ…
-
লম্পট বাতাস
লম্পট বাতাস সব এলোমেলো করে দিলো রোদের কিরণ মেখে চুপচাপ শুয়ে আছে প্রিয় শাড়িগুলি যদিও রঙিন শাড়ি ব্রা-র স্পর্শ পেয়ে বাতাসকে উপেক্ষা করে রোদের সুষমা নিচ্ছে অপরূপ সৌন্দর্যের লাবণ্য স্ফুরণে নারকীয় হতে হতে অখণ্ড থাকে না আর নীরব সত্তা বাতাসের স্নিগ্ধরূপ নারীর স্নিগ্ধতা প্রকাশিত করে বয়ে যায় দ্বিতীয় সত্তায় লম্পট বাতাস তার কৌমার্য হরণ করে…
-
তোমার জন্যে একটি কবিতা
একদিন না-দেখার মর্মার্থ বুঝেছি তুমি কতো প্রিয় হয়ে ওঠো! একদিন অভ্যাসের কাঠগড়া থেকে বেরিয়ে এসে দেখেছি তুমি কতো সুন্দর অনন্য তোমার রূপ। আমারই জল যখন মেঘ হয়ে ঘরে ফিরে আসে বৃষ্টির জল হয়ে তার বহুগুণ শক্তি। ওই যে আকাশের দূর ওই যে বহুদূর তার মধ্যে নতুন লুকানো তার মধ্যে অনেক অমিয়। তুমি দূরে গেলে…
-
আলোর প্রকৃতি
ভালোবাসা মানে তুমুল বৃষ্টিতে তোমাকে ভাবতে থাকা আর অন্যমনস্কভাবে হুইস্কি পান করে যত গ্লানি জমে থাকা ভুল ও অপেক্ষার ভেতরে পা ডুবিয়ে বসে থাকা নয়! ভালোবাসা মানে এই ধুলো-বালির সংসারে বৃষ্টির জলে অমানুষের যত লোভ ও যাতনা সহ্য করা নয়! ভালোবাসা মানে অনন্তকাল মুখোমুখি বসে থাকা … যারা দুঃসময়ে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাদের গ্রীবা চিরকাল…
-
তীর্থনদ
ব্রহ্মপুত্রের একান্ত নিজের এক গান আছে তার বিশাল বিশাল চর, চরের কাশবন সরিষার হলদে বান, জলের ভয়াল পাঁকের যে-স্বরলিপি, যে-সুর তা আর কারো নেই তার কাছে এলে আর কোনো গান শোনা যায় না মোসার্ত, ম্যারাডোনা কি মাইকেল থেকে জ্যানেট জ্যাকসন, সাকিরা কি ডায়নার দেহ ও প্রেমের গান, গল্প এখানে কোনো সুর খুঁজে পায় না, হয়তো…
-
অনিদ্রা
এত ভাবনা কোথায় থাকে এত চিন্তা রাতে ঘুমের সময় নীরব বিশৃঙ্খলা টেবিলে পুরনো একটা গিটার নিয়ে ছোট্ট টেবিল ঘড়ি দেয়ালে হাঁটতে থাকে আমার বিচিত্র ছায়া। রাস্তায় এখন আর হাঁটছে না কোনো কুকুর কুকুরগুলো ঘুমিয়ে পড়েছে কোথাও না কোথাও সিটি বাজিয়ে শহরে ঢুকছে সিক্স ডাউন সিক্স ডাউনে চেপে কতদিন আমি যেতে চেয়েছি চিটাগাং! আমার মাথায় রাজ্যের…
-
কিশোরীর নাম নুসরাত
যার ছায়ায় দাঁড়িয়ে তুমি বেড়ে ওঠো রোজ, যার অনুপ্রেরণা তোমায় নিশিদিন মোহাচ্ছন্ন করে রাখে, তার কথা একদিন চুপচাপ শুনবার ইচ্ছা খুব। সে তোমার শৈশব করেছে মধুময়, কৈশোরের দুরন্তপনায় মেতে আছো তার স্নেহ নিয়ে। আর তার তারুণ্যের দিনগুলো শুধু স্বপ্ন জোয়ারে ভেসেছো তার মতো হবে বলে। কেউ কি কারো মতো হয়? যে যার মতো হয়। তুমি…