অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত

  • কলগার্ল

    কলগার্ল বুদ্ধকে দিয়েছে তার আজকের দিনের উপার্জন। কারুণিক সঙ্গে-সঙ্গে তাকে দেখালেন  সমস্ত ভুবন জুড়ে ব্যাপ্ত এক অনন্তনাগের ফণায় ফণায় জ্যোৎস্না সমবিতরিত হয়ে আছে। অথচ দু-গজ দূরে ওঁৎ পেতে রয়েছে বৈমাত্রেয় ভাই-টাই – যাকে বলে আত্মীয়স্বজন – তাদের নগদ পাওনা লুফে নেবে ব’লে; অনন্তনাগের তুলনায় এরা ছোটখাটো সাপ, এদের ফণায় অন্ধকার টায়টায় হয়েছে বণ্টন। দু-চারজন তবু…

  • হে বন্ধু আমার

    শেষবার তোমার কোলে মাথা রেখে কেঁদেছিলাম মুজিব যখন মৃত্যুদণ্ড এবং প্রবাসে। এরপর ফিরলেন তিনি স্বদেশে, সংক্ষিপ্তভাবে উদ্যাপিত হয়ে নিহত হলেন যেই, কান্নার বদলে ইতিহাসে পর্যালোচনায় খুব ডুবে গেছি, এবং দেখেছি অন্যান্য অনেক চোরা খুন; তথাপি ভেঙে পড়িনি, সৃজিত চৌধুরী আর জাকারিয়াদের বাঙালির আত্মপরিচয় বিষয়ক সেমিনারে এমনকি কূটতার্কিকের ভূমিকা নিয়েছি কিংবা নর্মদা নদীর সংরক্ষণে যে-নারীটি ব্যস্ত…

  • মহাপ্রস্থান

    সরস্বতীর বরপুত্রেরা বিদায় নেবার আগে ভাবতে বসেন শেষযাত্রায় কারা তাদের দেহ বহন করবে। সহসা দেখি আনিসুজ্জামান এভাবেই উপযুক্ত শ্মশানযাত্রীদের অপেক্ষায় নির্নিমেষ তাকিয়ে আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাশফুলের প্রহর এলেই আমার দিকে সুস্মিত তাকিয়ে চলে গেলেন আমার বন্ধু অ্যাকাডেমিক অনুসন্ধিৎসায়।

  • হে বন্ধু আমার

    শেষবার তোমার কোলে মাথা রেখে কেঁদেছিলাম মুজিব যখন মৃত্যুদণ্ড এবং প্রবাসে। এরপর ফিরলেন তিনি স্বদেশে, সংক্ষিপ্তভাবে উদ্যাপিত হয়ে নিহত হলেন যেই, কান্নার বদলে ইতিহাসে পর্যালোচনায় খুব ডুবে গেছি, এবং দেখেছি অন্যান্য অনেক চোরা খুন; তথাপি ভেঙে পড়িনি, সৃজিত চৌধুরী আর জাকারিয়াদের বাঙালির আত্মপরিচয় বিষয়ক সেমিনারে এমনকি কূটতার্কিকের ভূমিকা নিয়েছি কিংবা নর্মদা নদীর সংরক্ষণে যে-নারীটি ব্যস্ত…

  • শুভেন্দু শোনো

    অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত জীবনানন্দ সভাঘরে তোমায় ডেকেছি সমাদরে তারপর ভিড় হতেই দুজন বসেছি বারান্দায় শুভেন্দু শোনো, এছাড়া আর আমাদের কোনো তীর্থ নেই।

  • তবু বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়

    অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত খুব সম্ভব মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে তাঁর খিদে পেয়েছিল খুব, বললেন : ‘এসো, সেরে নিই প্রাতরাশ’, সঙ্গে-সঙ্গে শিষ্যেরা জাল ফেলে ধরল একশো তেপ্পান্নটা মাছ।   হ্রদের কিনারে কাঠকয়লার অাঁচে মাছ ভাজা হলো ভয়ানক পরিপাটি, চেটেপুটে খেল নির্বাচিতেরা, আর যারা ভাজা মাছ উলটে খেতে জানে না এই রকমের হাজার পাঁচেক আরো।   সেন্ট…

  • সেতুপুরুষের মৃত্যু  

    সেতুপুরুষের মৃত্যু  

    কী দেখলে তুমি রৌদ্রকঠিন হাওয়ার অট্টহাসি দুহাতে ছড়িয়ে দিয়ে নিষ্ঠুর মৃত্যুর প্রেতসেনা মাঠে মাঠে বুঝি ফিরছে? ফিরুক, তবু তার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়ার লাবণ্য তুমি একবারও দেখলে না?   এক লহমায় ঠাহর করা যায় উত্তরগর্ভ এই প্রশ্নের প্রণেতা নীরেন্দ্রনাথ এক সপ্রতিভ স্বরায়ণে আমাদের মেসমেরাইজ করে দিতে জানেন। সত্যের সৌজন্যে কবুল করতেই হয়, একই অনুষঙ্গে ‘কৃষ্ণচূড়া কৃষ্ণচূড়া এখনও…

  • নীল ধুতুরা

    যেন এ অবুঝ তারুণ্য কারো চোখে না পড়ে সারা চোখ মুখ ঢেকে রাখি শুধু কালো কাপড়ে কেউ কেউ ভাবে আতঙ্কবাদী, শেষে যেই দ্যাখে কোনো-কিছু আর বদলে দিই না, ক্ষমা চেয়ে যায়, এমন সময় যখনই বৃষ্টি আঙিনা ভেজায় তোমার কাছেই আশ্রয় নিতে করেছি কামনা, পৌঁছুতে গিয়ে আবার আরেক সতর্কপনা যদি তুমি ভাবো তোমাকে চাইতে এসেছি আবার…

  • তিউনিশিয়ায়

    অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত এ-যাত্রায় সঙ্গ দিয়েছিল এক পশলা দাম্পত্য কলহ মিটে গেছে তাদের ভিতরে; অন্যদিকে, তিউনিশিয়ায়, যেখানে রয়েছি, সেইখানে আরব চৈতালি জন্ম নিয়ে ক্ষয়ে গেছে, একটু আগেই দুই ভাই অকথ্য ভাষায় এ ওকে লাঞ্ছিত করে শেষে হননের প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে কোথায় যে গেল; এইবার এসব ঘটনা দুই দিকে মার্জিনের মতো রেখে দিয়ে কবিতা লিখার অবকাশ উঠে এলো,…

  • জয়ের সঙ্গে

    অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত   জয়ের সঙ্গে অসমাপ্ত দেখা হলো নজরুলের পুরস্কার তার হাত থেকে নেওয়ার সময়, সুচিন্তিত তার ভাষণে ধর্মসমন্বয়ে আমার ভূমিকা নিয়ে প্রতিটি কথা মণিমুক্তায় খচিত ছিল।   কমিটি থেকে সদস্যেরা সবাই যখন বিদায়োন্মুখ, দুরুদুরু কাঁপছিল বুক জয় কি আমার সঙ্গে কোনো অন্তরঙ্গ কথা বলবে? হঠাৎ দেখি ভিতরঘরে বাগেশ্রী রাগ নিয়ে কিছু কথা বলল  …

  • রায়নার মারিয়া রিলকে – পুনর্বার

    রায়নার মারিয়া রিলকে – পুনর্বার

    পূর্বাভাস : অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত প্রাক্কথন : শুভরঞ্জন দাশগুপ্ত কবিতার অনুবাদ : সমর রায়, সুনন্দা বসু ও শুভরঞ্জন দাশগুপ্ত     পূর্বাভাস সদ্যই আমার একটা গোটা দিন রায়নার মারিয়া রিলকের সান্নিধ্যেই কেটে গেল। ভোরের দিকে মিউনিখের একটি বিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েদের কাছে কবির জন্মশহর প্রাগে সংখ্যালঘু জার্মান ভাষাভাষী সম্প্রদায়ের বিচ্ছিন্নতার মাঝখান থেকেও স্বকীয় তাঁর কাব্যভাষার স্ফুরণের কথা শোনাতেই…

  • শিক্ষানবিশ

    অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত   ঘড়িতে দম দিতেই শিখিনি, কবুল করি এটা করতে গিয়ে চিরটাকাল আমার মধ্যে ছিল গড়িমসির প্রভূত বিকিকিনি।   পিন্টু সেবার জামশেদপুর থেকে তালিম দিয়েছিল আমায় ঠিকই, কিন্তু লিখে দিয়ে যায়নি হায় অঙ্গুলি ঘোরানোর স্বরলিপি   অনেকটাই রুদ্রাক্ষের মতো বিবর্তমান স্রোতের সেই লহরী, আমিও তাই তীর্ণ অভিমানে অচল করে দিয়েছি সব ঘড়ি।   কিন্তু…