স্মরণ

  • আমাদের মিয়াভাই

    আমাদের মিয়াভাই

    আমাদের নয় ভাইবোনের মধ্যে রবিউল ভাই ছিলেন সবার বড়। আমরা সবাই তাঁকে ‘মিয়াভাই’ বলে ডাকতাম। তিনি ছিলেন আমাদের প্রাণভোমরা। তাঁর মধ্যেই ছিল যেন আমাদের সকলের জীবনীশক্তি। আজ তিনি নেই, তাই আমরা যেন এখন জীবন্মৃত। মনে হয় জীবনের সবকিছু অর্থহীন হয়ে গেছে, যেন সব শেষ হয়ে গেছে। তাঁর প্রতি ছিল আমাদের অগাধ ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।…

  • স্থির প্রত্যয়ের পথে এক যাত্রী

    স্থির প্রত্যয়ের পথে এক যাত্রী

    খবর এলো হঠাৎ, আবুল হাসনাত নেই। হাসনাত নেই? তাও কি সম্ভব? স্তম্ভিত বসে থাকি কিছুক্ষণ। মনে পড়তে থাকে এ-বাংলায় ও-বাংলায় আমাদের যাপিত কিছু সময়ের কথা। বাইরের প্রসারের দিক থেকে ভাবলে ভিন্ন ভিন্ন সেই যাপনকালের বিস্তার খুব যে বেশি তা নয়, কিন্তু অন্তত আমার জীবনে তার অভিঘাত অনেকটাই বড়ো হয়ে আছে। মনে পড়ে যাচ্ছে ১৯৭৫ সালে…

  • উপলব্ধির আলোকে আবুল হাসনাত

    উপলব্ধির আলোকে আবুল হাসনাত

    ইদানীংকার প্যানডেমিকজনিত পরিস্থিতিতে জানাশোনা মানুষজনের মৃত্যু যেন নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে উঠেছে। গেল কয়েক মাসে আমি হারিয়েছি বেশ কয়েকজন আত্মীয়, পরিচিত প্রিয়জন, বন্ধুবান্ধব, নানা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সুহৃদ-স্বজন, এ-তালিকায় সামান্য দিন আগে যুক্ত হলো শ্রদ্ধাভাজন আবুল হাসনাতের নাম। তাঁর প্রয়াণের সংবাদ পত্রিকাতে পাঠ করার পর থেকে একটি স্মৃতিময় ভাবনা আমার মনে বারবার ফিরে ফিরে আসছে। মৃত্যুসঞ্জাত কিছু…

  • মাহমুদ আল জামান ও আবুল হাসনাত : এক কাণ্ডের দুই শাখা

    মাহমুদ আল জামান ও আবুল হাসনাত : এক কাণ্ডের দুই শাখা

    আবুল হাসনাতের আগে আমার মাহমুদ আল জামানের সঙ্গে পরিচয়। সত্তরের দশকের প্রথম দিকেই জানতাম মাহমুদ আল জামান কবিতা লিখতেন, লিখতেন ছোটদের জন্যও। এটুকু জানতাম কিশোর বয়সেই দৈনিক বা সাপ্তাহিক পত্রিকায় প্রকাশিত সাহিত্য সম্পর্কে আগ্রহী ছিলাম বলে। তবে মাহমুদ আল জামানই যে সম্পাদক ও শিল্পকলা বিষয়ক লেখক আবুল হাসনাত সেটা জানতে আমার কিছু দেরি হয়েছিল। বাংলা…

  • আবুল হাসনাতের প্রতি শ্রদ্ধা

    আবুল হাসনাতের প্রতি শ্রদ্ধা

    গুরু বলে কারে প্রণাম করবি আমার মন তোর অতীত গুরু, পথিক গুরু, গুরু অগণন  – সুধারাম বাউল দীর্ঘ, সর্পিল সাহিত্যযাত্রা আমার। মেডিক্যালের ছাত্র পথ ভুলে চলে এসেছিলাম সাহিত্যের পাকচক্রে, সাহিত্যকে করে তুলেছি জীবনযাত্রার অনিবার্য অংশ। সেই  পথচলায় কতবার, কত জায়গায় পথ হারিয়েছি। কোনো কোনো বাঁকে নেপথ্যে শুনেছি কে যেন বলছে – ‘পথিক তুমি কি পথ…

  • পর্দার অন্তরালের মানুষ হাসনাতভাই

    পর্দার অন্তরালের মানুষ হাসনাতভাই

    হাসনাতভাইয়ের সঙ্গে কবে প্রথম আলাপ হয়েছিল এখন আর মনে করতে পারছি না। তবে লেখালেখি নিয়েই যে সে-আলাপটি হয়েছিল তা অনুমান করতে পারি। সে- সময়টায় আমি অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে দৈনিক সংবাদের সম্পাদকীয় পাতায় প্রায়ই লিখতাম। তিনিই বললেন তাঁর সাহিত্য সাময়িকীতেও লিখতে। সেভাবেই শুরু। এরপর তাঁর পাতায় বাংলাদেশের বাজেট, কৃষি, দারিদ্র্য, রবীন্দ্রনাথ, অমর্ত্য সেনসহ কত বিষয়েই না…

  • আবুল হাসনাত কিংবা মাহমুদ আল জামান

    আবুল হাসনাত কিংবা মাহমুদ আল জামান

    এ কেমন আকাল! এ কোন করোনাকাল! অনাদি অনন্ত অক্সিজেন আমাদের শ্বাসকষ্ট ঘোচাবে না? একটুখানি শ্বাসকষ্ট নিয়েই হাসনাতভাইকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল, তিনি হাসপাতালে থাকতে চাননি, বাসায় ফিরতে চেয়েছেন। বাসায় ফেরা হয়নি; তবে তাঁকে হাসপাতালেও আর যেতে হবে না। তাঁকে যে যেতে হবে না – এটাও তো একটা ভালো খবর। টোয়েন্টি টোয়েন্টির মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত…

  • কবি ও সম্পাদক আবুল হাসনাত

    কবি ও সম্পাদক আবুল হাসনাত

    কবি মাহমুদ আল জামান নামটি ছদ্মাবরণ হলেও খুব কি অচেনা? নিশ্চয় নয়। নিভৃতচারী এই কবিকে ছদ্মনামেই চেনে বাংলাভাষার কাব্যবিশ্ব। অপরদিকে আদর্শবান এক সাহিত্য-সম্পাদক, যিনি আবুল হাসনাত নামে অধিক পরিচিত। অত্যন্ত বাক-প্রমিতি, নির্মোহ ও নিরপেক্ষ মননের এক অসাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি দেশের কবি, লেখক, সাহিত্যিকদের মনে স্থায়ী আসন গড়ে নিয়েছিলেন সগৌরবে। ফলে পোশাকি নামটি পরিচিতি পেয়েছে…

  • সৃষ্টি-সন্ধানী আবুল হাসনাত

    সৃষ্টি-সন্ধানী আবুল হাসনাত

    আমৃত্যু আবুল হাসনাত স্বভাবে ছিলেন নিভৃতচারী এক কর্মযোগী। তাঁর বহুপল্লবিত সৃষ্টিশীল সুকৃতি ও উত্তম সম্পাদনা সারস্বত সমাজে ক্রমশ সুখ্যাত হয়ে ওঠে। তাঁর মতো তন্নিষ্ঠ, পরিশ্রমী, পরিচ্ছন্ন সাহিত্য সম্পাদক বরাবর এদেশে বিরল। প্রকৃত সাহিত্য-শিল্পের নিপুণ সমঝদার ছিলেন এই স্বল্পবাক মানুষটি। প্রকাশযোগ্য লেখা নির্বাচন তিনি নিয়ত যত্নশীল পাঠে নির্ধারণ করতেন। অধ্যবসায় থেকে তিনি অর্জন করেন নিজস্ব ধীশক্তি।…

  • বিদায়ব্যথার ভৈরবী

    বিদায়ব্যথার ভৈরবী

    আবুল হাসনাতকে আমি বরাবর ভাই বলতাম, তিনি বলতেন বন্ধু। যদিও বয়সে আমি ছোট, তিনি বরাবর ‘আপনি’ এইভাবে সম্বোধন করতেন, বলেকয়েও তাঁকে দিয়ে ‘তুমি’ বলাতে পারিনি। প্রথম পরিচয় ১৯৭২ সালে, মুক্তিযুদ্ধের পর পুরানা পল্টনে ছাত্র ইউনিয়নের নতুন কার্যালয়ে। আমরা তখন ব্যস্ত জয়ধ্বনি এই নামে একটি ট্যাবলয়েড সাইজের কাগজ ছাপাতে। প্রায় প্রতিদিন বিকালে এখানে আসা হয় অভিন্নহৃদয়…

  • মৃত্যুঘোর : আমাদের সব গোলমাল হয়ে গেল হাসনাতদা

    মৃত্যুঘোর : আমাদের সব গোলমাল হয়ে গেল হাসনাতদা

    কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় তাঁর বিখ্যাত ‘কেন?’ কবিতায় এই বাক্যগুলো লিখেছিলেন – কেন অবেলায় যাবে? বেলা হোক, ছিন্ন করে যেও সকল সম্পর্ক। যেন গাছ থেকে লতা গেছে ছিঁড়ে একটি বিষণ্ন লোক থাকে যেন হাস্যময় ভীড়ে কেন অবেলায় যাবে? বেলা হোক, ছিন্ন করে যেও সকল সম্পর্ক। এই কবির মতোই, তিন অভিন্নহৃদয় বন্ধু অবেলায় পরপর চলে গেলেন। প্রথমে…

  • কয়েকটি সাক্ষাতের স্মৃতি

    কয়েকটি সাক্ষাতের স্মৃতি

    হাসনাতভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় মস্কোয় ১৯৮৬ সালে। বোধ করি ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে – শীতের ঠান্ডা তখনো পুরোমাত্রায়। গণসাহিত্যের সম্পাদক হিসেবে তাঁর নামের সঙ্গে আমি পরিচিত ছিলাম, কিন্তু সরাসরি সাক্ষাৎ সেই প্রথম। মস্কোয় তখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হয়ে এসেছেন সৈয়দ নাজমুদ্দীন হাশেম। তাঁরই বাসভবনে এক সন্ধ্যায় ডাক পড়ল। সেখানে এর আগেও বারকয়েক গিয়েছি। তিনি…