মণীশ রায়
-
অথৈ পরমানন্দ
কে এই অথৈ পরমানন্দ? তাঁকে নাকি দেখা যায় না। ছোঁয়া যায় না। তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায় না। আসলে তিনি কে? তবে কি তাঁর চোখ আকাশের মতো নীল? তাঁর কেশ কি ঝুরিবটের মতো কাঁধ পর্যন্ত নামানো? তাঁর গায়ের রং কি সমুদ্রের মতো গাঢ় নীল? পাহাড়ের মতো তিনি কি ঋজু ও বলিষ্ঠ? তাঁর কণ্ঠস্বর কি সুললিত,…
-
দৃষ্টির আগে কিংবা পরে
একটু আগেও রুহি আর অর্পিতার উপস্থিতি ছিল এ-ফ্ল্যাটে। নেহালের বিয়ে করা বউ এই রুহি, আর অর্পিতা ওদের একমাত্র সন্তান। একজন চাকরি রক্ষা করতে গেছে ব্যাংকে আর অন্যজন ছুটছে বিশ^বিদ্যালয়ের অনার্স ক্লাস করতে। নেহাল কবীর, একদা আইবিএর এমবিএ, দেখতে-শুনতে রূপবান ও স্বভাবে রোমান্টিক ঘরানার এক পুরুষ, এখন নিরিবিলি-নির্জন হাজার-বারোশো স্কয়ার ফিটের কেনা এ-ফ্ল্যাটে একাকী নিজের সঙ্গে…
-
ছিঃ
প্রেম দিয়েই শুরু হয়েছিল সম্পর্ক। ক্যাম্পাস-সোহরাওয়ার্দী উদ্যান তছনছ করে প্রেমের পাগলা ঘোড়া ছুটিয়ে তারপর বিয়ে করে ক্ষান্ত হলো ওরা দুজন। দুজন বলতে ধ্বনি আর আশরাফ। তাদের কথাই এখানে বলা হচ্ছে। যে-সময়ে প্রেমিক-যুগল হিসেবে ক্যাম্পাসে ওদের নিরন্তর দৌড়ঝাঁপ, সেটা আশির দশকের একেবারে গোড়ার দিককার সময়। ওরা সে-সময়ের নায়ক-নায়িকা। খুল্লামখুল্লা প্রেমের জন্য রীতিমতো বৈরী সময়; তবু দেশি…
-
জলের গভীরে
অনেকদিন হলো মন্মথপুরে কোনো উত্তেজনার ছোঁয়া নেই, সব হাওয়া। উত্তেজনা বলতে অন্য কিছু নয়, প্রেম-ভালোবাসা তো নয়ই, এখানে উত্তেজনার অপর নাম মারামারি-কাটাকাটি। এটা সবাই জানে। মাস ছয়েক আগেও ব্যক্তি আর গোষ্ঠী বিবাদে জর্জর হতো মন্মথপুর। যখন-তখন তুলকালাম বেধে যেত এলাকায়। রাস্তায় উষ্ণ রক্তের ভেতর গড়াগড়ি খেয়ে গোঙাত রামদার কোপ খাওয়া কিংবা টেঁটাবিদ্ধ মানুষজন, কেউ ভয়ে…
-
গল্পের রূপবৈচিত্র্য
(গত সংখ্যার পর) তিন আমাদের হবু গল্পকারের নাম সদরুদ্দীন খান পাঠান। চাকরিজীবনে তাঁর গোঁফ-দাড়ি ছিল না। সরকারি চাকরি করার সময় প্রতিদিন ক্লিন-শেভড হয়ে অফিসের গাড়িতে বসতেন। কোনো কারণে ছুটির দিনে একদিন শেভ করতে না পারলে উসখুস করতো মন। অবসরগ্রহণের পর এখনো সেই অভ্যেসটা রয়ে গেছে। একসময় লোকজনকে দাবড়ে বেড়াতে ভালোবাসতেন। সাংসারিক যত সিদ্ধান্ত সব তিনি…
-
মেঘের মতো কোমল
‘মানুষ এমুন ক্যানে লালু?’ চোখভরা জল নিয়ে হিল্লি প্রশ্নটা করে ওকে। উত্তরটা লালুর জানা নেই। সে শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে হিল্লির দিকে। নারকীয় দৃশ্যগুলো এ-সময় চোখের সামনে ভেসে বেড়ায়। সেদিকে মুহ্যমান লালুর হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করার নেই। মনে মনে সে-ও হিল্লির মতো কাকে যেন অসহায়ের মতো একই প্রশ্ন করে, ‘মানুষ…
-
করোনা কথা
শিশির ভেবেছিল ওর হবে না। শেষমেশ ওরও হলো। সামান্য খুসখুসে কাশি আর না-বলার মতো জ্বর। একশর নিচে ওটা কি কোনো জ্বর ? তবু সে বরাবরই সচেতন মানুষ। তিন মাস আগে ডি ভিটামিন খেয়ে রেখেছে পেটপুরে। স্ক্যাবো, লং-চা, লেবুর সরবত, হোমিও ওষুধ – কোনটা নয়? মাস্ক-শিল্ডের আভরণে চেহারা চেনা দায়, মধ্যযুগের বর্ম পরা সৈনিক যেন সে।…