আহমেদ মুনির
-
যাত্রা
ভোর নিয়ে জেগেছে পাহাড় বাদামি শূকরছানা পড়ে আছে চোয়ানির উচ্ছিষ্ট ভাতের পাশে হলুদের সত্মূপ পার হয়ে আসে আলো নতুন বাসার খোঁজে এই পাহাড়ের কাছে এতদিন পর রেডলেডি পেঁপের বাগান সারি সারি মাচাঙের ঘর কয়েকটা থুরং চিৎ হয়ে পড়ে আছে। এখানে আসিনি আগে, নাকি আগেও এসেছি বহুবার ঝরনায় লাগানো সরু বাঁশনল টুপটাপ জলে ভিজে ওঠে মন।…
-
মোমের আলোয়
আহমেদ মুনির জ্বলন্ত সলতেসহ মোমবাতি খুব সহজেই ধরা যায় যখন আলোর প্রয়োজন নেই এমনকি তখনো লোকেরা নিজের মোম নিছক অভ্যাসবশত জ্বালায়। একাধিক মোমদানি রয়েছে যাদের গাঢ় মোমের গলে পড়া দেখতে দেখতে তাদেরও কি একঘেয়ে লাগে? তবু মোমবাতি, বিশেষত লাল আর সাদা রঙে কিবা আসে যায় হোক সে কালো, চকোলেট বা বাদামি মানতের…
-
যেখানে হলো না যাওয়া
আহমেদ মুনির যেখানে হলো না যাওয়া, তারই পথ ধরে অবিরাম যাত্রা আমাদের মাঝে থেমেছি বিরান গ্রামে ডাকঘরে ফেলেছি হলুদ খাম ঠিকানার ঘর তবু ফাঁকা ভুলে গেছি সবই কোন বাড়ি প্রাপকের নাম। আমরা যেখানে যাব, মানে যেতে চাই অথচ কখনো হবে না যাওয়া; এই সত্য মৃত কুমিরের মতো পড়ে আছে পথে পথে পথে তার সাদা হাড়…
-
শ্রী শ্যামাচরণ কবিরাজ ভবন
আহমেদ মুনির হাফসাকে নিয়ে মাঝে মাঝে সমস্যায় পড়ি আমি। ওর সঙ্গে কোন অভিজ্ঞতাটা বাস্তবে ঘটেছে আর কোনটা স্বপ্নে, সেটা গুলিয়ে ফেলি। যেমন জেলরোডের ঘটনাটা বাস্তবে ঘটেছিল কিনা আমি নিশ্চিত নই। বছরখানেক আগে হবে। এক সন্ধ্যায় পাবলিক লাইব্রেরি থেকে বেরিয়েছি। ফুটপাতের এক কোণে ভ্যানের ওপর তালের ডাবের স্তূপ। নিপুণ দক্ষতায় তালশাঁস কেটে দিচ্ছিল ভ্যানওয়ালা। পেছন থেকে…
-
কোয়াসিমাদোর বিলাপ
আহমেদ মুনির কত দূরে ওই স্মৃতির নোতরদাম তবু তার ঘণ্টাধ্বনি শুনে এসমেরালদা তোমাকেই মনে পড়ে। জলা আর জঙ্গলের এই প্রাগৈতিহাসিক দেশে তোমাকে ভিখুর মতো কাঁধে নিয়ে হাঁটি। না, তোমাকে নয় সে এক অনড় মাংসপি- জন্মকুঁজ দেহের ভেতরে তবু দেহের অধিক। কবরেও যেন যাবে একসঙ্গে যেন মালিকের সঙ্গপ্রিয় পোষা পাখি। নাকি এই কুঁজ বিস্মৃতির ধুলো…
-
জেল রোডের প্রেমগীতি
আহমেদ মুনির কাল রাতে নিজেরই শরীর ছেড়ে হেঁটে গেছি আমি জেল রোড ধরে মনে পড়ে আমানত শাহ, বদরপাতি; সরু গলি বেয়ে বয়ে গেছি রিকশায় চড়ে উড়ে গেছি নাকি আনমনে একা হেঁটেছি কেবলি; ভুলে গেছি স্বপ্নদৃশ্য, তবু মনে আছে সুগন্ধি দোকান, সারি সারি আতরের শিশি সাইনবোর্ডের নির্ঘুম অক্ষর এখানে আতর মেলে খাঁটি একনম্বর। কাল রাতে অচেনা…
-
গোলাপ ও মোহনলাল
আহমেদ মুনির মোহনলাল এই পাড়ায় থাকত। ১৭ বাই সি হলুদ চারতলা বিল্ডিংয়ের নিচতলায়। কিন্তু সে-ব্যাপারে নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারে না। এখন সোবহান সাহেবকে জিজ্ঞেস করলে তিনি কপাল কুঁচকে পাল্টা প্রশ্ন করেন – ‘কোন মোহনলাল? পনেরো বছর ধরে এই বাড়িতে আমরাই থাকি। কই এমন নামে এখানে কেউ ছিল বলে শুনিনি তো।’ লিচুবাগানের গলিটা সরু…
-
যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে ভেবে
আহমেদ মুনির এক যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে ভেবে কতকাল আগে গান গেয়ে উঠেছিল পাখি মাটি খুঁড়ে দেখি তার তীরবিদ্ধ শরীরে এখনো রয়ে গেছে সুরের বেদনা। এই বেদনার পথ ধরে হেঁটে গেছে দেশান্তরী মানুষের দল এক যুদ্ধ থেকে আরো এক যুদ্ধে যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে ভেবে। স্মৃতির আপেল তার বীজ ছড়িয়েছে ঝিরির কিনারে ঝিরির…
-
কোথায় থাকি আমি
আহমেদ মুনির সকলে যখন ফিরে আসে কাজ শেষে দিনের তাঁবু থেকে রাতের তাঁবুতে যায় বউকে জড়িয়ে ধরে ঠান্ডা হয় বেলের শরবত কিংবা চা খায় রাতের সংবাদ শোনে তখন কোথায় থাকি আমি? বউকে জড়িয়ে ধরা লোকজনের ভিড়ে শরবতের দোকানে, চায়ের আড্ডায় কিংবা টেলিভিশনের সামনে সর্বত্রই লোকে আমাকে দেখেছে আমিও দেখেছি তাদের ভাত খেতে বসে…