ধারাবাহিক উপন্যাস
-
একটি মেয়ে
আফসার আমেদ \ ২০ \ বিছানায় বালিশের আড়ালে গুটিসুটি মেরে শুয়ে লুকিয়ে পড়েছে সেঁজুতি, হৃদয় তাকে খুঁজে পাচ্ছে না। হৃদয়ের সঙ্গে সে লুকোচুরি খেলছে তার ফ্ল্যাটে। হৃদয় খুঁজছে তো খুঁজছে, খুঁজে খুঁজে সারা হচ্ছে। সে অথচ হৃদয়কে দেখতে পায়, হৃদয় তাকে দেখতে পায় না। বাথরুমে আরশোলারা ওড়াউড়ি করে। রান্নাঘরে মশলার কৌটোগুলো পড়ে যায়। তার মধ্যে…
-
একটি মেয়ে
আফসার আমেদ \ ১৯ \ সেঁজুতির মোবাইল সেটটা কোথায় খোয়া গেছে। আলমদের বসতিবাড়ি থেকে ফিরে আর পাচ্ছে না। ফেরার পর দুদিন পেরিয়ে গেছে, আজই মনে পড়ল তার। সেই যে ওখানে মোবাইল সেটটা নীরব করে রেখেছিল, তারপরেও এই দুদিনে তার সরবতা বোধ করেনি। নিয়ে এসেছিল তো? জানে না। সুইচ স্টপ আছে, কোথাও গুঁজে রেখেছে, দরকার হয়নি…
-
নদী কারো নয়
সৈয়দ শামসুল হক \ ১৮\ উনিশশো সাতচল্লিশ সালের আগস্ট মাস – হিমালয় দক্ষিণের উপমহাদেশ থেকে – বিশেষ আমাদের এই জলেশ্বরীতে ব্রিটিশ বিদায়ের সেই দিনটি – পাকিস্তানের জন্মলগ্নের চোদ্দই আগস্ট বৃহস্পতিবার, আর হিন্দুস্থান তথা ভারতে পনেরোই আগস্ট শুক্রবার – সেই উন্মত্ত সময়ের বয়ান আমাদের কাছে কে করবে? আমরা কুসমির ঘরে সাইদুর রহমান কন্ট্রাক্টরের মুখে গল্প শুনছিলাম…
-
একটি মেয়ে
আফসার আমেদ \ ১৮ \ সেঁজুতি বস্তির ওই ঘরে ও বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়েছিল। বস্তি ঘর-লাগোয়া রাস্তায় গভীর রাতে একটা গাড়ির আওয়াজ এসে মিশল। গাড়িটা এলো। হর্ন বাজাল। থেমে গেছে আলমদের ঘরের সামনে। হর্ন বাজাল আরো কয়েকবার। আর কেউ যেন গাড়ি থেকে নামল ভারী বুট পায়ে। বস্তির ভেতর বুটের শব্দ বাজল। আলমদের দরজায় কড়া নাড়াবার…
-
নদী কারো নয়
সৈয়দ শামসুল হক \ ১৭ \ মধ্যরাতের গাঢ় ঘুম অথবা সন্ধ্যাকাল থেকে তার ঘোর সুরাচ্ছন্নতা, কোনো একটি, অথবা দুটোই – মকবুল হোসেন অচিরে বিছানায় ঢলে পড়ে, যেন প্রবাহিত হতে থাকে – নদী যেমন, নদীর ঢল নামা স্রোতেই যেনবা সে ভেসে যায়, যেতে থাকে। অচিরকাল মাত্র, সে আবার স্বপ্নের ভেতরে ঢুকে পড়ে। মকবুল হোসেনের শরীরের ওপর…
-
একটি মেয়ে
আফসার আমেদ \ ১৭ \ দরজা খুলে দিলো আলমের মা। আর আলমের ব্যান্ডেজ দেখে হাউমাউ করে উঠল। ‘ক্যা হুয়া রে মেরা জিস্ম কা টুকরা? এ লেড়কি কৌন?’ আলম চাপা স্বরে বলল, ‘জো হামারা জান বাঁচায়া। চিল্লা মত্। পানি দে তো।’ ‘ক্যা হুয়া, কোই লাফড়া?’ ‘লাফড়া-ফাপড়া নেই, স্রিফ অ্যাকসিডেন্ট।’ ‘ক্যায়সে?’ ‘খামোশ, বাদমে শুনো।’ ‘বাদমে?’ ‘হাঁ…
-
নদী কারো নয়
সৈয়দ শামসুল হক \ ১৬ \ এতক্ষণে আমরা নিশ্চয় ভুলি নাই যে, বাংলাদেশের ঔপন্যাসিক মকবুল হোসেন এখন জলেশ্বরীতে। এবং এখানে এসে নিরিবিলিতে কোনো উপন্যাস রচনারও উদ্দেশ্য তার নাই, যেমনটা সে দেশের বহু শহরে নিবাসে যায় লেখার জন্যে। এখানে তার আসা বাবার পূর্বাপর সমাচার সংগ্রহ করতে। বাবা মইনুল হোসেন মোক্তার সম্পর্কে প্রথম সে বিচলিত হয়েছিলো মরণ…
-
নদী কারো নয়
সৈয়দ শামসুল হক \ ১৫ \ অন্ধকারে চ্ছলচ্ছল করে চলেছে আধকোশা। কন্ট্রাক্টর সাইদুর রহমান কী জানবেন, যখন তিনি মকবুল হোসেনের সঙ্গে গল্প করছেন, কী তাঁর – জননন্দিত ঔপন্যাসিক মকবুল হোসেনের মনের মধ্যে তুফান তুলছে। আর ওদিকে ড্রাইভার মেহেরুল্লারই বা কী! মকবুল হোসেন নদীর অন্ধকার বুকে চোখ পেতে আছে। নদীর মতো নারী। শুধু নারী কেন? নর-নারী…