তমিজ উদ্দীন লোদী

  • মানুষের কলকব্জাগুলো নড়ছে 

    এয়ার ট্রেনের অপেক্ষায় বসে আছি রাত জিরো আওয়ার নির্দেশ করছে মারিজুয়ানার গন্ধে বাতাস ভারি হয়ে আছে অদূরে তরল গরল হয়ে নামছে যেন লাভা গলে পড়ছে জ্বালামুখ থেকে মানুষের কলকব্জাগুলো নড়ছে  অবিকল যন্ত্র কিংবা যন্ত্রমানুষের মতো যেন আগুনে গলিয়ে নিয়ে  তৈরি হয়েছে সার সার মানুষকাঠামো  ঠান্ডায় জবুথবু, স্থির  অথচ ভেতরে হুলস্থূল, অস্থির!

  • কবির আত্মকথন

    এখনো মনে হয় কেউ না কেউ আছে কোথাও না কোথাও নিরিবিলি পড়ছে আমার কবিতা শিল্প-খোঁজা, আনন্দ-উদ্বেল তরুণ কি তরুণী বুঁদ হয়ে আছে, জগতের সকল নেতির মাঝে ব্যতিক্রম ওরা আছে, প্রবল নাদ ও ঢাকঢোল পিটানোর মাঝে ওরা মজে আছে, যেন দূর থেকে হাসছেন ঠাকুর। ভাগ হয়ে যাওয়া ব্রহ্মাণ্ডের বুকে ওরা গাইছে মানবিক গান যেন রাশি রাশি…

  • দহনের চেয়ে বড় নয় বাহ্যিক আগুন

    আমার দুয়ার থেকে উড়ে যায় কত যে ফাগুন জানি দহনের চেয়ে বড় নয় বাহ্যিক আগুন খসে পড়ে উল্কার মতন ভেতরের তোলপাড়, প্রাণশক্তি, প্রাণের স্পন্দন রাত্রি আর দিনের শপথ কিভাবে ভঙ্গুর হয় উপছায়া, পঙ্কিল দ্বৈরথ ধ্বস্ত হয় ‘মূক অন্ধ মৃত্তিকার স্তর’ সারসার লাশবাহী বিমূর্ত কবর অতঃপর তুমি যাবে বৃন্দাবনে? আকস্মিকে পাড়ি দেবে নির্বাণ সন্ধানে? কিংবা যাবে…

  • শহিদ টিলা থেকে উড়ে যায় বিষণ্ন পাখিরা

    শহিদ টিলা থেকে উড়ে যায় বিষণ্ন পাখিরা আর লাল মাটি থেকে ওঠে ফসিলের ঘ্রাণ পিচ থেকে কালো ভাপ ওঠে কয়লার গুঁড়োগুলো ছড়িয়ে যায় ঠান্ডা বাতাসে উত্তরাধুনিক কবি খোঁজে জাদুবাস্তবতার তুষ আগুন দেবে বলে বিদুর সুদূর হয়ে বসে থাকে পান্থজনেরা রক্ত-ঘাম পড়ে থাকে পারদখসা আয়নার ভেতর বিদুষক ভাঁড়ের মতো তবু যাচ্ছে দিন যতোই জমা হোক আত্মত্যাগের…

  • আমাদের তখন খুব ইচ্ছে হতো গান গাইবার

    আমাদের তখন খুব ইচ্ছে হতো গান গাইবার। কিন্তু গান তো দূর, আমরা ফিসফিসিয়ে কথা বলি। আমরা ততদিনে জেনে গেছি, বাতাসেরও কান আছে। আমাদের ঘরের পেছনে বৃক্ষসারি। সেখানে ঝরাপাতা। রাত হলে সেখানে পাতা ভাঙার শব্দ। বুটের শব্দ আমাদের বুকে কম্পন তোলে। তবু আমরা ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ খুলি। এয়ার এইড কানে লাগিয়ে ‘চরমপত্র’ আর রক্ত-উত্তাল করা…

  • স্মৃতির গোলাপ

    (কবি ও সম্পাদক আবুল হাসনাত সম্মানিতেষু ) মনে হচ্ছে এই সেদিন আপনার সাথে দেখা হলো। আগের মতোই স্মিত, স্বল্পবাক, আন্তরিক আড্ডায়, সভায় উজ্জ্বল অতিথি নিউইয়র্কের ঠান্ডায় ঈষৎ কাবু নিজেকে আড়াল করার স্বভাবজাত আনন্দে নমিত তবু নৌবিহারে সমুদ্রের নোনা হাওয়ায়  উচ্ছল হয়েছিলেন সেদিন। মনে পড়ে যখন ‘সংবাদ সাময়িকী’র ঈর্ষণীয় সাহিত্য সম্পাদক আপনি মফস্বলের অচেনা কবি যশোপ্রার্থীর…

  • বৃষ্টিতে মৌনতায়

    তমিজ উদ্দীন লোদী আমরা যখন ট্রেন থেকে নামলাম, তখন সুনসান স্টেশন, স্তব্ধতা গড়িয়ে নামছে চারপাশে। অলৌকিক সান্ধ্যছটায় ভেসে যাওয়া প্রকৃতির অবয়ব। তার পাশে বসে আছে ধ্যানস্থ মেয়েটি। পাশ ফেরা কিয়দংশ মুখ। যেন পিকাসোর আঁকা কিউবিক ছবি। মুহূর্তে মনে হলো স্তব্ধতারও মানে আছে। অন্যরকম মানে। মায়াবী, ধ্যানস্থ, রহস্যের বাতাবরণে স্থিত। ফসফরাসের আলোর মতো কিংবা ক্ষীণতোয়া স্রোতস্বিনীর…

  • বরফ গলে গলে জল

    প্রতিসরণে তীর্যক হয়ে আছে ডিসেম্বরের রোদ ন্যাড়া শাখায় বসে আছে পালকহীন পাখিরা শীত নেমেছে দৈত্যের মতো লজ্জাবতী লতার ধরনে গুটিয়ে আছে দিন পরগাছা গাছগুলোতেও শেকড় চারিয়ে গেছে হাওয়া থেকে জলে এবং মাটিতে বরফ গলে গলে জল। ঠান্ডা ও নিস্পৃহ । পানি ভেঙে অমø­জান, হাইড্রোজেন উদ্বাহু জ্বলে প্রতিবেশ, অরন্তুদ ঘরদোর, গৃহ ।

  • বিষাদরেণুতে ঢেকে আছে পাখা

    তমিজ উদ্দীন লোদী   মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে তারা। নৈঃশব্দ্য ও বিষাদের ভেতর, কথোপকথনহীন। ঠান্ডা হিম বাতাস বইছে চাবুকের মতো।   সেন্সরারোপিত কাগজের পৃষ্ঠায় বীভৎস মুখ। গ্রহণলাগা চাঁদ থেকে ছিটেফোঁটা জ্যোৎস্না এসে নেমেছে খোলা পাতায়। অদূরে নড়ছে বিষকাঁটালির ঝোপ। ওখানে হামা দিয়ে বসে আছে মুক্তির সৌরভ, গেরিলা সৈনিক।   রক্তাপস্নুত আকাশ ও মাটির সংরাগে বুঁদ হয়ে…

  • শহীদ কাদরী ‘ব্যক্তিগত, ব্যথিত শহরে’

    তমিজ উদ্দীন লোদী   তোমার চুম্বনগুলো পৌঁছাবার সাথে সাথে তুমিও পৌঁছে গেলে তোমার স্বদেশে তোমার অস্থি, মাংস, মাংসের খাঁচা মিশে থাকল স্বদেশের সোঁদা সুন্দর মাটিতে।   তুমি বলতে ‘দেশ’। দেশ মানে ত্রিশ লাখ মানুষের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা একটি বদ্বীপ। তার মাটি, তার জল, তার বৃষ্টি, টিকে থাকার সংগ্রামে যুযুধান মানুষের মুখ। দেশ মানে অজস্র…

  • সুপাতলা

    তমিজ উদ্‌দীন লোদী   আমি হাঁটি আর ভাবি ওইসব টিলা কই?   ছড়ার দুপাশে বৃক্ষ, বানরের লাফালাফি, ঝাঁকঝাঁক পাখি কই? মানুষ নামিয়ে দিয়েছে সব সমতলে।   সারি সারি কমলা, লটকান, আম ও কাঁঠালগাছগুলো নেই   ইট, কাঠ, লোহার আধিপত্যে ওরা সব পালিয়ে বেঁচেছে।   শুধু আছে কোদাল ও কুঠার। যন্ত্রের দাপট। বদলে গেছে বনরাজিনীলা বুজে…

  • একজন মৃত প্রেমিক বলছে

    তমিজ উদ্‌দীন লোদী   ভালো বাসতে বাসতে মরে যাবার কথা থাকলেও তুমি মরে যাওনি বরং আমি চলে যাবার পর তুমি আবারো প্রেমে জড়িয়েছো তুমি আবারো বলছো ভালো বাসতে বাসতে মরে যাবে!   এখানে শূন্যতা যদিও, তবে কোনো হাহাকার নেই। এখানে অবয়বহীনতা, তবে কোনো দুর্বোধ্যতা নেই। এখানে ধূসর যদিও, তবে কোনো অবিমৃষ্যকারিতা নেই।   প্রবহমান সরল…