সেলিম মাহমুদ

  • ঘ্রাণ ফুল

    বাদামি-হলুদ দিন গত হলে সূর্য ডোবার মুহূর্তে দিলে সাড়া ঘর ছাড়া অলস রাতের ঘ্রাণ-ফুল। পীত সাগরে মাছের কোঠরে লাল শাপলার স্ফীত বক্ষটান। গোধূলির রঙে মিলনের দিন ফুরিয়ে আসছে বুঝি! বিরহের নদী ফুরাবে না যদি নীল মাছিটারে ডেকে নিও।

  • গ্রীষ্মের সকালে

    গ্রীষ্মের সকালে হঠাৎ পলকে দেখা হয়ে গেল পড়েনি পা যদিও মাটিতে, ছিলে চাকার বাহনে দূরগন্তব্যের আহ্বানে, কেমন কপিশ কন্দরে আর যেন সকালের সারস্বত সম্মিলনে। ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে পথ যায় পথের কিনারে; তাড়াতাড়ি ছিপ ফেলে বসে থাকা চলে মগড়ার উজান গাঙে। সোমেশ্বরী বসে আছে প্রতীক্ষার বাষ্পীয় শকটে নদীর ঠিকানা কোনো ডায়েরিতে লেখা নাই।

  • পরান পোড়ে

    পরান পোড়ে পদ্মফুলে; পলাশ-শিমুল ডালপালা ছড়িয়েছে পথিক-জুড়াতে; প্রাণ  পোড়ে খালি খেয়ায় দাঁড়াতে! পদ্মাসনে নাশ করে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা; সটান দাঁড়ালাম কোলাহল, হল্লা জয় করে নিতে! পাথরে প্রস্তুতিপর্ব সারি, সরবো না এখনই এতো ঘ্রাণ, এতো সমর্পণ কী করে হারাই!

  • চন্দ্রপল্লি পূর্ণদশায় প্রকাশিত

    চাঁদ দেখা যায় না, আড়ালে থাকে মুখ চন্দ্রপল্লি পূর্ণদশায় প্রকাশিত তার কিছুটা আঁচ করা যায় কার্তিকের গ্রামে। তবুও চাঁদ, মুগ্ধতা ছড়ানো হাসি দিয়ে বিলিয়ে দিলো রূপ ও রঙের মদিরা! আমাদের কাহিনি মোটে স্বল্পদৈর্ঘ্যরে গজফিতায় তার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ পরিমাপের নয়। একটি কাহিনি শেষ না হতেই অন্য এক দৃশ্যে চাঁদ দেখা গেল আলিঙ্গনের শুভ রাত্রিতে।

  • এই রাত

    এই রাত পড়ে যাবে, তোমার কিছুই থাকবে না মনে ! উঁচুনিচু পাহাড়-পর্বত, অন্ধকারের ঢাকনা খোলা গিরিখাত স্পষ্ট হবে না কিছুই, প্রত্যুষের আলোর অভাবে। যারা ছিল হামাগুড়ি দিয়ে, ফিরে পেতে আলোর উৎসব তাদের কপালে পরাজয়ের চিহ্ন দেখা যায়! এই রাত ঘাম ঝরায় খামোখা, দূরে নেই কোনো বাতিঘর।

  • জন্মঋণ

    সেলিম মাহমুদ কত কিছুই তো পেলাম এই ফুল, ফল, নদী, গমের দানা, বাতাসের প্রণোদনা, ভোঁস ভোঁস জ্বালানির জ্বলা, কাঠের বাক্স, খাদ্যক্যালোরি, আইসক্রিম, মাংসের চাপ-কিমা। কত না পথ, কত দেশ, জনপদ, ইতিহাসের ঘোরানো সিঁড়ি, ফাটা ডিম, মনস্তাপ, আংটি, পাতকূপ, সোনালি ঈগল, এসব কিছু, এক জনমে। কত কিছুই পেয়েই যাই, শুশুক, শুশুনি, আশাবরী, কামদ, তিলক, ঘণ্টাধ্বনি, সবুর…

  • বোধে

    রোদে ছিল; বোধে ছিল না বাঁধলাম তাকে নিষিক্ত-প্রণয়ে সাধলাম সেই সাথে সুর আধা পাকাপাকি বাকি বিজলি বাতির কিনারায় নিয়ে দেখি, দেখা যায় কিনা? বোধে বাঁধি রাধিকারানি; কী জানি, কী চান্স, চলে চালাচালি হয়, পরিণয় নয়, পিঁপড়ার গুড় জমে বাড়িতে গদিতে, হিস্যা দুই আনা চার আনা ফিসফাস, কানাঘুষা, উপরি-ওপর হয়!

  • ব্রহ্মপুত্রের কালীবাড়িতে

    সেলিম মাহমুদ   চাঁদ গলে গলে মোমচাঁচ হয়ে গেছে। দাসপাড়ার শুঁটকিপল্লি ছেড়ে চাঁদ গমন করেছে ব্রহ্মপুত্রের কালীবাড়িতে; যাই, দেখি, ধুয়ে নিই মুখ, দেখি জেলেদের জোছনাপালন। লোকনাথ আশ্রমের ঠিক নিচে পিঠাওয়ালি এক দিয়েছে বাতাস সুঘ্রাণের আস্বাদন এনে দিতে। ব্রহ্মপুত্রের পানিতে ধীবরকুলের কেহ জাল হাতে ধরি মাছ ছুঁই পানি মন নিয়ে, মাছ নিয়ে ফিরে আসে চন্দ্রমুখী তারাপুঞ্জে…

  • দেখি অট্টালিকা টালির ছাদ

    সেলিম মাহমুদ   কিছুই কি নেই গড়ার? গড়বেন একা শুধু রমাকান্ত কামার অথবা শ্রীকান্ত-পর্ব পড়ে, মজে যাব বারবার এই দেখি সেই দেখি উত্তম-সুচিত্রা দেখি আবার পুরনো চাল ভাতে বাড়ে হা-ভাতে চেনে ভাতের বেগার প্রজন্ম-নতুন চেনে চিকেন সসেজ আর বার্গার দেখি অট্টালিকা টালির ছাদ ড্যান ব্রাউন হিমু হুমায়ূন আজ কিংবা গত, ভুলে থাকি আকছার চাকরি খুঁজি…

  • পাতা-পোড়ানোর কাল

    সেলিম মাহমুদ   আমি আমার গভীরে আর দেখি না পাতা-পোড়ানোর কাল হলুদ-বিবর্ণ পাতা সব করে কলরব রাত্রি পোহাইল, কাননে কুসুমকলি সবই ফুটিল!   এক প্রহরের সেই যে অর্জন; যাকে দেখি না রুটিনে তবে খাতার পাতায় তার সীমাহীন চলাচল টের পাই ভ্রমরের গুঞ্জরণে আর পাই সুইচোরা নামে ছোট এক পাখির বাসায়।

  • সবুজসাথী বই

    সেলিম মাহমুদ   উড়ে-পুড়ে যায় আজাদ-দিনের ভক্তিভরা ভালোবাসা আর সংকটের গান গায় বিজন বনের গাধা! তোলা ছিল অড়হড় পাতা, নামাতে হলুদ, জন্ডিসের- টোটকায় আস্থা রাখে মূর্খ ও গোঁয়ার! আমরা চালাই কলের গানে আঙুরবালার গান পুরাতনী শুনি পূর্ণ পুণ্য মনোযোগে ফিরে পাই তেঁতুলতলার ভূত-প্রেত আর গয়না-নৌকার রহস্যজনক মাঝি! পুড়ে-দৌড়ে আসে, জিরোবার ছলে, দমকল গাড়ি লালফিতা-লালফিতা, ওহে…

  • কাঁটা

    সেলিম মাহমুদ   সাবধানে পথ চলো, পথ যেন না হয় পিচ্ছিল। কাঁটা, ঝোপঝাঁড় থাকলেও সাথে না থাকুক সীমা-লঙ্ঘনের কাঁটাতার। বড় বৈরিতায় বয়স বাড়ছে আজকাল না পাচ্ছি বন্ধন, না কোনো প্রণোদন। ইলিশের কাঁটা নিজেই গলার কাঁটা হয়ে ভয় দেখাচ্ছে রসনা-বাসনায়।   কেমন যেন শরীর-সওয়া এক গা-ঘিনঘিনে পরিস্থিতি নিয়ে উদ্যাপন করছি সেরা, মরা দিনগুলি!