মুহম্মদ নূরুল হুদা

  • স্বাধীনতা

    স্বাধীন তুমি স্বাধীন আমি পরাধীন কে হে বল, পরাধীন কে হে বল, পরাধীন কে হে বল, অন্যকে যে করেছে অধীন ধরতে তাকেই চল, ধরতে তাকেই  চল, ধরতে তাকেই চল।  জননী-ধরণি  স্বয়ংজন্ম, স্বয়ং জন্ম-স্বাধীন স্বয়ং জন্ম-স্বাধীন স্বয়ং জন্ম-স্বাধীন, ধরণিকে যে অধীন করেছে, কে সে অজেয় বীর কে সে অজেয় বীর কে সে অজেয় বীর? বাঘ বলো…

  • যাই

    (কবি-সম্পাদক আবুল হাসনাতকে নিবেদিত) যাই, চলো যাই, যাবার বিকল্প নাই, চলো, রূপে ও অরূপে যাই; চলো, যেতে যেতে নিত্য বিবর্তনে যাই; স্থিরচিত্র থেকে স্বরূপ-অরূপ চিত্তে নিত্য সমর্পণে যাই। বদলপ্রবণ পায়ে এতদূর আমরা এসেছি। বিবর্তিত শুদ্ধচিত্তে বারবার আমাকে পেয়েছি। ফলনপ্রবণ দেহ, নিত্যবৃত্তে নবায়িত মন যুগলে ভ্রমণরত, সর্ব অঙ্গে ডানাসন্তরণ, বাঁক পার হয়ে বারবার অন্য এক বাঁকে; অনন্তবদলরূপ জীবেদের ডাকে শুধু ডাকে। আকৃতিবদল যদি বোধের ধরন সিদ্ধকাম মুনিঋষি বা বৈয়াকরণ মুহূর্তের রথযাত্রী, অনিত্য গড়ন, মূর্ত আর বিমূর্তের বিবিধ বাস্তবে; নীড় ভেঙে নীড়ে যাই সৃষ্টি কলরবে। ভ্রমণ মরণ নয়, মরণ ভ্রমণ : জন্মমৃত্যু নির্ধারিত দুই ইস্টিশন; সুরতবদল করে নিত্য পরিযায়ী সটান দণ্ডায়মান কিংবা শয্যাশায়ী পঞ্চভূতে যাত্রা অহর্নিশ: প্রাণীরা আহার-ঘ্রাণ ভেষজ-আমিষ। তারপর একদিন শীতলপাটিতে যদি মাটিতে বিলীন, মানুষ বদলযাত্রী রূপে রূপে দিগন্তে আসীন।

  • তোমার তরঙ্গ

    মুহম্মদ নূরুল হুদা   অঙ্গের অনঙ্গ থেকে যে-তরঙ্গ আসে আমার অনঙ্গ তাকে যদি ভালোবাসে মেঘে মেঘে উড়ে যায়   শাদা বালিহাঁস আমরা দেখিনি কিছু দেখেছেন কবি কালিদাস দেখেছেন উদয়াস্ত সুনীল আকাশ   ২ ততক্ষণ ভাবনা, যতক্ষণ তোমাকে পাব না।   পেলেও ভাববো, কেননা তোমাকে তো ধরে রাখতে পারবো না         ৩ পথ…

  • পাথর-বিবাহ

    মুহম্মদ নূরুল হুদা আমার চারপাশে চকচক করছে আদিম পাথর। হায়, পাথর খুঁটতে খুঁটতে আমার পাখিরাও ভুলে গেছে পাললিক চর। অন্ধ আমি, আমিও পাথর তুলে রেখেছি আমার দুচোখে। আমার আগে আগে স্বয়ং পাথর আমাকেই শোঁকে। চোখ থেকে বুক, বুক থেকে সারাশরীর। শরীর ছেড়ে ত্রিভুবন ঘুরে বেড়াচ্ছে আমার মন অধীর। ঘুরতে ঘুরতে আমি নিজেই এখন জাফলং থেকে…

  • স্বাধীন জাতির স্বাধীন পিতা

    মুহম্মদ নূরুল হুদা   আদিপিতা আদিমাতা আদিঅন্তহীন – জন্মহীন মৃত্যুহীন, নয় পরাধীন; মানুষ মূলত মুক্ত, আজন্ম স্বাধীন।   স্বাধীনতা তোমাকেও চায়, স্বাধীনতা আমাকেও চায়, যে তাকে চিনতে পারে সে-ই শুধু পায়।   স্বাধীনতা তোমার অধীন স্বাধীনতা আমার অধীন যে তাকে জিনতে হারে সে-ই পরাধীন।   স্বাধীনতা বীরের ক্ষমতা বীরভোগ্যা এ-বসুধা বীরে বীরে সমতা মমতা।  …

  • চাবির বুকে মনের তালা

    মুহম্মদ নূরুল হুদা   মনের খনন দেহের ঘরে, দেহের খনন মনে; জীবন যখন আপন ঘরে আপন নির্বাসনে। নতুন ডানা পেখম মেলে নতুন ঠিকানায়, চুপসাঁতারু হাত-পাগুলো সাঁতার কেটে যায়। ঘরের ভিতর ঘরসরোবর মনময়ূরীর বাস আকাশঘরের নকশা অাঁকে অন্ধ অবিনাশ। স্নানের ঘরে জলের ধারায় মনময়লা ভাসে, পুড়তে পুড়তে উড়তে শিখি বিরহী সন্তাপে। ও ময়ূরী, মেঘ দেখেই আর…

  • দেহতরী মনতরী

    মুহম্মদ নূরুল হুদা হৃৎদুনিয়ার বীজে ফুটে যদি এ-মৃৎদুনিয়া ব্রহ্মফুলে ম-ম ত্রিভুবনে সোনার খামার, মানুষ, তরু ও প্রাণী-অপ্রাণীর সকাতর হিয়া অলক্ষে ফুটিয়ে তোলে যুগলাত্মা তোমার আমার। তখন দুহাত মেলে উড়ে যাই দূরের আকাশে, যুগল পাদুকা বৈঠা ঘাই মারে নদীজলে উদাম বাতাসে, আমাদের দুই চোখ দিনরাত চাঁদ ও সুরুজ হয়ে হাসে। যতদূর যেতে চাই, ততদূর যাই চলে…

  • অঙ্গে আসা অঙ্গে যাওয়া

    মুহম্মদ নূরুল হুদা তুমি আমার ওড়ার সঙ্গী, নামার সঙ্গী নও তুমি আমার চলার সঙ্গী, থামার সঙ্গী নও। উড়তে উড়তে কোথায় এলে কোন সে তেপান্তর – হাট পেরিয়ে ঘাট পেরিয়ে ঘর পেরিয়ে চর? চরের দেখা পেলেই কিন্তু যায় না থেমে দাঁড়, সতী যখন পাহারাদার ভেলায় পতির হাড়। আকাশগাঙে উড়ছে ভেলা মাটির শেকড় ছেড়ে আয় দেখি আয়…

  • মুহূর্তপুরাণ

    মুহম্মদ নূরুল হুদা মুহূর্তের গর্ভ-জাত, তোমার তো অন্য কোনো পরিচয় নাই; সময়ের গর্ভ ছেড়ে চিরকাল সময়ের গর্ভে থেকে যাই। কে গেছে তোমাকে ছেড়ে? সে কি তবে অধরা পালক? যে গেছে তোমাকে ছেড়ে তার সাথে তোমার তো লেনদেন নাই।   যেতে যেতে ফিরে আসি, ফিরে ফিরে দেখি সব পথ, শ্বেত বলো কৃষ্ণ বলো সব পথে সমুড্ডীন…

  • মানুষ মূলত যোদ্ধা

    মুহম্মদ নূরুল হুদা জন্ম যদি প্রাকৃতিক, মৃত্যু কেন প্রাকৃতিক নয়? মানুষ মূলত যোদ্ধা, মানুষের নেই পরাজয়।   প্রকৃতির মুখোমুখি চিরকাল অতিপ্রাকৃতিক হন্তারক জীবেদের দন্তনখ অতিদানবিক ক্ষুধার দোহাই তুলে যত্রতত্র হাড়মাংস খায় ত্রিভুবনে অন্যসব প্রাণী-অপ্রাণীর; না, তাদের তো নেই কোনো দায় আকাশপাতাল জুড়ে সৃষ্টিসাম্য অটুট রাখার; ক্ষমতার ক্ষুধা-মুখে এ-ব্রহ্মা ­- তাদের আহার।   নিরীশ্বর নয় তারা,…

  • নদী যার মাতা

    মুহম্মদ নূরুল হুদা   নদী যার মাতা জাতিভূমি সেই বাংলাদেশে নদীগুলি ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে তার জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে, ঘাট ছেড়ে খাত ছেড়ে চর ছেড়ে ধারা ছেড়ে ঢেউ ছেড়ে কেউ কেউ উঠে এসেছে এমনকি রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে, নানা প্রশাসনিক ভবনে; আজ জয়পুরহাটের এই সার্কিট হাউসেও দেখি ধরা পড়েছে গোটা আটেক নদী, পদ্মা, যমুনা, মেঘনা, কপোতাক্ষ, করতোয়া, তিস্তা, তুলসীগঙ্গা, কর্ণফুলী…

  • এতোটা সরল তুমি (অমৃত মাইতি বন্ধুবরেষু)

    মুহম্মদ নূরুল হুদা এতোটা সরল তুমি এতোটা সহজ এতোটা ভনিতাহীন এতো অভিমানী ধর্মাধর্মে আস্থাহীন, স্থির কর্মধ্যানী, তর্কসূত্রে গড়ে নাও অভেদের ঘর : মানুষ-পতঙ্গ-ঘাস কেউ নয় পর। মাটিকে আদর করে ডাকো তুমি ‘মা’ আগুন যদিও দাহ্য, বলো অগ্নিদেব, জলের সান্নিধ্যে তুমি করো গঙ্গাøান : সর্বভূতে লীন হতে তবে কার ভয়? : এ মহাবিশ্বের মতো ব্যক্তিও অক্ষয়।…