অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত
-
দুটি কবিতা
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত অনন্তের স্তনবৃন্তে অনন্তের স্তনবৃন্তে শরণার্থী এক শিশু ঘুমিয়ে রয়েছে, ভূমধ্যসাগরে ওরা দুইজন একই নৌকায় ভেসে আছে, ইটালির দিকে ওই মগ্নতরী দোলে; শিশুটির মা নেই, অনন্ত তাকে দুধ দেবে বলে এক অপ্সরীর কাছে একটি স্তনযুগ ভিক্ষা চায়। খেলতে নামলে কালো ব্যাজ পরে নিয়ো তথাপি তোমায় খেলতেই হবে, দুপুরে আজ যদিও…
-
অনাবাসী যদি অনুবাদ করে
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত তুলসীতলার আজলকাজল মায়ামদির নিরাপত্তা থেকে একবার বেরিয়ে পড়লে ইহমানুষের কপাল থেকে বাস্ত্তদেবতার আশীর্বাদ চিরতরে অবলুপ্ত হয়ে যায়, তার বরাতে তখন চলতে থাকার চালচিত্তির ছাড়া অন্যতর কোনো বিধিলিপি আর অবশিষ্ট থাকে না। তখন থেকেই সম্ভবত শুধুমাত্র ভাষাই হয়ে ওঠে মানুষের একমাত্র আবাসন। এই মানবদরদি বীজমন্ত্র, সংবেদী সুধীজন ভালো করেই জানেন, স্বয়ং দার্শনিক মার্টিন হাইডেগার…
-
অনাবাসী যদি অনুবাদ করে
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত তুলসীতলার আজলকাজল মায়ামদির নিরাপত্তা থেকে একবার বেরিয়ে পড়লে ইহমানুষের কপাল থেকে বাস্ত্তদেবতার আশীর্বাদ চিরতরে অবলুপ্ত হয়ে যায়, তার বরাতে তখন চলতে থাকার চালচিত্তির ছাড়া অন্যতর কোনো বিধিলিপি আর অবশিষ্ট থাকে না। তখন থেকেই সম্ভবত শুধুমাত্র ভাষাই হয়ে ওঠে মানুষের একমাত্র আবাসন। এই মানবদরদি বীজমন্ত্র, সংবেদী সুধীজন ভালো করেই জানেন, স্বয়ং দার্শনিক মার্টিন হাইডেগার…
-
দাহ
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত প্রায় প্রত্যেকে চুলিস্নতে দেবে বলে এনেছিল কাঠ, অমিতেশ কোথা থেকে নিয়ে এসেছিল প্রিয়ঙ্গুশাখা, অরম্নণেশ এনেছিল কাকডুমুরের একখানি ডাল সুগন্ধে আমোদিত, আগুনে আমায় সেঁকবার মুখে আমি বলে উঠলাম : ‘কোথায়, তোমরা শিশুগাছ থেকে মঞ্জুরি আনোনি তো, তার ভালো নাম শিংশপা ফুল, কপিল বর্ণ তার, আরেকটি নাম ভস্মগর্ভা, ভস্মাবশেষ থেকে ছেঁকে নেয় সে তো দিব্য…
-
ইস্ট সী, পোল্যান্ড, ২০১৪
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত সিন্ধুমরালের ডাক নবজাত শিশুর কান্নার সঙ্গে মিশে গিয়ে তৈরি করে নতুন সিম্ফনি সমুদ্রকিনারে আমি লেখার কেবিন থেকে দেখি স্নানার্থীরা জলের ভিতরে অকাতরে মজে গিয়ে পুনর্বার সৈকতে তাদের নিজ-নিজ অবসরচর্চার ঝুপড়িতে ঢুকে যায়, ইসাবেল আলেন্দের বই পড়ে, পড়তে-পড়তেও করুণামিশ্রিত ব্যঙ্গে আমাকে অবলোকন করে। এমন সময় বেলাভূমির বিস্তীর্ণ বালুকায় ভূমিষ্ঠ নবজাতক কঁকিয়ে…
-
কেঁপে-ওঠা
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত শেষ-মিনিট-টিকিট পকেটে অদূর পাল্লার প্লেনে যেতে-না-যেতেই অকল্যাণের শব্দে কেঁপে উঠি। যেই গেছি গোরখপুর থেকে বারাণসী শুভার্থীর ছদ্মবেশে আমায় অস্পষ্ট লোক দুটি ডেকে বলল মহম্মদ রফি আর নেই। একবার ভিয়েনা থেকে ডালহৌসি স্কোয়ারে ফিরে আসবার মুখে শোকসভা ভেসেছে জোয়ারে, পরলোকে সুরশিল্পী হারবার্ট ফন কারায়ান। ঘরকুনো আছি তাই। নিতান্ত যেতেই যদি…
-
বিষয়বদল
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত শিল্পসরস্বতীর নির্দেশে ঝাউ জোনাকিদের নিয়ে সেমিনারের তোড়জোর চলছে এমন সময় অদূর ধুবুলিয়ার ক্যাম্পে মোকাম্মেল তানভীর আর এপার-বাংলা থেকে তাঁর সহযোগী সুশীল সাহা এসে হাজির তাঁরা তুলে রাখছেন দেশবদলের শামিল মানুষজনের কান্না এই মুহূর্তে শাশবতের প্রকল্পে ঘোষিত জোনাকিদের আমি কিছুতেই অন্তর্গত করে নিতে পারি না জোনাকিরা এখনো দারুণ…
-
একটি বিনতি
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত (গৌরীশংকর দে প্রিয়বরেষু) চড়ুইভাতির ছলে আমাদের নিয়ে গিয়ে ডেকে নিভৃতে চিনিয়ে দিলে বেড়াচাঁপা চন্দ্রকেতুগড়, তখনও বুঝিনি কিন্তু আমাদের নিজস্ব শিকড় ছিন্ন করে দিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি নির্বিবেকে আসলে কি এগিয়ে চলেছি, নাকি ধ্বংসের গরজে ভুলে গেছি আমাদের সমবেত আত্মপরিচিতি, হে বন্ধু, তোমাকে যারা সমীপে জেনেছে তারা বোঝে উত্তরাধিকার মানে আমাদেরই স্মৃতির…
-
না-ছুঁয়ে বলা
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত থাকে শুধুই আকাশি দূর – যে-নারী তার শাঁখাসিঁদুর নবোঢ়া নাম ঘুচিয়ে দিয়ে ছুঁল আমার কাঁধ, কনুই, কী করে তাকে আমিও ছুঁই! তাকে না ছুঁয়ে বলেছিলাম : থাকে শুধু এ হৃদয় জুড়ে আকাশি দূর বোরোবুদুর যেখানে কিনা একের পরে আরেকজন বুদ্ধ এসে কী ভালোবেসে ওষ্ঠাধরে জ্যোৎস্না জ্বেলে শূন্যতার আরতি করে তার…
-
তোমার নাগকেশর
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত অনেক খুঁজে ফুটপাতের দোকানে পেয়ে যাই তোমার ‘নাগকেশর’ জীর্ণ মলাট, উইপোকারা এসে আমার প্রিয় কবিতাগুলি থেকে মুছে দিয়েছে দু-তিনটি অক্ষর ঠাকুর দেখতে গিয়েছে কারা সপ্তমীতে শ্রাবণধারায় ভেসে – অন্যদিকে কবিরা আজ ব্যস্ত আছে তোমার অনুল্লেখে একমাত্তর আমিই বুঝি পিছুটানের অাঁজলকাজল মেঘে তোমার বেঁচে-থাকার পথের স্টেশনগুলো গুনতে-গুনতে চলি; নদীয়া আর বরানগর, বনহুগলি, হিন্দুস্থান পার্ক…
-
দুটি কবিতা
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত অজ্ঞেয় এবার যে-নৌকো এসে কূলে ভিড়ল আমি জানি ফেরার উজানি স্রোতে আমি তার একাকী সওয়ার। লোডশেডিংয়ের মোম জ্বেলে ধরে লক্ষ করি তার মাপ অবিকল আমারই দেহের সম্পূরক। তবে কি কফিন সেটা? অথবা কাঠের জামা বুঝতে পারি না। গলুইয়ে যে বসে আছে সে কি অন্ধ নাকি তার চোখে বাঁধা আমারই কাফন? আমি তার জায়গায়…
-
অমূর্তের সম্ভাবনা
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত ভাবতে পারা শক্ত যে, বছর কয়েক আগেও এ-ধরনের বিতর্কের শামিল হতে হতো আমাদের। কেননা পেশাদারি রঙ্গমঞ্চের একচেটিয়া আধিপত্যের জমানা কবেই তো নিরস্ত্র হয়ে গিয়েছিল। সুতরাং রবীন্দ্র-নাট্যের মঞ্চোপযোগিতা নিয়ে সংশয় উত্থাপনের দাবি ক্রমশই ক্ষীয়মাণ হয়ে এসেছিল। ফলত তার স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিয়েই রক্তকরবীর মতো নাটক কলকাতার প্রোসিনিয়াম ঋদ্ধ ও বিনোদনময় করে তুলতে পেরেছিল, যেজন্য অবশ্যই শম্ভু…