মণীশ রায়

  • কাদম্বিনী বেঁচে আছে

    কাদম্বিনী বেঁচে আছে

    কাদম্বিনী ঘুরে বেড়াচ্ছে এঘর-ওঘরে। দৃষ্টি উদ্ভ্রান্ত। চলন এলোমেলো; বুঝতেই পারছে না, হঠাৎ এমন কী ঘটল যে ঘরজুড়ে গিজগিজ করছে এত মানুষ। কোথাও ঠাঁই নেই দাঁড়াবার। চারপাশজুড়ে থমথমে পরিবেশ, কারো মুখে ছিটেফোঁটা হাসি পর্যন্ত নেই। পুরুষদের চোখ ছলছল, নারীরা আঁচলচাপা দিয়ে কান্না লুকাচ্ছে। সর্বত্রই একটা বিষণœ সুর, ইনিয়ে-বিনিয়ে ভারি করে তুলছে পরিবেশ। প্রাথমিক বিস্ময় কাটিয়ে কাদম্বিনীর…

  • ঘোর

    ঘোর

    মণীশ রায় এরকম হয়। হঠাৎ কোনো একটা পূর্বপরিচিত জায়গা খুব আপন হয়ে ওঠে। রোগশয্যায় শুয়ে কারো কারো যেমন প্রিয় একটা খাবার খাওয়ার জন্যে মন অহেতুক আইঢাই করতে থাকে, আলতাফের বেলাতেও তাই ঘটল। নইলে সব ফেলে সে এখানে কেন এসে দাঁড়াবে? অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন শহরে থিতু হওয়া সফল ডাক্তার সে। কালেভদ্রে অতিথিপাখি হয়ে এদেশে আসে। গুরুত্বপূর্ণ এক-দুটো…

  • ছায়াবাজি

    ছায়াবাজি

    বলা নেই কওয়া নেই দুম করে অনন্তপ্রসাদ মরে গেল। ভোরবেলায় একে নিয়ে হাওয়া খেতে বেরোয় শিবু। খোলা হাওয়া পেলে বেশ তাগড়া দেখতে অনন্তপ্রসাদ দুরন্ত ঘোড়ার মতো ছুটে চলতে চায়। পিছু ধাওয়া করতে গিয়ে শিবু ক্লান্ত হয়ে পড়ে। হাঁপ ধরে যায় রীতিমতো; তবু কোনোদিন নিয়মের ব্যত্যয় হয় না ওর। যদিও এর বাহারি নাম অনন্তপ্রসাদ, আদতে এটি…

  • কুমোর-চাক

    কুমোর-চাক

    রিক্ত অথচ ভালোবাসায় টলোমলো ঢেউয়ের উপচে পড়ার শব্দ ছাড়া আর কিছু নেই।

  • জলের কাছে যাওয়া

    মণীশ রায় একটা কলকল-ছলছল করা টলোমলো নদী, নাম কি তা জানা নেই। বুকজুড়ে অজস্র স্বচ্ছ কাচের টুকরোর মতো ঢেউ তিরতির করে কাঁপছে; অল্প হাওয়ায় নদীর উচ্ছল কিশোরীর বুক দুলছে; সেই মৃদু ছন্দ পাড়ে এসে বালিকার চুড়ি ভাঙা হাসির মতো ঢেউ হয়ে আছড়ে পড়ছে। দূর থেকে একটা নিঃসঙ্গ বটগাছের গুঁড়ি দখল করে রইসউদ্দিন সে-দৃশ্যটার দিকে তাকিয়ে…

  • দেহতরী

    মণীশ রায়   কার বিয়ে হচ্ছে আজ? শীতের ঘোলা আকাশজুড়ে কে ছড়াচ্ছে রঙিন আতশবাজির ফুলকি? কার মনে এতো আনন্দ? অথচ পাশের ঘর থেকে একটু পরপর ভেসে আসছে মায়ের কণ্ঠের বিলাপধ্বনি। অমিয় বুঝতে পারে না, এসব বিলাপ কিংবা কান্নাগুলো সত্যি সত্যি হৃদয়-নিংড়ানো কিনা। ওর মা পরমা কি সত্যি সত্যি ভালোবাসতেন ওর বাবাকে? সে খাটের পাখনার ওপর…

  • শ্মশানবন্ধু

    মণীশ রায় সহসা চারপাশের শব্দগুলো থমকে দাঁড়ায়। কতগুলো পরিচিত-অপরিচিত মুখাবয়বের অন্তহীন পুতুলনাচ মুখ থুবড়ে পড়ে; শব্দহীন। কালো ভূতের মতো ঠ্যাং-ওলা ক্যামেরাকটি হঠাৎ স্থির হয়ে যায়; মাথার ওপর চুন-সুড়কির ছাদ ফুঁড়ে যে-রংচটা ফ্যানটা ঘরঘর শব্দে অবিরাম ঘুরছিল একটু আগে, আপাতত সেটিও মুখবন্ধ কয়েদির মতো বাতাসে কিছু নিঃশব্দ আঁকিবুকি ছাড়া আর কিছুই করছে না; চারপাশ জুড়ে এবড়ো-খেবড়ো…