দেবেশ রায়

  • ছোট পত্রিকা, নতুন লেখা, অচেনা পাঠক  অচেনা পাঠক

    ছোট পত্রিকা, নতুন লেখা, অচেনা পাঠক অচেনা পাঠক

    এক যে -সাহিত্য নিজের সংজ্ঞা বদলাতে পারে না, সে-সাহিত্য ভিতরে-ভিতরে মরতে থাকে। আমরা, যারা সেই সাহিত্যের সঙ্গে পুরুষানুক্রমিক জীবনযাপন করি, তারা বুঝতে পারি না, আমাদের সেই মৃত সাহিত্যের সঙ্গে বসবাস। যেন কোনো বহু পুরনো বাড়ি। কয়েক পুরুষ ধরে সেখানে কত কী জমে উঠেছে, যার কোনোটারই কোনো ব্যবহার নেই, কোনটা কী কাজে ব্যবহার হল তা পর্যন্ত…

  • দরজা

    দরজা

    দেবেশ রায় যে-কোনো ফোন বাজলেই প্রথমে চমকে উঠতে হয়। ঠিক চমকও নয় যেন। গলা বা বুকের দিকটায় একবারই ঢিপ করে ওঠে। করে কী করে না। বাড়িতে ফোনের সংখ্যা তো গুনে শেষ করা যাবে না। বি-এস-এন-এলের সেই সাবেকি ফোন দুটো। টাটার একটা ওয়াকি। ডাক্তারবাবুর একটা মোবাইল­ – বাড়ির জন্য। ডাক্তারবাবুর সঙ্গে থাকে তিনটি মোবাইল। অন্বিতার নিজের…

  • সৌমিত্র পর্যন্ত কিছু কথা : সৌমিত্রের সঙ্গে

    দেবেশ রায় ৪১৫ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দে আথেন্সের সিটি ডায়োনিসিয়ার ট্র্যাজেডি প্রতিযোগিতায় নাট্যকার ইউরিপিদেস যোগ দিয়েছিলেন তাঁর ট্রয়ের মেয়েরা নাটকটি নিয়ে। ২০,০০০ দর্শক তাঁকে হারিয়ে দিলেন। জিতলেন – জেনোক্লেস নামে এক নাট্যকার। মজা হলো – এই জেনোক্লেসের কোনো নাটকের একটি লাইনও আর পাওয়া যায় নি। এমন কি, কোনো লেখায় তাঁর নামটিও কেউ করে নি, বা তাঁর কোনো নাটক…

  • নদীটি ও জারুল গাছ 

    দেবেশ রায় নদীছুট বলে কাকে? যে-জায়গা থেকে সেই জায়গার নদী ছুটে গিয়েছে। জায়গা না হয়ে মানুষও হতে পারে। যে-মানুষ থেকে তার নদী ছুটে গিয়েছে। মানুষ না হয়ে একটা গাছও হতে পারে। যে-গাছের তলা থেকে তার নদী ছুটে গিয়েছে। গাছটা তো নদীর পাড়ে এক বিরল ভঙ্গিতে বরাবর ছিল। অতবড় একটা জারুল গাছ নদীর একটা আড়ড়ির ওপর…

  • গ্রহণে অগ্রহণে রবীন্দ্রনাথ

    দেবেশ রায় তাঁর সৃষ্টিতে রবীন্দ্রনাথের বাঙালিত্ব সম্পূর্ণের চাইতে কিছু অধিক – তাঁর সৃষ্টির বিপুলতা সভ্যতার ইতিহাসেও বিস্ময়কর। তাঁর অন্যান্য কাজের কথা তুলছি না। শুধু কল্পনা থেকে তিনি যা সৃষ্টি করেছেন – সেই কবিতা-গান-গল্প-উপন্যাস-ছবির বিপুলতার কোনো শরিক নেই – সভ্যতাতেই নেই। এই উল্লেখে আমি তাঁর প্রবন্ধ-জাতীয় লেখার কথা মনে রাখিনি। কারণ – প্রবন্ধ-নিবন্ধ জাতীয় রচনা মনন-অধ্যয়ন…

  • গ্রহণে অগ্রহণে রবীন্দ্রনাথ

    দেবেশ রায়   তাঁর সৃষ্টিতে রবীন্দ্রনাথের বাঙালিত্ব সম্পূর্ণের চাইতে কিছু অধিক – তাঁর সৃষ্টির বিপুলতা সভ্যতার ইতিহাসেও বিস্ময়কর। তাঁর অন্যান্য কাজের কথা তুলছি না। শুধু কল্পনা থেকে তিনি যা সৃষ্টি করেছেন – সেই কবিতা-গান-গল্প-উপন্যাস-ছবির বিপুলতার কোনো শরিক নেই – সভ্যতাতেই নেই। এই উল্লেখে আমি তাঁর প্রবন্ধ-জাতীয় লেখার কথা মনে রাখিনি। কারণ – প্রবন্ধ-নিবন্ধ জাতীয় রচনা…

  • সেবার যখন মৌসুমি বায়ু এসেছিল

    দেবেশ রায় ছয় এমন কি হওয়া সম্ভব? কল্পনাতেও? আফটার অল -। সাধারণভাবে কী এমন অসম্ভব? ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর একেবারে ঘোষণা করে, দিনক্ষণ জানিয়ে, কিছু না লুকিয়ে, সারাদেশ থেকে করসেবকদের জড়ো করে, যুদ্ধে যেমন বিদেশি সৈন্যবাহিনী আক্রমণ করে অবিকল সে-রকম আক্রমণে বাবরি মসজিদ ভেঙে দেওয়া হলো না? তখন তো উত্তর প্রদেশে গণতান্ত্রিক এক সরকার, মানে সে-সরকার…

  • সেবার যখন মৌসুমি বায়ু এসেছিল

    দেবেশ রায় পাঁচ কলকাতার সেই কমবয়েসি মন্ত্রী ধরলেন ফোন। বাগনানের মন্ত্রীর কাছ থেকে খবর শুনে তিনি বললেন, ‘সে কী? আমি তো কিছুই জানি না। কিন্তু সিএমকে তো ফোন করা যাবে না। আমাদের গোলাপদাকে ডাকা যায়। দাঁড়ান, আমি রমাপদদাকে ফোন করছি।’ ‘উনি কি ধরবেন?’ ‘না। আমি পবিত্রদাকে বলছি ওঁকে ডেকে দিতে। নইলে তো উনিই বলবেন –…

  • সেবার যখন মৌসুমি বায়ু এসেছিল

    দেবেশ রায় চার ২৩ জুন শেষরাত থেকে চন্দ্র সাঁতরা আর নিমাই ঢালির মতৈক্যঘটিত আবহাওয়ার যে-পূর্বাভাসের ভয়ে চন্দ্র সাঁতরা খালের জলে ফেলে রাখা পাইপ উদ্ধার করতে চাইল ও একটু দরকষাকষি করেও নিমাই ঢালি জলে নেমে গিয়ে ডুবে গেল – মাঝখানে একবার উঠে সে সাঁতরাকে ক্ষ্যান্ত দিতে বলেছিল কি না ও সাঁতরাই তাকে আরো একবার জলে নামতে…

  • সেবার যখন মৌসুমি বায়ু এসেছিল

    দেবেশ রায় তিন ১৭ জুন মঙ্গলবার থেকে তো কলকাতার জল বেরোতে শুরু করেছে, সে-ই ১১ আর ১২ তারিখের  শেষ ও অষ্টম কালবৈশাখীর জল ও ১৪ থেকে মৌসুমি বায়ুর জল। জল বেরোনোর নানা জটিলতা আছে। সে-সব কথা না হয় থাক। কেষ্টপুর খাল দিয়ে যে-জল বেরোনোর সে-জল কেষ্টপুর খালে ঢুকে আর বেরোতে পারে না। কোনো দিনই পারে…

  • সেবার যখন মৌসুমি বায়ু এসেছিল

    দেবেশ রায় সামান্য অপ্রাসঙ্গিক [এক-একটা লেখার সঙ্গে লেখকের এক-এক রকম সম্পর্ক তৈরি হয়। কখনো একটি বড় লেখা শুরু হওয়ার আগে দশ-বিশ বছর ধরে লেখকের সঙ্গে থেকে যায়, খায়দায়, ঘুমোয়, ঘোরেফেরে, ভুলে থাকে, চলে যায়, ফিরে আসে। তারপর কোনো একসময় আসে যখন গল্পটাকে নিজের ভিতর থেকে বের করে না-দিলে নিস্তার জোটে না। তখন শাদা কাগজ কালো…

  • অক্ষর গল্পের বিন্যাস

    দেবেশ রায় সখী রঙ্গমালা শাহীন আখতার প্রথমা ঢাকা, ২০১০ ২৫০ টাকা দিল্লি থেকে আমি ঢাকা গিয়েছিলাম। ঢাকা থেকে দিল্লিতে এসেছি। আমার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য প্রায় দেড়মাস দিল্লিতে আমার ছেলের কাছে আছি। ডাক্তার অবিশ্যি এতদিনে বলেছেন, আমরা কলকাতা ফিরতে পারি। টিকিটের জন্য অপেক্ষা করছি। আমরা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ কলকাতা ফিরব। সেই কারণেই চিঠিটিতে কলকাতার ঠিকানা দিলাম।…