ধারাবাহিক উপন্যাস

  • স্মৃতির ছায়াপাত

    শাহীন আখতার   মাঝে মাঝে আমার মনে হতো এসব সুখী মুহূর্তের স্মৃতিচিহ্ন নয়, আমার আত্মায় বয়ে যাওয়া ঝড়ের স্পর্শময় অমূল্য ধ্বংসাবশেষ। – ওরহান পামুক   সেকেন্ডহ্যান্ড বই তখনো ট্রেন ছাড়তে মিনিটদশেক দেরি। একশ টাকায় সানগস্নাস কিনে সাবিনা যখন আরো সস্তার জিনিস খুঁজছে, তখন পাশের বুকস্ট্যান্ডের সংকীর্ণ তাকে অনিতা সেনের স্মৃতিকথা নজরে পড়ে। বাদামি মলাটের সাদামাটা…

  • কিস্সা বলেন শেহ্রজাদে

    রবিশংকর বল সোফি অ্যান্ডারসনের আঁকা ছবিটার দিকে তাকিয়ে এখন মন খারাপ হয়ে যায় শেহ্রজাদের। উনিশ শতকের মাঝামাঝি কোনো সময়ে সোফি তাঁর ছবিটা এঁকেছিলেন। ছবিটা দেখতে ইচ্ছে না-করলেও বারবার শেহ্রজাদেকে টানে। ওই যৌবন আর সৌন্দর্য, নিজেকে ভুলে যাওয়ার মুহূর্তে দুই চোখ যেমন দিশাহীন নৌকার মতো ভেসে থাকে মাঝনদীতে, অমন দৃষ্টি আর কখনো ফিরে পাবেন না তিনি।…

  • পটেশ্বরী

    শঙ্করলাল ভট্টাচার্য তৃতীয় অ্যালবাম এক অনেকগুলো চিঠি তো লেখা হলো অ্যাদ্দিনে। সারাক্ষণ মনটা কু গায় মারি আঁতোয়ানেতের। শেষ অবধি মেয়েটাকে খুনই করল ভিক্টর! আমি প্রথম দিন থেকে রুখে দিতে চেয়েছিলাম ওদের ঢলাঢলি। কই পারলাম? কী না কী সম্বন্ধ দেখেছি মেয়ের! একটাও মানল? সেই জোর করে ওই চাল নেই, চুলো নেই ভিখিরি ডাক্তারটাকেই ধরে রইল। এত…

  • পটেশ্বরী

    শঙ্করলাল ভট্টাচার্য     দ্বাদশ কিস্তি     পনেরো আমার মৃত্যুর খবরে জওহরলালের মনের কী অবস্থা হলো তা তো আমার জানার সুযোগ হলো না। কালে-কালে তোরা জানতে পারবি, ইন্দু। তখন আমার আত্মপ্রতিকৃতির সামনে দাঁড়িয়ে বলিস; দেখব কীরকম লাগে শুনতে সেসব। হাসছিস? জীবনটা কিন্তু এরকমই, ইন্দু। আমরা সবচেয়ে বেশি জীবনের কথা বলি যখন, তখনই হয়তো মৃত্যু…

  • পটেশ্বরী

    শঙ্করলাল ভট্টাচার্য   দশম কিস্তি   ও যত বলছে ‘আমি ক্ষত রেখে যাব’ আমি হাসছি। সেই ক্ষতেরই যেন আভাস এর পরে পরেই ইন্দুকে লেখা আমার চিঠিতে… একটি অতি অসাধারণ ইংরেজের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। মা হয়তো ওর বিষয়ে তোকে লিখেছে, যাতে কিনা ওর সম্পর্কে তোর ভয়ানক ভুল কিছু ধারণাও গজিয়েছে। সত্যি বলতে কী, ওরকম অপূর্ব, মনে…

  • নদী কারো নয়

    সৈয়দ শামসুল হক   \ ৪৫ \   হরিচরণ নামে যে কেউ একজন জলেশ^রীতে এতকাল ছিল, মানুষেরা যেন ভুলেই ছিল, আজ তার মৃত্যু-সংবাদ পেয়ে সবাই হঠাৎ জেগে ওঠে। হরিচরণের বিষয়ে বাজারে কাছারির মাঠে ইস্টিশানের আড্ডায় কত কথাই না গল্পের ফুলঝুরি হয়ে ওঠে। প্রাচীন কেউ-কেউ বিশেষ একটি কথা স্মরণ করে ওঠে হরিচরণের বাবা রাধাচরণের বিষয়ে। সে-কথা…

  • নদী কারো নয়

    সৈয়দ শামসুল হক \ ৪৩ \   কুসমিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকতে দেখে সোলেমান বলে, কেয়ারটেকার বুঝিলেন তো? বোঝেন নাই? সরকার, সরকার, যাকে কয়। কোম্পানিতে যাকে ম্যানেজার বোলায়। এসবের একবর্ণ আর কানে যায় নাই কুসমির। সোলেমান বকবক করে বকেই চলে। – দ্যাখেন তো, দিদি, কপাল ফিরি গেলো তোমার। আর কোনো ভয়চিমত্মা নাই। তোমার ভালোমন্দ সব…

  • পটেশ্বরী

    শঙ্করলাল ভট্টাচার্য সপ্তম কিসিত্ম   অনেক পরে জেনেছি যে, ১৯০১-এ প্যারিসে এসে পিকাসো নিজের একাকিত্বকে ভরিয়ে তুলতেন ভিখিরি আর বেশ্যা এঁকে। এখনো আকৃতি বিকৃত করে, রূপরেখা ভেঙে নিজের বহুমাতৃক, বহুরূপী রেখাঙ্কন, রেখাঙ্কন সৃষ্টি হয়নি ওঁর। প্রলম্বিত রেখার ওই নির্মাণপ্রবাহ আমারও মডেল অাঁকায় এসে গিয়েছিল। এখন ভাবলে একটু চমকাই কী করে পিকাসোর প্রলেপ পড়ল আমার ছবির…

  • নদী কারো নয়

    সৈয়দ শামসুল হক \ ৪২ \   রাত গভীর অন্ধকারে চারদিকের সত্মব্ধতা হঠাৎ আরো একবার ভেঙে যায়, আবার সেই ধড়াসধস শব্দ ওঠে। পাড় ভাঙনেরই শব্দ কি? ঠাহর হয় না। কন্ট্রাক্টর সাইদুর রহমানের সমুখে সুন্দরী যুবতী হিন্দু বিধবা, কুসমি! মন তাঁর বশে নাই। চোখে তাঁর বিশে^র আর কিছু নাই। কিন্তু ওই যে শব্দটা শোনা গেলো, ওতেই…

  • নদী কারো নয়

    সৈয়দ শামসুল হক   \ ৪১ \   অদূরে ধড়াস ধস্ একটা শব্দ ওঠে, কিসের শব্দ ঠাহর হয় না, ঠাহরের আগেই কন্ট্রাক্টর সাইদুর রহমান চমকে নড়ে ওঠেন, এবং সেটি কুসমি লক্ষ করলো কিনা তাও তিনি ভেবে দেখে ঈষৎ ক্রুদ্ধই হলেন নিজের ওপরে। রাতে এমন শব্দ কত হয়, কত জানা-অজানা পশু শব্দ করে, ডেকে ওঠে, নদীর…

  • পটেশ্বরী

    শঙ্করলাল ভট্টাচার্য ষষ্ঠ কিস্তি ছয় একসঙ্গে যুবতী হয়ে উঠতে উঠতে অমৃতার কতকগুলো দিক ক্রমশ ভাস্বর হয়ে উঠছিল আমার সামনে। নগ্নিকা অাঁকার মধ্যে যেমন প্যাশন ওর, তেমনি আকাঙ্ক্ষা ও আবেগ ওর যৌনতা বিষয়ে। সে-প্রসঙ্গে আসবখন সময়মতো, তার আগে নিশ্চয়ই  ও-ই বলবে ওর প্রণয়ের ইতিহাস। আপাতভাবে যার কোনো শেষ নেই। শুরুটাও যে কোথায়, কখন, আমি হয়তো ঠিক…

  • পটেশ্বরী

    শঙ্করলাল ভট্টাচার্য তৃতীয় কিস্তি এই পরিমন্ডলে আমরা নিশ্চিন্তে চার-চারটে বছর কাটিয়ে দিলাম। এক তরুণ শিক্ষক নিয়োগ করেছিলাম বাচ্চাদের কিছু শেখানোর জন্য ততটা নয়, যতটা ওদের কিছুটা ব্যস্ত রাখতে। সে-সময়ে অমৃতার সাড়ে পাঁচ বছর বয়েস। দুমাস যেতে না যেতেই দেখি দিব্যি হাঙ্গেরিয়ান বলছে আর ছোট ছোট বাক্য লিখেও ফেলছে। সে-সময় রঙ-পেনসিল দিয়ে ছবি অাঁকা ধরেছে। দেখে…