স্বকৃত নোমান
-

ক্ষিতিমোহন সেনের দুনিয়া
রবীন্দ্রনাথের কালে ভারতবর্ষকে, ভারতবর্ষীয় ভাবদর্শন ও সংস্কৃতিকে যিনি সবচেয়ে ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছিলেন, তিনি ভারতপথিক আচার্য ক্ষিতিমোহন সেন শাস্ত্রী। তিনি জন্মেছিলেন ১৮৮০ সালের ২রা ডিসেম্বর, বাংলাদেশের বিক্রমপুরের সোনারং গ্রামে। তাঁর পিতামহ পণ্ডিত রামমণি শিরোমণি ছিলেন বহুশাস্ত্রবিদ, অধ্যাপক ও কবিরাজ। বাহাত্তর বছর বয়সে তিনি কাশীতে গিয়ে বসবাস করবেন বলে মনস্থির করেন। একদিন নিজগ্রাম ছেড়ে নদীপথে যাত্রা…
-

লালাই
এই ঝালরকাটা জ্যোৎস্নায়, যখন না-দিন না-রাত, মন্দারবাড়ির উঠানে কে কথা কয়, কে ডাকে? এ কি ডাক, নাকি বিরহের সুর? যেন মানুষেরই কথা, মানুষেরই ডাক, মানুষেরই সুর। সে কি মানুষ? হয়তো মানুষ, কিংবা অর্ধমানুষ, কিংবা না-মানুষ। কিংবা সে মানবাধম কোনো প্রাণী। মানবাধম, না মানবোত্তম? এই বিচিত্র জগতে বিচিত্র সব প্রাণীর মধ্যে কে কার অধম, কে কার…
-

সেলিম আল দীন দৃষ্টান্তহীন সাহিত্যের রূপকার
সাহিত্যের বাস্তবতা আর জীবনের বাস্তবতা এক নয়, আলাদা। মানুষ কেন সাহিত্য পড়ে? জীবনের নির্মম বাস্তবতা থেকে, একঘেয়ে বাস্তবতা থেকে একটু এসকেপ নেওয়ার জন্য, একটু মুক্তির জন্য। কিন্তু সাহিত্য যখন জীবনের বাস্তবতাকে হুবহু তুলে ধরে, তখন পাঠক অনেক সময় ঠিকঠাক এসকেপ নিতে পারে না। একই বাস্তবতা তাকে টানে না। এই বাস্তবভিত্তিক সাহিত্য তাকে সেই রস দিতে…
-

অমরত্বের সাধ
একশ সাতাশ বছরে এসে হঠাৎ একদিন পরেশবাবুর মনে হলো তিনি নিঃসঙ্গ, ভয়াবহ একা। তাঁর স্বজন-পরিজন নেই, বন্ধুবান্ধব নেই, সেবক-সেবিকা নেই। অথচ তাঁর সবই আছে। পুত্র, পুত্রবধূ, কন্যা, জামাতা, নাতি, নাতনি, পুতি, পুতনি – কে নেই? তবু তিনি নিঃসঙ্গ। এই শহরে কেউ নেই তাঁর মতো একা। কেউ তাঁকে গুরুত্ব দেয় না, আগের মতো ভক্তি-শ্রদ্ধা করে না,…
-

সন্তানবৎ
স্রোতস্বিনী পদ্মা কত কিছুই না ভাসিয়ে নেয়! কখনো ঘর, কখনো বাড়ি। কখনো শস্যক্ষেত, গাছপালা, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট। কখনো মানুষও। এবার ভাসিয়ে এনেছে একপাল মোষ। ভাসতে ভাসতে তারা আরো ভাটিতে, পদ্মা-যমুনার সঙ্গমস্থলে, কিংবা দূর বঙ্গোপসাগরে চলে যেতে পারত। যেতে দেয়নি বিজিবি। ইউসুফপুর ক্যাম্পের বিজিবি উদ্ধার করেছে সাতটি মোষ এবং আলাইপুর ক্যাম্পের বিজিবি নয়টি। এদিকের সীমান্ত প্রহরীরা চিরপ্রবাহিনী…
-

একদিন সাগরে
নগরজীবনে তো আমরা এডিট করে কথা বলি। সব কথা সব জায়গায় বলতে পারি না। কথায় আমরা এডিট করি না ভ্রমণে গেলে। মুখে যা আসে তা-ই বলি। এই ব্যাপারে এক ধাপ এগিয়ে জিসান। সে হাসির কারিগর। তার কথায় হাসতে হাসতে আমাদের পেট ফাঁকা হয়ে যায়। প্রত্যয় কিছুটা ইন্ট্রোভার্ট। তবে যখন কথা বলে তখন হাসির এমন জোয়ার…
-

ফ্ল্যাট নম্বর ৭/সি
রাজাবাজার তেরো নম্বর রোডে গিয়েছিলেন কখনো? যাননি মনে হয়। ওদিকের বাসিন্দা না হলে কে যায় ওই ঘিঞ্জি এলাকায়। কোনো অফিস-আদালত নেই, ভালো কোনো মার্কেট বা রেস্তোরাঁ নেই – কেন যাবেন? কখনো গেলে দেখবেন ওই রোডের মাথায় পানির পাম্পটির পাশেই একটি আটতলা বাড়ি। গেটের ওপর লেখা ‘একরাম ভিলা’। বাড়ির কোনায় একটি নারিকেল গাছ মরি মরি করেও…
-

বর্ষণকাল
হারাধন ও তারাভূষণের মতো অনাদি দত্ত হয়তো অখিলের শোকও চাপা দিতে পারতেন। দিয়েছিলেনও। সমস্ত ভূসম্পত্তি বিক্রি করে হলেও কালাগাজির দৌড়ের শেষ দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মনটা ভেঙে গেল বন্যার পর। এক বছর বিরতি দিয়ে নীলাক্ষিতে আবার বান ডাকল। বান প্রতিবছরই ডাকে। মা যেমন সন্তানকে স্নান করায়, নীলাক্ষিও তেমনি করায় দু-পারের জনপদ। বছরে একবার, কখনোবা দুবার। প্রতি…
-

লকডাউনের পর
আমরা ভুলে গিয়েছিলাম এই শহর যে শুধু মানুষের নয়। চারশো বছরের প্রাচীন এই শহরকে তিলে তিলে করে তোলা হয় মেগাশহর। একশ চৌত্রিশ বর্গমাইলের এই মহানগরীকে ভরিয়ে তোলা হয়েছিল মানুষে মানুষে। যেদিকেই চোখ যেত কেবল মানুষ আর মানুষ। রাস্তায় বেরোলেই আমরা ভাসতে থাকতাম মানবস্রোতে। রাস্তাগুলো ঢেকে থাকত কফ-থুতু আর আবর্জনায়। বাতাসে ভাসত ধুলা আর ধুলা, সিসা…
-

জীবন
বুধবার সকালে ঘুম থেকে উঠে জানালা দিয়ে থুতু ফেলতে গিয়ে তারিক টের পেল, তার মুখটা বেঁকে গেছে। দ্রুত সে ওয়াশরুমে ঢুকে বেসিনের আয়নার সামনে দাঁড়াল। হাসল। একি! বাঁয়ের ঠোঁটটা বেঁকে কিনা নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে! কল ছেড়ে কুলি করার জন্য যেই না মুখে পানি নিল, অমনি ঠোঁটের ফাঁকে গড়িয়ে পড়তে লাগল পানি। আয়নায় ভালো করে…
-

দেশের সব ক্ষেত্রেই এখন গভীরতাহীন চমক দেখা যায় রিজিয়া রহমান
সাক্ষাৎকার গ্রহণ : স্বকৃত নোমান স্বকৃত নোমান : কদিন আগেই শেষ হলো একুশে বইমেলা। এবারের বইমেলা নিয়ে আপনার অনুভূতি জানতে চাই। রিজিয়া রহমান : বইমেলা লেখক-প্রকাশক ও পাঠকদের ঘনিষ্ঠ একটা সম্পর্কের ব্যাপার। বইমেলা শুরু হয় একটা উদ্যম দিয়ে, শেষ হয় বিষাদ দিয়ে। শেষ হলে মনে হয়, আহ্, শেষ হয়ে গেল। প্রতিবছরই বইমেলার সময় একটা উদ্দীপনা…
-

বগি নম্বর ৮৩০৫
বেঁচে থাকা মানে দুর্ভোগ পোহানো। টিকে থাকা মানে ওই দুর্ভোগের কোনো তাৎপর্য বুঝতে পারা। – নিট্শে ট্রেন এক রহস্যময় বাহন। কত চড়েছে সাজু! তবু এর রহস্যের তল পায়নি। রহস্যময় আসলে ট্রেন নয়। লোহালক্কড়ের মধ্যে কী এমন রহস্য? সেই শতাব্দীকাল প্রাচীন ইঞ্জিন কলুর বলদের মতো বগিগুলোকে টানে, আঠারো শতকের নিগ্রো ক্রীতদাসদের মতো বগির চাকাগুলো গড়িয়ে…
