মাকিদ হায়দার
-
বেজোড় শালিক
(কবি তারিক সুজাত প্রীতিভাজন) মাকিদ হায়দার একটি শালিক, বেজোড় শালিক দুপুর রোদে কাঁদছে দেখে থমকে গেলাম \ দিনটা সেদিন কাটলো আমার বৃথা কাজে। ভেবেছিলাম দুপুর রোদে সাঁতরে যাব নদীর ওপার, ওপারে যার বসতবাড়ি, তাহার খোঁজে যে-মেয়েটি বলেছিলো এলে পরে কথা হবে। ফিরে এলাম দুপুররোদের দুহাত ধরে। হঠাৎ দেখি, সেই দুপুরে, বেজোড় শালিক দাঁড়িয়ে আছে একলা…
-
বিদ্যাসাগরের প্রতি
(অধ্যাপক সনৎ সাহা শ্রদ্ধাভাজনেষু) মাকিদ হায়দার আমাদের দোহারপাড়ার সব বিরহের বাড়িঘর আছে এমনকি, সকলের বাড়ির পেছনে আছে শান-বাঁধানো পুকুরঘাট। সেই পুকুরের টলোমল জলে সাঁতরে বেড়ায় এ পাড়ার মণিদীপা বয়স একুশ অথবা বাইশ তারও বিরহ আছে। আমাদের দোহারপাড়ার শুধু একটি বাড়ির বিরহ নেই, ছিল না কোনোদিন, বাড়িটির উঠোনে দুপুর, বিকেলের রোদ, কেউ কোনোদিন বেড়াতে আসে না…
-
পরের বাড়ির ছাদে
মাকিদ হায়দার পরের বাড়ির ঘুঘু এসে ধান খেয়ে যায় আমার বাড়ির ছাদে। আমার বাড়ির ঘুঘু হয়তো তারে ভালোবেসে কয় না তারে কিছু, তবু তাকে বলেছিল, গোলার ধান ফুরিয়ে গেলে পারবো না আর দিতে। ঠিক তখুনি বললো হেসে পরের বাড়ির ঘুঘু, ওসব কথা ভাবছো কেন মিছে খাবার চেয়ে অনেক বেশি পাওয়া তোমার কাছে…
-
নীল অভিমান
(প্রীতিভাজন কবি মোশাররফ হোসেন ভূঞা) মাকিদ হায়দার উজানে যাচ্ছি, যাচ্ছি উজানে রোদ যাচ্ছে, যাচ্ছে মেঘ, তার সাথে আমি যাচ্ছি। যতদূর যাবো, যাবে নদী বলেছে আমাকে যাচ্ছি উজানে, উজানে যাচ্ছি, ফেরাবো না মন, হোক ললনার হোক ছলনার। কারো দিকে ফেরাবো না চোখ, যে আছে অতীতে সে থাক অতীতে আছে হৃদয়ে, থাক হৃদয়ে কেন…
-
হাজার বছর (প্রিয়জন, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম)
মাকিদ হায়দার ইচ্ছে করে হাজার বছর বেঁচে থাকি। ইচ্ছেটুকু পূরণ হলে লিখব না আর পত্র-চিঠি তাহার বাড়ির ভুল ঠিকানায় মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে মেঘের সাথে ভেসে বেড়াই, সময় পেলে রাখব ঢেকে দহন আমার, তাহার বাড়ির শিউলিতলায়। পরশু রাতে ঠিক করেছি পুড়ব না আর জোছনা-রোদে, ইচ্ছে তবু জেগে থাকে একটি মুখ দেখার…
-
সঙ্গে যদি
মাকিদ হায়দার (শ্রদ্ধাভাজন কবি মাহমুদ আল জামান) তীর্থে যাবো সঙ্গে যদি নিতে ধুইয়ে দিতাম সোনার চরণ দুটি। কুড়িয়ে দিতাম হারিয়ে যাওয়া মুখ, প্রেমিক কবির দৃষ্টিভেজা চোখ। তীর্থে যাবো সঙ্গে যদি নিতে। নাইবা গেলাম গয়া-কাশী যেতাম, সুদূর বৃন্দাবন। সেথায় গেলে হয়তো আমি ফিরে পেতাম কারো হারিয়ে যাওয়া মন তবু যদি তীর্থে…
-
অতীত কাহন
(কবি হায়াত সাইফ শ্রদ্ধাভাজনেষু) মাকিদ হায়দার মনের সুখে সেলাই করি মনের অসুখ। মাঝে মাঝে পরের বাড়ির শাড়ির আঁচল। সব শাড়িতে দহন দেখি দহনসহ সেলাই করি একটি, দুটি, তিনটি শাড়ির গোপন কথা। শাজাদপুরের একটি শাড়ি কেঁদে আমায় বলেছিল, রবিঠাকুর কথা দিয়েও নেয়নি তাকে কলিকাতায়। জোড়াসাঁকোর লাল বাড়িতে। কবিরা সব কথা দিয়েও কেউ…
-
বিবরণ
[কবি শ্যামলী মজুমদার, প্রীতিভাজন] মাকিদ হায়দার ছেড়ে এলাম, ফেলে এলাম, বাঁশবাগানের মাথার ওপর দুই শালিকের ঝগড়া-বিবাদ। হুতোম এবং লক্ষ্মীপেঁচার আলাপ বিলাপ। ফেলে এলাম, ছেড়ে এলাম, সরল মুখের করুণ চোখের ভেজা পাতা। যে-পাতাতে লেখা ছিল সময় পেলে বেড়িয়ে যেয়ো, দেখতে পাবে কেমন আছি মাঘ পৌষে আসো যদি। বসতে দেবো চোখের পাতায়, সেলাই ছাড়া…
-
শেষ মেয়েটি [কবি আসাদ চৌধুরী শ্রদ্ধাভাজনেষু]
মাকিদ হায়দার চৈত্র মাসের তিরিশ দিনে নিজের দেহ পোড়াই রোদে কেঁদে ভাসাই মনের যতো ক্লেদ যাতনা। কেন পোড়াই, কেন ভাসাই, জানতো শুধু কাজীবাড়ির শেষ মেয়েটি, জানতো আরো বাঁশবাগানের পায়ের নিচে পড়ে থাকা মচমচানো বাঁশের পাতা। কাজীবাড়ির শেষ মেয়েটি বলেছিলো, আর হবে না আগের মতো… শেষ করেনি পরের টুকু। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ,…
-
দেবী
মাকিদ হায়দার [কবি, শঙ্খ ঘোষ শ্রদ্ধাষ্পদেষু] দেখি নাই শুধু শুনিয়াছি তিনি নাকি অপরূপা। ভাবিলাম, হইলেও হইতে পারেন তাহাতে আমার কী, ই, বা আসিয়া যায় তথাপি বুকের মধ্যে কষ্ট অনুভব করিলাম চিনচিন করিতে লাগিল অবুঝ হৃদয়। শুনিলাম, সেই অপরূপার কথা, শুনিবার পর হইতেই অনেক যুবকেরই নাকি ঘুম হইতেছে না, এমনকি আমার নিজেরও।…