শাহীন আখতার
-
স্মৃতির ছায়াপাত
শাহীন আখতার \ ১১ \ তারপর আরেকটা শীত গেছে। বসন্ত, গ্রীষ্মের পর এখন তুমুল বর্ষা। শ্যামলা আগের মতোই আছে। কাশেম মিয়া হালে স্ট্রোক করে শয্যাশায়ী। খবরটা জেনেও সাবিনার নির্লিপ্তি, নীহার বানুর ভাষায় – সিমারের নিষ্ঠুরতার কাছাকাছি। সে কাশেম মিয়ার তত্ত্বতালাশের কথা একবারও ভাবে নাই। ভেবেছে হয়তো লোকটা প্যারালাইজড যখন, ওর কী কাজে দেবে? খোঁজ…
-
স্মৃতির ছায়াপাত
শাহীন আখতার \ ১০ \ দুর্ভিক্ষির সন্তান পরিবারের সোনালি ইতিহাসের আইডিয়াটা মনে হয় হাওয়াই দ্বীপে সফরের সুবাদে প্রাপ্ত। সপরিবারে ওখানে বেড়াতে গেলে মেজোভাইয়ের ওপর পার্ল হারবারের তাসির পড়ে। নিদেন তাঁর আবেগমাখা বলার ভঙ্গি ও কথনে তো সেই নিশানা। দিনটা ছিল ৭ ডিসেম্বর, ১৯৪১। এখনো নিজের দেশের মৃত সৈনিকের প্রতি আমেরিকানদের যে-ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা জানানোর কায়দাকানুন,…
-
স্মৃতির ছায়াপাত
শাহীন আখতার \ ৮ \ পরিবারের সোনালি ইতিহাস সেই সফরের কিছুই মনে নেই নীহার বানুর। এর কারণ হয়তো এটি সাবিনার গল্প। সাবিনা বলেও সে-কথা। কিন্তু নীহার বানু তা মানতে নারাজ। একই দিনে দু-দুটি বিষয় মন থেকে লোপাট হয়ে গেল! কবিতা মানুষ ভুলে যেতে পারে, তা বলে নিজের জীবনের ঘটনাও! এমন নয় যে, তিনি তখন…
-
স্মৃতির ছায়াপাত
শাহীন আখতার \ ৬ \ নোটবই ১ সুলেখা কালি, ঝরনা কলম। জন্মমৃত্যু-বৃত্তান্ত, কিছু প্রচলিত নীতিকথা, প্রবাদ-প্রবচন, উপদেশ, আর কিছু অলিখিত পাতা – সবই বিবর্ণ। জায়গায়-জায়গায় কালি লেপ্টে গেছে। হরফগুলি পড়া যায় না। বাংলায় অনার্স বলে কথা, সময়টাও কলিকাল। বন্দনাগীতের স্থলে মামি হাসনা বেগম নোটবইয়ের দুর্দশা বর্ণনা করে এর অনুলিপি শুরু করেছেন। কিন্তু কার…
-
স্মৃতির ছায়াপাত
শাহীন আখতার \ ৫ \ অনিতা সেনের স্মৃতিকথা সিলেটে এসে দেখি সাজসাজ রব। পার্টি সর্বশক্তি দিয়ে জাপানি আক্রমণ ঠেকাতে ব্যস্ত। চট্টগ্রামে বোমা পড়ায় অনেকেরই ধারণা – জাপানিরা আকিয়াব হয়ে চট্টগ্রামে ঢুকবে। ঘুম থেকে উঠেই চক-আউট হচ্ছে – আজ কে কোথায়। আমি ভাবলাম, চট্টগ্রাম-বর্মা বর্ডারই বুঝি আমার ডেসটিনি। ওখানে জাপানিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরলে সোভিয়েত যদি…
-
স্মৃতির ছায়াপাত
শাহীন আখতার \ ৪ \ অনিতা সেনের স্মৃতিকথা তারপর লম্বা বিরতি দিয়ে আরো কখানা চিঠি আসে দাদার কাছ থেকে। একেকটার লেফাফায় সাঁটা একেক দেশের ডাকটিকিট। দাদারা যেন সদ্য শিং-গজানো বাছুর, এলোপাতাড়ি ঢুসা দিচ্ছিল আজ এ-জায়গায় তো কাল আরেক জায়গায়। একচলিস্নশ সালের শেষদিকে ব্যাংককে ওদের যোগাযোগ হয় ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেনডেন্স লিগ নামের একটি গুপ্ত দলের…
-
স্মৃতির ছায়াপাত
শাহীন আখতার ‘হাবিয়া দোজগ! হাবিয়া দোজগ! এর আজাবের শেষ আছে?’ নিজের হাতে চোখে ড্রপ দিতে দিতে বলেন নীহার বানু। সাবিনা বালিশ পেতে দিলে আপত্তি করেন না। চোখ বুজে শুয়ে পড়েন। এশার নামাজ পড়া বাকি, এখন ঘুমাবেন না নিশ্চয়! সাবিনাকে অপেক্ষা করতে হয় না। ‘বই পড়া, বাগান করা আর সেলাই-ফোঁড়াইয়ের নেশাটা ছিল বইলাই বাঁচছি।’ নীহার বানু…
-
স্মৃতির ছায়াপাত
শাহীন আখতার । ২। চিঠিতে মা আরো লিখেছেন – ছেলেটা এত কম কথা বলত! একদিন তা শুধোতেই নিরো বলে – ‘ওর বাড়ি ত্রিপুরা জেলায় (বর্তমান কুমিল্লা), মা। কথায় বাঙাল টান তো, তাই তোমার সামনে মুখ খুলছে না।’ তাতে সম্ভবত শ্লাঘা বোধই করেছিলেন আমার মা লীলাবতী। যে-ছেলে কলকাতায় ডাক্তারি পড়ে, কদিন পর আইএমএফ ডাক্তার হবে, সে…