ধারাবাহিক উপন্যাস
-
কাল
পাঁচ তখন রতনপুর বাজারটা ছিল পদ্মার কোলঘেঁষে। রিশিপাড়া ছাড়িয়ে দক্ষিণে দশ-পনেরো কানি আবাদি জমি। তার পশ্চিমে বাজার। নদীতীর থেকে একটা রাস্তা বেরিয়ে সোজা চলে গেছে উত্তরে। রিশিপাড়ার মুখে এসে দুদিকে দু-হাত ছড়িয়েছে। ওদিক থেকে হেঁটে এলে বাঁ-হাতের রাস্তা চলে গেছে কুসুমপুরের দিকে, ডান হাত গেছে রতনপুর পোস্ট অফিসের দিকে। পদ্মাপারে গিয়ে শেষ হয়েছে এই রাস্তা।…
-
কাল
চার আষাঢ় মাসের সেই ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতে ঠাকুরের নৌকা নিয়ে বাড়ি এসেছিল বদরু। বরইতলায় নৌকা বেঁধে উঠানে এসে দেখে জমসেদ তখনো ঘরের ছেমায় বসা। বড়ঘরের খোলা দরজায় পিতলের বড় কুপিটা জ্বলছে। ছোট ভাই দুটো, বোন দুটো মেজো বোনের ঘরের ছেমায় বসে কিচ্ছা শুনছে কফিলের কাছে। আধা-প্রতিবন্ধী মানুষটা আবার কিচ্ছার ওস্তাদ। কত কিচ্ছা যে তার ঝোলায়!…
-
কাল
দ্বিতীয় পর্ব তিন সেই রাতে ঠাকুরবাড়ির দিকে একটা নিমপাখি ডাকছিল। কৃষ্ণপক্ষের রাত। ঘুটঘুটে অন্ধকার দেশ গ্রামে। আষাঢ় মাস। আকাশে মেঘের চলাচল ছিল ঠিকই, তবে বৃষ্টি ছিল না। হাওয়ায় ছিল কদমফুলের গন্ধ। নিমপাখির সঙ্গে কুসংস্কার আছে প্রবল। পাখিটা কেউ কখনো চোখে দেখেনি। কোন পাখিটা যে নিমপাখি কেউ বলতে পারবে না। ডাকে রাতের বিভিন্ন প্রহরে। ডাকটা তিন-চারদিন…
-
কাল
১ দেবকুমার ঠাকুরকে লোকে বলে দেবু ঠাকুর। গেল বর্ষায় সেই দেবু ঠাকুরের সঙ্গে রতনপুর গ্রামটিও খুন হয়ে গেল। খুনের রাতে গ্রামের লোকজন একত্র হয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করছিল। চারদিককার বাড়ি থেকে ডিঙিনাও, কোষানাও, হারিকেন, কুপিবাতি আর টর্চলাইট নিয়ে লোকজন ছুটে এসেছিল। গাছপালা-ঝোপজঙ্গল-বাঁশঝাড়ে ঘুটঘুটে অন্ধকার ঠাকুরবাড়ি কিছুটা আলোকিত হয়েছিল। সেই আলোয় দেখা গেল বড় ঘরের দরজায় পড়ে আছেন…
-
জলের অক্ষরে লেখা
পর্ব : ২১ ঢাকায় ফিরে আরিয়ানা জানালো, বাকি কয়েকদিন আর বাইরে বেরোতে চায় না সে। বাসাতেই থাকবে। এই বাসা আর আরিয়ানার বাড়ির মধুর স্মৃতি নিয়ে সে ফিরে যেতে চায়। তাই হলো। আরিয়ানা বাসার প্রতিটি রুমে ঘুরে বেড়ালো, খুঁটিয়ে দেখলো এটা-ওটা সবকিছু – যেন নিজের স্পর্শ রেখে যেতে চায় সর্বত্র, চাচির কাছে বসে বাংলা রান্না শিখলো,…
-
জলের অক্ষরে লেখা
পর্ব : ১৯ নাস্তার টেবিলে বসে ঋভু খেয়াল করলো, দুজনেই বেশ চুপচাপ। এর মধ্যে কী হলো আবার? মা-মেয়েতে মনোমালিন্য? নাকি অন্য কিছু? কিছুক্ষণ পর সোফিয়া বললো, একটা কথা জিজ্ঞেস করি বাবা? – করো। – এই দেশে কাজের সুযোগ কেমন? – কাজ মানে? – মানে আমি যদি পড়াশোনা শেষ করে এখানে আসি তাহলে কাজ পাবো? –…
-
জলের অক্ষরে লেখা
পর্ব : ১৮ দিনগুলো যেন দ্রুত যাচ্ছে এখন। অংশু হঠাৎ করেই কাজের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতি শুক্রবার যাওয়ার কথা থাকলেও দুদিন পরপরই মানিকগঞ্জ যাচ্ছে ও। ঋভুও সুযোগ পেলেই সঙ্গী হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেউথা থেকে টিন-কাঠের তৈরি দুটো রেডিমেড ঘর এনে জমির এক পাশে স্থাপন করা হয়েছে। একটা শ্রমিকদের জন্য, অন্যটা অংশু এবং শুভর জন্য, যখন যে…
-
জলের অক্ষরে লেখা
পর্ব : ১৭ অবন্তির যাওয়ার দিন ঘনিয়ে এলো। তার আগে একদিন অংশুর বাসায় আড্ডা হলো খুব। বিকেলেই সবাই হাজির হয়ে গিয়েছিল। ঋভু অফিস থেকে আগেভাগে বেরিয়ে অবন্তিকে নিয়ে এসেছিল। সন্ধ্যার পর সাততলার গেস্টরুমে পানাহার আর আড্ডা চললো ঘণ্টাতিনেক ধরে। তারপর নিচে নেমে ডিনার সারলো সবাই। অপলা নিজেই রেঁধেছে আজকে। দেশি কই মাছের দোঁপিয়াজি আজকের প্রধান…
-
জলের অক্ষরে লেখা
পর্ব : ১৬ আড্ডা আর জমলো না। টুকিটাকি কথাবার্তা হলো, একটু-আধটু দুষ্টুমি, ডিনার শেষ হলো প্রায় নিঃশব্দে। ঠিক হলো, অংশু আর অপলা বাসায় চলে যাবে, ঋভু অবন্তিকে নামিয়ে দিয়ে আসবে। বিদায়ের সময় অপলা বললো, কালকে আপনারা আমার বাসায় আসেন। কই মাছের ভুনা খাওয়াবো। – কালকে না। আমার অন্য একটা কাজ আছে। বললো অবন্তি। – তাহলে…
-
জলের অক্ষরে লেখা
পর্ব : ১৫ অংশু আর অবন্তির দেখা হলো পরের দিন, অংশুর অফিসে। অবন্তি বেশ গম্ভীর, মনে হচ্ছে কোনোকিছু নিয়ে খুব চিন্তিত। সবসময় যে হাসি-আনন্দ-উচ্ছলতায় মেতে থাকে, তার এই গাম্ভীর্য মোটেই ভালো লাগছে না। অংশু বললো, কী হয়েছে তোর? – কই কিছু হয়নি তো! – তাহলে এরকম ঝিম মেরে আছিস কেন? – মাথার ভেতরে সব জট…
-
জলের অক্ষরে লেখা
পর্ব : ১৪ সারাদিন অবন্তির সঙ্গে যোগাযোগ হলো না বলে মন খারাপ লাগছিল ঋভুর। কথা তো হয়ইনি, এমনকি মেসেজেরও উত্তর দেয়নি অবন্তি। আজকে ও ব্যস্ত থাকবে, জানে ঋভু। তাই বলে এতটা? অংশুও সারাদিনে একবার খবর নিল না! অবশ্য ছুটির দিনে সেও নানা পারিবারিক বিষয়-আশয় নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ওদের জীবন আমার থেকে আলাদা, অন্যরকম – ভাবলো…
-
জলের অক্ষরে লেখা
পর্ব : ১৩ অবন্তি কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল জানে না, সকালে ঘুম ভাঙলো আফসানার ডাকাডাকিতে। এই সুসান, ওঠো তো। অনেক বেলা হয়েছে, ওঠো। অবন্তি ঘুম-জড়ানো কণ্ঠে বললো, এত ভোরে ডাকাডাকি শুরু করেছ কেন ভাবি? কী হয়েছে? ভোর না, দশটা বাজে। ওঠো। তোমার জন্য না খেয়ে বসে আছি। অবন্তি উঠে বসলো। শরীর জুড়ে কেমন এক অদ্ভুত অনুভূতি।…