ধারাবাহিক উপন্যাস

  • পটেশ্বরী

    শঙ্করলাল ভট্টাচার্য তৃতীয় কিস্তি এই পরিমন্ডলে আমরা নিশ্চিন্তে চার-চারটে বছর কাটিয়ে দিলাম। এক তরুণ শিক্ষক নিয়োগ করেছিলাম বাচ্চাদের কিছু শেখানোর জন্য ততটা নয়, যতটা ওদের কিছুটা ব্যস্ত রাখতে। সে-সময়ে অমৃতার সাড়ে পাঁচ বছর বয়েস। দুমাস যেতে না যেতেই দেখি দিব্যি হাঙ্গেরিয়ান বলছে আর ছোট ছোট বাক্য লিখেও ফেলছে। সে-সময় রঙ-পেনসিল দিয়ে ছবি অাঁকা ধরেছে। দেখে…

  • নদী কারো নয়

    সৈয়দ শামসুল হক   \ ৩৯ \   মকবুল হোসেনের এই পর্যবেক্ষণ বা একে তার মর্মান্তিক দুঃখই বলি না কেন, এসব নিয়ে পরে কথা বলা যাবে। আমরা একসময়ে তাকে দেখতে পাবো জলেশ^রীর উদীয়মান লেখকদের সঙ্গে টাউন হলে বসতে। বাংলাদেশের এতবড় এত বিখ্যাত এক ঔপন্যাসিক শহরে এসেছে এবং এই শহরেই তার জন্ম, জলেশ^রীর তরুণ ও সাহিত্য…

  • পটেশ্বরী

    শঙ্করলাল ভট্টাচার্য দ্বিতীয় কিস্তি তিন ডাবল ডায়মন্ড, থ্রি অফ স্পেডস, জ্যাক অফ ক্লাবস, কুইন অফ হার্টস, ট্রাম্প… মারি অাঁতোয়ানেত নিজের মনে তাস ছাড়াই ব্রিজ খেলে যাচ্ছেন। থেকে থেকে উঠে গিয়ে চিঠি লিখতে বসছেন। ডিয়ার স্যার… মাই ডিয়ার… ইয়োর অনারেবল স্যার… ম্যাডাম… ডিয়ারেস্ট… চিঠিরও শেষ নেই, রাগে জ্বলছে সেসব চিঠি… কিন্তু অভিযোগ একটাই… ভিক্টর আমার মেয়েটাকে…

  • নদী কারো নয়

    সৈয়দ শামসুল হক   \ ৩৮ \   হ্যাঁ, গান্ধীকে নিয়ে এতবড় একটা অশ্লীল কথা! লোকটার দিকে খরদৃষ্টিতে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে মন্মথ দারোগা। আসলে সে সময় নেয়; বুঝে দেখতে চায় পাকিস্তান হবার পরিস্থিতিতে বর্তমানের বাস্তবতা; এতটাই তার খর সতর্কতা যে, সামান্য গাছের পাতা নড়াটাও পাকিস্তানের প্রসূতি-ভোরে বুঝিবা কোন অর্থ বহন করে, সেটাও নির্ণয় করে নেওয়া…

  • পটেশ্বরী

    শঙ্করলাল ভট্টাচার্য     \ ১ \   এপাশ থেকে ওপাশ হওয়াটাও সমস্যা হয়ে পড়েছে। বলতে গেলে নিরেট অন্ধকার থেকে আলো আর রঙের দিকে মুখ করার মতো। কেউ কি এমন কথা বলেছে আগে যে, মৃত্যু হলো রঙের ছবির ওপর একটা কালো পর্দা পড়া? এই কথাটা অমৃতার এখন মনে হচেছ। পাশ ফিরলেই অমৃতার মনে হচ্ছে, ওর…

  • নদী কারো নয়

    সৈয়দ শামসুল হক   \ ৩৭ \   অর্জুনদের দল থানায় এসে হাঁপাতে হাঁপাতে সংবাদ দেয়, নদীর ঘাটে হিন্দু নারী! মোছলমানের হাতে! দলেবলে তারা ভোগ করিচ্ছে! পাকিস্তানের মাটিতে হিন্দু নারীর ইজ্জত আর নাই! অর্জুনদা পাঠেয়া দিলে থানায় সম্বাদ দিতে। – তুমি কে? – মুই সুগ্রীব। সঙ্গে সঙ্গে মন্মথ দারোগার মুখে খিস্তি ছোটে, শালার শালা রামের…

  • নদী কারো নয়

    সৈয়দ শামসুল হক \ ৩৬ \ গোপালের মা সর্পদংশনে তার গোপালের মৃত্যুটাকেই মনে রেখেছে, সর্পের কথা তার স্মৃতিতে নাই। সন্তানের মৃত্যুটাই কেবল জননীর কাছে সন্তাপ ও সত্যের, কীভাবে তার মৃত্যু জননী ভুলে যায় অচিরে। হাওয়ার ভেতরে তখন কেবল হাহাকার ভেসে থাকে – নাই, নাই, নাই। মানুষের এই আসা আর যাওয়া! জন্মের অনন্য একটিই মাত্র দরোজা,…

  • নদী কারো নয়

    সৈয়দ শামসুল হক   \ ৩৪ \   দাড়িতে মেহেদির রং লাগিয়ে, আয়নায় নিজের মুখখানা পরিপাটি দেখে নিয়ে, হাকিম নেয়ামতউল্লাহ নিচে নামেন। নেমে দেখেন মন্মথ দারোগা অস্থির হয়ে পায়চারি করছে বারান্দায়। বারান্দার নিচেই চমৎকার ঘাসের মাঠ। ভোরের আলোয় ঘাসের সবুজ পাতা ঝকঝক করছে। দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবার কথা, কিন্তু না! নেয়ামতউল্লাহ্র চোখ পড়ে দারোগার ঘোড়াটি…

  • ঢাকা আগমন ও আর্ট কলেজে ভর্তি

    সৈয়দ জাহাঙ্গীর ক্লাস নাইনে পড়ার সময়ই কলকাতায় জাফর ভাইয়ের পার্ল রোডের বাসায় একবার বেড়াতে গেলাম। জাফর ভাই আমাকে একটা নতুন জুতো কিনে দিয়েছিলেন। ওই জুতোর বাক্সের ভেতর সুন্দর কিছু ড্রইং করেছিলাম। জাফর ভাইয়ের চোখে পড়েছিল সেসব। তিনি সেটা মনে রেখেছিলেন। জাফর ভাই ঢাকা চলে আসেন সাতচল্লিশের দেশ বিভাগের পরপরই। কলকাতায় একজন পরিচিত তরুণ মুসলমান লেখক…

  • নদী কারো নয়

    সৈয়দ শামসুল হক \ ৩৩ \   রাতের ঘন অন্ধকার, হারিকেনের দীপ্তিও তার চিমনির বাইরে বিস্তার লাভ করতে পারে নাই। বাঁশবনের ভেতরে হাওয়ার অবিরাম সরসর ধ্বনি। সেই ধ্বনিও এমন প্রবল যে তাকে ঠেলে মইনুল হোসেন মোক্তারের গৃহিণীর কণ্ঠস্বর শ্রুত হতে পারে নাই। এই ভ্যাপসা গরমকালেও সর্বাঙ্গ চাদরে মোড়া ওয়াহেদ ডাক্তার, অন্ধকারে প্রায় বিলীন, সে চাদরের…

  • নদী কারো নয়

    সৈয়দ শামসুল হক   \ ৩২ \   উন্মাদের উন্মাদ! পাগলের সাঁকো কোথায় যে কে নাড়ায়! সাতচল্লিশের দেশভাগ কাল। সেই উন্মাদকালে আকাশে বর্ষণ নাই, মাটিতে ফাটল, আধকোশা স্তিমিত, মানুষেরা চঞ্চল এই মতো যে কোথাও থেকে একটা ঢোলের বাড়ি শোনা যাচ্ছে – গাঁজা ঝাঁই ঝপর ঝপর – নির্ণয় নাই যে কোথায়! এইকালে নদী পেরিয়ে কি কেবল…

  • নদী কারো নয়

    সৈয়দ শামসুল হকসৈয়দ শামসুল হক \ ৩১ \  সেই ওয়াহেদ ডাক্তারের কথা আমরা ভুলি নাই। রাতের জলেশ্বরীর ভুতভুতুম সড়কে কন্ট্রাক্টর সাইদুর রহমানের কেয়ারটেকার সোলেমান এখন বুড়ির চরের পথে, গন্তব্য তার হাফেজ আবুল কাশেম বলরামপুরীর নিবাসে। মনিবের তাগাদা তাকে ধরি আনো। ধরি আনো মানে পারিলে তাকে বান্ধি আনো। হয়, হয়, বান্ধি আনিবারই কাম বটে। এত রাইতে…