ধারাবাহিক উপন্যাস

  • একটি মেয়ে

    আফসার আমেদ ॥ ২৬ ॥ ফ্ল্যাটের গেটে ঢোকার মুখে সেঁজুতির দেখা রবি ব্যানার্জির সঙ্গে। রবি ব্যানার্জি থমকে দাঁড়ায়। ‘কী ব্যাপার, তুমি এতদিন পরে, কোথায় ছিলে?’ ‘এই কলকাতার বাইরে কিছুদিন কাটিয়ে এলাম।’ ‘এখনই ফিরছ?’ ‘এখনই, হাওড়া স্টেশন থেকে ট্যাক্সি ধরে এই নামলাম। – তো বউদি, হৃদয় আছে তো?’ ‘না, ওরা তো নেই। আমার সঙ্গে আর থাকতে…

  • নদী কারো নয়

    সৈয়দ শামসুল হক ॥ ২৫ ॥ মানুষের মন এমন, ভেতরের সব শক্তি দিয়ে শূন্যের ভেতরে সত্য ছবি তৈরি করতে চায়, এমন ছবি যা হাত বাড়িয়ে ছোঁয়া যাবে। নদীর বুকে নৌকো। নৌকোয় পা রাখবেন দেবী। মানবীর ছদ্মবেশে দেবী আজ। এভাবেই দেবী দেখা দেন মানুষের কাছে। তার ভেজা পায়ের ছাপ পড়ে নৌকোর পাটাতনে। পাটাতন তো নয়, জীবন!…

  • একটি মেয়ে

    আফসার আমেদ ॥ ২৫ ॥ একদল সন্ন্যাসিনীর সঙ্গে সে চলেছে সমাজসেবা করতে গ্রাম-গ্রামান্তর পেরিয়ে। একইরকম শাড়ি পরেছে তারা। কণ্ঠে সুন্দর একটা গান গাইছে। পথশ্রমে ক্লান্ত হচ্ছে না। খালি পা,  িস্নগ্ধ নিসর্গ। মানবসেবার গান। কে যেন তাকে বিরক্ত করে। তার সঙ্গে কথা বলতে চায়। গা ধরে নাড়ায়। ‘দিদি, দিদি।’ বুঝতে পারে সেঁজুতি, সে ঘুমিয়ে আছে। কে…

  • নদী কারো নয়

    সৈয়দ শামসুল হক ॥ ২৪ ॥ চা আনতে কন্ট্রাক্টর সাইদুর রহমানের সমুখ থেকে উঠে যায় কুসমি। – আপনে বইসেন খানিক, চা নিয়া আসি। বিস্কুট কি দেমো? তিনি হাত নেড়ে অস্পষ্ট একটা ভঙ্গি করেন, যার অর্থ দিতেও পারো, নাও পারো। সাইদুর রহমানকে আজ গল্পে পেয়েছে। কুসমি তাঁর দিকে খানিক নজর ফেলে দেখে নেয়। মনে হয় অনেকক্ষণ…

  • একটি মেয়ে

    আফসার আমেদ ॥ ২৪ ॥ কালং-এ বাসটি ঠিকঠাক নামিয়ে দিলো। এবার তমোঘœর বাসস্থান খুঁজতে হবে। সামনেই ছিল একটা পান-গুটকার দোকান। সে দোকানের পাটায় স্থানীয় এক মাঝবয়সী মহিলা বসেছিলেন। রাস্তাটা উঁচুতে, বাড়ি-ঘরদোর অনেকটা নিচু পর্যন্ত। তারপর নদী। বস্তির মতো চেহারা। হয়তো এটাকে গ্রাম বলে। মহিলার কাছে এগিয়ে যায় সেঁজুতি। ‘তমোঘœ কোথায় থাকে বলতে পারেন?’ মহিলা বাংলা…

  • নদী কারো নয়

    সৈয়দ শামসুল হক ॥ ২২ ॥ ইতিহাস শুধু মানুষকেই হত্যা করে না, ঘোড়াও ইতিহাসের হাতে নিহত হয়! হ্যাঁ, ঘোড়াও বাদ যায় না ইতিহাসের ধারালো খড়্গ থেকে, কিংবা বন্দুকের গুলি থেকেই। আমরা মানিকগঞ্জের সেই জমিদারবাড়িতে না হয় যাই, সেখানে সেই তিনটি ঘোড়া আমরা একবার এই সুবাদে দেখে লই। বড় শৌখিন নাম ছিল ঘোড়া তিনটির – ঝড়,…

  • একটি মেয়ে

    আফসার আমেদ ॥ ২৩ ॥ দূরপাল্লার বাসটা ছাড়তে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। ঘড়িতে তখন ছটা দশ। জুনের মাঝামাঝি, বর্ষাকাল চলছে। আকাশে মেঘ। বাসটা বর্ধমান শহর ছাড়াচ্ছিল ধিমেতালে। গতি এখন হ্রস্ব। বাসের মাঝামাঝি বাঁদিকে টু-সিটে তারা বসেছে। সেঁজুতি আর আলম। আলমের গায়ের পাশেই। আলমের অস্বস্তি হচ্ছিল, তাকে বোঝায় তার কোনো অসুবিধে হচ্ছে না, আলম আরাম করেই বসুক।…

  • একটি মেয়ে

    আফসার আমেদ \ ২২ \ মা-বাবা বিছানা ছেড়ে কখন উঠে গেছে। কখন সকাল হয়েছে। সেঁজুতি ঘুম থেকে উঠছে না। আচ্ছন্ন অবস্থায় পড়ে আছে। কতদিন পর গ্রামের বাড়িতে এসেছে, সেই আনন্দে বিছানায় শুয়ে আরাম খাচ্ছে। সহজে উঠবে না। শুয়ে-শুয়েই বাড়ির হালচাল সব বুঝতে পারছে। দাদা নবকুমার আজ কোর্টে যায়নি। রূপ বারবার এসে পিসিকে দেখে গেছে। পুকুরে…

  • নদী কারো নয়

    সৈয়দ শামসুল হক \ ২১ \ আজ থেকে নদী তবে আর আমার নয়! এই আধকোশা এতকাল পরে তবে পর হয়ে গেলো। এখন সে সীমান্তের ওপারে! আর, সীমান্তই কাকে বলে? কোনো রেখা তো দৃষ্টিপথে নাই। আছে! র্যা ডক্লিফ সাহেবের টেবিলে বিছানো বাংলার মানচিত্রের বুকে লাল পেন্সিলের দাগ! যেন রক্তধারা! রক্তের রেখার ওপারে এখন আধকোশা। ওপারের ওই…

  • নদী কারো নয়

    সৈয়দ শামসুল হক ॥ ২০ ॥ খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক মকবুল হোসেন – যার এত সাক্ষাৎকার, এত ফটোগ্রাফ পত্রপত্রিকায় বেরোয়, যেন এক খোলা বাগানই সে, যে-কেউ বলে দিতে পারবে কোথায় কোন গাছ, কোন ঝিল, ডালেই বা কোন ও কী কী পাখি, কিন্তু এতেও কি সবটুকু তার উন্মোচিত? – আমরা ধন্দে পড়বো যদি তেমন ভেবে নিই এবং পড়বো…

  • একটি মেয়ে

    আফসার আমেদ ॥ ২১ ॥ সন্ধ্যা সাড়ে ১০টা বেজে গিয়েছিল মেমারির শীতলাতলায় পৌঁছতে সেঁজুতিদের। মা হইচই ফেলে দেয়। বউদি শাশ্বতী বেরিয়ে আসে। মা কাঁদে। কিন্তু তার হর্ষ বেশি। কথার ঝড় তোলে। ‘আরো সকাল সকাল বেরোতে হয়। ট্রেন ঠিকঠাক পেয়েছিলি? ভিড় ছিল নাকি গাড়িতে? আসবি যখন নবর মোবাইলে ফোন করে দিলি না কেন? নব কাজ থেকে…

  • নদী কারো নয়

    সৈয়দ শামসুল হক \ ১৯ \ আধকোশা নদীকে শাসন করবার কী প্রস্তাব আছে মইনুল হোসেন মোক্তারের, সে-বিষয়ে বার লাইব্রেরিতে উপস্থিত উকিল-মোক্তারদের বিশেষ উৎসাহ লক্ষ করা যায় না। তারা মুহূর্তের জন্যে আড্ডার আমেজ থেকে জেগে ওঠে বটে, অচিরে চোখ ফিরিয়ে নেয়। এর কারণও আছে। প্রথমত, উপস্থিত প্রায় সবারই বাড়ি নদী থেকে অনেক দূরে; নদীভাঙনে ব্যক্তিগতভাবে তারা…