স্মরণ
-
ভরা থাক স্মৃতিসুধায় : ইব্রাহিম আলকাজি
ইব্রাহিম আলকাজি আধুনিক ভারতীয় থিয়েটারের স্থপতি। ভারতীয় থিয়েটারের প্রবাদপ্রতিম কিংবদন্তি পুরুষ, থিয়েটার প্রতিষ্ঠানের প্রধান পুরুষ – শিক্ষক, নির্দেশক, ডিজাইনার। ‘দিনের পরে দিন যে চলে যায়’ – সময় যে কারো জন্যে অপেক্ষা করে বসে থাকে না। পৃথিবীতে মাঝে মাঝে এমন কিছু মানুষ আসেন, যাঁরা শুধু মানুষকে দিয়েই যান। তাই তো রবীন্দ্রনাথের ভাষায় আমরা বলতে পারি, ‘তুমি…
-
দূরত্ব
আমরা একে অপরকে প্রায় আঠারোটা বছর ছেড়ে ছিলাম। সবমিলিয়ে আঠারোটা বছর। পঞ্চাশ বছরের দাম্পত্য জীবনের ভেতরে আঠারোটা বছর ছেড়ে থাকা বা দূরে থাকা তো একেবারে চাট্টিখানি কথা নয়। এখন ভাবলে অবাক লাগে, যে-মানুষটিকে বিয়ের আগে থেকেই একদণ্ড ছেড়ে থাকতে পারতাম না, তাঁকে কীভাবে আমি জীবিত থাকতে আঠারোটা বছর না দেখে ছিলাম? বা থাকতে পেরেছিলাম? এসব…
-
আমিনুল ইসলাম : কালদগ্ধ শিল্পপথিক
তর্কে নয়, আলাপে ছিল তাঁর স্বস্তি। আমরা যারা তাঁর সঙ্গে কথা বলতাম উদার প্রশ্রয়ে, কখনো মনে হয়নি তিনি নির্দেশ দিচ্ছেন, মেনে নিতে বলছেন তাঁর বক্তব্য। শিল্পী আমিনুল ইসলাম তাঁর আগের প্রজন্মের গুরুশিল্পী এবং তাঁর প্রজন্মের সতীর্থ থেকে শুরু করে সবার সঙ্গে এক সচ্ছল ভাবাবেগে কথা বলতেন, মতবিনিময় করতেন। আমরা যারা এখন ষাটোর্ধ্ব, আমাদের এই পৃথিবীতে…
-
মুর্তজা বশীরের সঙ্গ
১৯৭৪ সালের জুলাই মাসের এক বর্ষণমুখর দিন, আমি এসেছি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে কনিষ্ঠতম শিক্ষক হিসেবে যোগ দিতে। মুর্তজা বশীর তাঁর বর্ষাতিটা টাঙিয়ে রেখে ঘাড় বেঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন – হু ইজ দিস্? দেবুদা, ওরফে দেবদাস চক্রবর্তী, তাড়াতাড়ি পরিচয় করিয়ে দিলেন – ও অমুক, আজ থেকে আমাদের সঙ্গে বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলো। মুর্তজা বশীর বিশেষ…
-
শামসুজ্জামান খান : বাংলাদেশের আধুনিক ফোকলোরের রূপকার
আমিনুর রহমান সুলতান বাংলাদেশের ফোকলোরচর্চার গুরুত্বপূর্ণ বাঁক বা যুগসৃষ্টির সময় বা বাংলাদেশের আধুনিক ফোকলোরচর্চার সংযোগ সেতুটির সময়কাল বলা যায় বিশ শতকের আশির দশকের মধ্য সময় থেকে। সংযোগ সেতুটি নির্মাণের ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রয়েছে লোকবিজ্ঞানী শামসুজ্জামান খানের। তবে এর আগেও যে আধুনিক ফোকলোরচর্চা বাংলাদেশে হয়নি এমন নয়। মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন, মযহারুল ইসলাম, আবদুল হাফিজের নাম উল্লেখযোগ্য। কিন্তু…
-
সাজেদুল আউয়াল : শ্রদ্ধার্ঘ্য
সাজেদুল আউয়াল – নাট্যকর্মী, নাট্য রচয়িতা-নির্মাতা, চলচ্চিত্রকার, গবেষক ও কবি। সংস্কৃতি ও সাহিত্যজগতে বিচরণ করেছেন দৃপ্ত পদক্ষেপে। তবে বেশির ভাগ সময়ই নেপথ্যের কারিগর ছিলেন তিনি। প্রকাশ্যে আসতে যেন বড্ড সংকোচ ছিল তাঁর। ভালোবাসতেন লেখালেখি করতে। প্রিয় বিষয় ছিল নাটক-চলচ্চিত্র। কিন্তু তাঁর হৃদয়-গভীরে ফুটে ছিল পদ্যের পদ্ম। কর্মক্ষেত্রে ছিলেন নিবিষ্ট শিক্ষক, গবেষক ও নির্মাতা। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের…
-
আনিসুজ্জামানকে স্মরণ
কালি ও কলম পত্রিকার প্রস্তাবক যে-সভা কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয় তাতে আমি আহূত হয়েছিলাম। চিঠিটা এসেছিল আনিসুজ্জামানের কাছ থেকে। কী কারণে মনে নেই আমি তাতে যেয়ে উঠতে পারিনি। আনিসুজ্জামান লিখছেন, তার একটা আলাদা দাম ছিল। অন্তত এটা যে কোনও হেলাফেলার ব্যাপার হতে যাচ্ছে না, কোনও অভিনব স্ফুলিঙ্গ মাত্র, তা নিশ্চিত লেগেছিল। মুরলীধর বসুর কালিকলম-এর কথা শুনেছি,…
-
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস : আনিসুজ্জামানের চোখে
আনিসুজ্জামান আমাদের কালের একজন অসাধারণ সাহিত্যবোদ্ধা। সাহিত্যরুচির দিক থেকে তিনি যেমন নমস্য, তাঁর পঠনের ব্যাপ্তিও বিস্ময়কর। প্রাচীন-মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য থেকে একেবারে সাম্প্রতিক গ্রন্থ পর্যন্ত ছিল তাঁর পঠনের আওতায়। বোধের গভীরতা ও তীক্ষè বিশ্লেষণশক্তি তাঁর রুচি ও পঠনের প্রসারতাকে নিয়ে গেছে এক উচ্চতর মাত্রায়। বিদেশি সাহিত্য এবং অতি সাম্প্রতিক সাহিত্যতত্ত্ব সম্পর্কেও তাঁর পঠন যথেষ্ট ঋদ্ধ। কিন্তু…
-
এক বছরে আনিসুজ্জামান-চর্চা
বাংলা সাহিত্যের বরেণ্য গবেষক, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক আনিসুজ্জামানের (১৯৩৭-২০২০) জীবদ্দশাতেই তাঁকে নিয়ে বিশদ গবেষণা ও চর্চার সূত্রপাত। অকালপ্রয়াত মালিক সোবহানের আনিসুজ্জামান : জীবন ও কর্ম (কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমি, ২০১১)-এর মতো অ্যাকাডেমিক একটি গবেষণা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকেও প্রকাশিত হয় – পার্থসারথী রায়ের ঠিকানা/ আনিসুজ্জামান জীবন ও সাহিত্য (কমলিনী, কলকাতা ২০১৭)। আনিসুজ্জামানকে নিয়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে দুটো…
-
স্বরূপসন্ধানী আনিসুজ্জামান
অভিভাবকতুল্য ড. আনিসুজ্জামানকে হারিয়ে এক শূন্যতা প্রতিনিয়ত যেভাবে আমাদের গ্রাস করছে তা সহজে দূর হবার নয়। আমরা সকলে জানি, ভাষা-আন্দোলনের সময় যখন তাঁর বয়স মাত্র পনেরো বছর, তখন থেকেই তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ এক মানুষ। আমৃত্যু তাঁর জীবনসাধনা, বাঙালিত্বের চর্চা ও জাতীয় সংকটকালে ওঁর ভূমিকা বাঙালি সমাজকে উদ্বুদ্ধ করেছে একটি উদার, সহিষ্ণু, বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে…
-
জলময় মধ্যবঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যাত্রাপথ শত বৎসর পরে অনুসরণ
(দ্বিতীয় পর্ব) নৌকা যখন পতিসর ঘাট ছাড়ল শীতের বেলা তখন প্রায় দুটো। শান্ত সমাহিত জলময় ও তার দু-পারের প্রায় জনহীন প্রান্তর পেছনে ফেলে নৌকো এগিয়ে চললো – ঢেউ ভেঙে ভেঙে সঙ্গে একমাত্র সঙ্গী নৌকার যান্ত্রিক শব্দ। মন তখনো পতিসরের টাটকা ফেলে আসা স্মৃতিতে মগ্ন। এভাবেই চলে ঘণ্টাখানেক পরে নৌকা ভিড়লো সামসাপাড়ার ঘাটে। এবার নৌকা বিদায়…
-
স্মরণে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়
আফগানিস্তানের কাছাকাছি উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের এক রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে উদ্ভ্রান্তের মতো ছোটাছুটি করছেন এক বাঙালি অধ্যাপক। তাঁর উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট ট্রেনটিতে দেশে ফেরা, কিন্তু ট্রেনে ভয়ানক ভিড়, তিল ধারণের স্থানটুকু নেই, ছিল না রিজার্ভেশন। স্যুটকেস নিয়ে লম্বা-চওড়া পাঠানদের ভিড়ে তাঁর তখন রীতিমতো দিশাহারা অবস্থা। তিনি যখন বিপর্যস্ত বোধ করছেন সে-সময় হঠাৎ ট্রেনের জানালা দিয়ে দেখলেন একটি…