মাহবুব সাদিক

  • অজানা অন্ধকার পথে

    শাশ্বতীর যাত্রাপথে সঙ্গী ছিলো না কেউ ছিলো ক্ষুরধার অন্ধকার চারপাশে                অনিশ্চিত কালের আঁধারে এগিয়েছি একা একা কণ্টকিত পথে, নিঃসঙ্গতা ফেল্টের টুপির মতো                       শুষেছে মাথার ঘাম ছিলো তবু বুকে সৃষ্টির তীব্র অনল দহন করেছে যা রক্তমাংস এবং হৃদয়; যা ছিলো সুদূর আলোর রেখা তাও শেষে প্রেতের মতন ছড়িয়েছে নারকী কুহক তবু ছিলো দূর চক্রবালের…

  • কার গাঢ় দীর্ঘশ্বাস!

    মাঝরাতে অকস্মাৎ কার গহনের ঘোরগাঢ় দীর্ঘশ্বাসে ঘুম ভেঙে জেগে দেখি জানালায় নাক ঘষে                                ক্লান্ত এক রাতের পৃথিবী- ঘর থেকে বাইরে নেমে আসি খড়কুটো নড়ে, হালকা বাতাসে কেঁপে ওঠে ঘাসপাতা ছোট্ট সোনা কাঠবেড়ালিটা পুটোচোখে চায় – পাতা নড়ে, পাতা ঝরে ঘাসের গহনে, হয়তো কোথাও কোনো আড়ালে-আবডালে খাপ পেতে বসে আছে মুখভরা দাড়ির আড়ালে কোনো…

  • দ্বিধাঘোর

    হয়তো আমার চোখমুখে ছিল আবেগের গাঢ় রেখা  – চাঁদজ¦লা রাতে আলোর ইন্দ্রজালে যখন ছিলাম নিবিড় স্বপ্নে ডুবে দুজনে হেঁটেছি নীরবেই পাশাপাশি, সেটুকুই ছিল অর্জিত অধিকার – তবু মনে হলো কোথাও গহনে তার রয়ে গেছে দ্বিধাঘোর নাকি সে নিজেই ছিল দর্পিতা আরো – চোখ তার ছায়াময় খুঁজেও পায়নি মিলন-মাধুরী প্রিয় রয়েছে যা আঁকা মহাকাল মুখজুড়ে –…

  • প্রিয়তম পৃথিবী আমার

    গাছেরা মেতেছে খুব নান্দনিক নাচে                 অবেলার এই অকাল বসন্তে এবার, গাঢ় নীল আকাশের তলে পাতারাও নামিয়েছে সবুজের অঢেল সুন্দর – দূর শৈশবের পরে বাহারি ফুলের দল ছত্রিশ রঙের আয়োজনে            কখনো এমন মেতেছে বলে মনেও পড়ে না; ছায়াতলে শীর্ণ গাছেরাও যৌবনের নানারং ঘাগরা মেলে আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে সেও ফেলনা কেউ নয়; অন্যদিকে মানবসংসারে আজ তীব্র হুলস্থূল…

  • সময়ের কাছ থেকে

    পালাতে পালাতে শেষে এইখানে বনের কিনারে – কালচে সবুজের ফাঁকে শেষ বিকেলের  অদ্ভুত আলো এসে ঢুকে পড়ছে তোমার চোখে এই আলো সত্যি অপার্থিব –    যেন তা কল্পনার স্বর্গ থেকে নেমে আসছে ধরাধামে, তবে বর্তমান বড়ো শত্রু ভয়ানক – বনের ছায়া-ছায়া অচেনা আলো-আঁধারি চমক  নৃশংসতা ভয় আতঙ্ক ধূসর-বিস্ময় – সব মিলেমিশে এক অদ্ভুত আলাদা চরিত্রই যেন…

  • আমার আবেগ

    (আবুল হাসনাত স্মরণে) তুমি দেখেছিলে একা, জেনেছিলে কতকিছু জীবনের দ্বন্দ্ব থেকে পেয়ে গেছো জ্ঞান আর স্মৃতি মাঝে মাঝে সেইখানে নেচে গেছে স্মৃতির চড়ুই – জেনেছিলে এই সত্য – সময় চলেছে উড়ে ক্রূরচোখ ঈগলের মতো – রূপসীর রূপের জাদুও তার নখে ছিঁড়েখুঁড়ে যায়, মানবশরীরও বাঁচে না              শুধু হৃদয় বাঁচে অন্যদের হৃদয়-গভীরে তোমার নশ্বর দেহ চলে…

  • খণ্ডিত-টুকরো জীবন

    মাহবুব সাদিক নদীটা উতল – ঢেউভাঙে, স্রোতে দোলে ভাঙে জল এইখানে প্রায় দুইভাঁজে বাঁকফেরা নদী তবু তুমি দেখছো তাকে অখণ্ড নদীই – নিজেকে কি মনে হয় ওরকম অখণ্ডসত্তা কোনো? এই প্রশ্নের মুখে নিরুত্তর আমার ঠোঁটচাপা বোধ; জীবন টেনেছে খুব – টানায়-পোড়েনে ছিঁড়েফেটে শেষে খণ্ড খণ্ড হয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেছে সারা পৃথিবীতে বেশিটাই স্বদেশের এখানে-ওখানে, বেশকিছু বিদেশে-বিভূঁইয়ে…

  • ন্যায়বিচারের দেবী

    কোথায় রয়েছো তুমি – কতকাল তোমাকে দেখি না আজ তর্জনী তুলেছে কাল ডেকে গেছে কালের তক্ষক, এই দুর্দিনে তুমি কোথায় লুকোলে বলো? বহুকাল কেটে গেছে বীভৎস কদর্য পা অবশ্যই ফেলে ছিল ওরা তোমার পৃথিবী জোড়া – হন্তারকের পদচ্ছাপ তবে এতই বিশাল? তবু এখনো হয় না বিশ্বাস প্রকৃত বাঙালি পারে ওরকম মহীরুহ ঝাড়ে-বংশে উপড়ে ফেলে দিতে!…

  • হাজার বছর পরে বঙ্গবন্ধু

    (অন্নদাশঙ্কর রায়ের ঋণস্বীকারপূর্বক) স্বপ্নেরা ভাঙে, স্বপ্নেরা গড়ে শিহরণ অবিরাম কল্পনা তার কাঁথা বুনে চলে দিনরাত একা একা স্বপ্নের গায়ে কখনো দেখেছি প্রগাঢ় রক্তলেখা জ্বলজ্বলে রাঙা ক্ষত, আশার আকাশে ঘনিয়েছে কালমেঘ, আবার কখনো জীবন হেসেছে লীলায়িত সুখে, এভাবেই কতকাল কেটে গেছে এই বাংলায় হাজার বছর – কত আনন্দে কতটা তৃষায় কেটেছে দিবস-নিশি বদলেছে কাল – মানুষ…

  • এই আমি চেয়েছিলাম

    মাহবুব সাদিক ঝরনার কাছে ঘাসজমি জলের কল্লোল আকাশনীলের তলে কাঠকুটো আর ঘাসে ছাওয়া চারদিক খোলা অবারিত ছোটো বাড়ি – সারাদিন হাওয়া দেবে হানা সারারাত শিশিরের ধ্বনি নিঃশব্দ শীতের কড়া নাড়া – এই আমি চেয়েছিলাম – শুধু এই;   সংক্ষুব্ধ জীবন স্বপ্নের কপাট খুলে বারবার দেখে নেয় দ্যোতনাময় আলো ও আঁধার চেতনার আনাচেকানাচে তারা কোথায় করেছে…

  • কী করুণ একা!

    মাহবুব সাদিক   ভার হয়ে উঠেছে এই দিন – স্বপ্নছেঁড়া দিন যেন বুকজোড়া উত্তপ্ত গ্রানিট বিমর্ষ করুণ মুখ শুধু চেতনার অতল থেকে খুঁড়ে তোলে বিপুল বেদনা, উলটোপালটা হাওয়ায় পড়তি বেলার সূর্যকে দেখায় বাঁকাচোরা – যেন কমলা রঙের ক্লাউন, চারপাশটাও বিচিত্র, উদ্ভট – ফুল নেই পাখিরা উধাও আজ দৈগন্তিক রেখার ওপারে, মরুভূমি নয় – হাওয়া তবু…

  • উদ্ভ্রান্তির ভূত

    মাহবুব সাদিক   বাতাসে বাতাসে এত আলোড়ন মৃদু দখিনার অবিরাম মাতামাতি তবু তোমার হৃদয়ে কেন যে দুঃসহ উদ্ভ্রান্তি! সকালের মেঘে বজ্রেরা যদি ঘন ঘন ড্রাম পেটে বিদ্যুৎ খেলে রাঙা-বাঁকা তলোয়ার তবু তার ছায়াতলে শান্তিরা নাচে-ওড়ে শাদা পায়রারা, তোমার হৃদয়ে তবু কেন এত দুঃসহ উদ্ভ্রান্তি!   আমি তো দেখেছি তাতার তরুণী খুদ-কণা খুঁটে তরুণ হৃদয়ে ঢেউ…