কবিতা

  • পরাগ আঁকা ফুল

    বিশ্বজিৎ মণ্ডল সেভাবেই তাঁকে দেখেছি, উত্তাল পদ্মা ভেঙে ছুটে আসছে নিরন্তর শব্দের ধ্বনি… পাড়ায় পাড়ায় হর্ষধ্বনিতে জেগে ওঠে তাঁর অলৌকিক কলম কতবার মাঝরাতে বিছানা ছেড়ে উঠে গেছি তাঁর আঁকা অলীক জ্যোৎস্নায় ভিজবো বলে কতবার উদাত্ত ডাকে খুঁজেছি, তোমার শব্দের ওম দেখেছি প্রলুব্ধ হাতছানিতে কেউ যেন সাজিয়ে দিয়েছেন, বাংলার এইসব অর্যমা উপবন নিষেধ না মেনে গেয়েছি…

  • হে সব্যসাচী

    হাফিজ রশিদ খান এমন জানালা একখানা খুলে দিয়েছ হে সব্যসাচী, যা দিয়ে আসে শুদ্ধ বঙ্গীয় সুবাসমাখা গন্ধবহ। আমি পেছনের থেকে সামনে, আরও সামনে যাই ওই সম্ভ্রান্ত সমীরে ভেসে-ভেসে। বসে থাকি কিছুক্ষণ জনকোলাহলের নাটম-লে। হৃদয় প্রমোদিত হয়ে এলে ফিরে যাই সুবিস্তীর্ণ ধানি মাঠের কিনারে। পাখিদের কলস্বর আর পাতাদের গুঞ্জনে, গোধন আর রাখালের মিলিত শব্দায়নে দেখি তোমার…

  • জাদুকর

    ইকবাল হাসান স্বপ্ন আমাকে ঘুমাতে দেয় না সারারাত নির্ঘুম জাগিয়ে রাখে, কখনো কখনো কপালে হাত রেখে বলে, দেখি দেখি, তোমার জ্বর উঠেছে কিনা! কখনোবা ঘুমের ভেতরে বাড়ায় দু’হাত, বলে, এসো, জানালার কাছে যাই, চাঁদ দেখি স্বপ্নের ভেতরে আমি আকাশের দিকে অবাক তাকাই। দেখি, দূরের আকাশে এক উজ্জ্বল রাজহাঁস যার প্রতিটি পালক থেকে ঝরে পড়ছে জ্যোৎস্নার…

  • তৃণে-ছাওয়া আদিম ঠিকানা

    আসাদ চৌধুরী খালি হয়। ঠিক খালি হয়। দেখা যায় না, তা’তে কী! কি ওয়েস্ট, জলেশ্বরী, জোড়াসাঁকো আঁকো, যত পারো এঁকে যাও, পেনসিল কী জলরঙে অশ্রু-আর্তনাদে আঁকো নানা ঢঙে কেবল ভরাট করা নয় ঠিকঠাক ছেড়ে দেওয়াই শিল্প কিছু খালি থাক শেষ অব্দি কী ক’রে যে খালি হয় সে কি নিসর্গের সরল সিগন্যালে? বুকে পুরে চৌষট্টি হাজার…

  • কথা হবে

    শঙ্খ ঘোষ ‘আরো একবার ঠিকই কলকাতায় যাব, কথা হবে।’ দূর-দূরান্তর থেকে সাগর পেরিয়ে ভেসে আসে শমনশয়ান থেকে যাপনের দিকে ভেসে আসে সেই একই স্বচ্ছ আর মর্মছোঁয়া স্বর মুহূর্তে যে স্বর উষ্ণতায় করতল স্পর্শ হয়ে যায়। গুঞ্জন, গুঞ্জন শুনি : কথা হবে, কথা হবে আরো কিছু কিছু স্বপ্নকথা হবে কোনোদিন পাশাপাশি। ‘কে একা নিঃসঙ্গ বসে অশ্রুপাত…

  • দুটি কবিতা

    মোহাম্মদ রফিক নাই বা হ’ল   কে যেন, কে যেন, আসে, কে যেন, কে যেন বা দাঁড়িয়ে, ওই, ওই, চোখের পলক না ফেলতেই কে যেন, কে খুব কাছাকাছি, ঘন হয়ে, ঘন নিবিড় নিস্তব্ধ সকল শরীর থেকে খুলে ফেলে শাড়ি, ঘন হয়ে, মুক্ত করে বেণি, আলতো স্পর্শ চুলে, ঘাড়ে, ত্বক ছুঁয়ে যায় ত্বক, চুমু খায়, ওষ্ঠহীন…

  • অন্যপুরাণ

    মেহেদী হাসান   নীরবতা আঁতকে ওঠে ভয়ংকর কোলাহলে তোমরা ঘুমাও মৃতের মিছিল পেরিয়ে, জেগে আছে তন্দ্রাহত শহর!   এই পথে, পথের অলক্ষে হেঁটে গেছে বীতশ্রদ্ধ প্রাণ এখানে লক্ষাধিক মানুষ এখানে দশলক্ষ কণা রক্তজবা এখানে উজ্জ্বল অন্ধকার এখানেই ঈশ্বর, জবুথবু রাত কাটান সহস্র বছর!   এখানে একিলিস এখানে ব্রেইসিস এখানে হেক্টর একজন শব্দশ্রমিক, অবিশ্রান্ত শান্ত প্রহর!…

  • সমুদ্র শয়ানে

    গোপাল মল্লিক   দয়ময়ীর বাগানে আজ এমনিতেই একটু দেরিতে ঘুম ভেঙেছে আমার তুমি চলেছ চারদিনের সমুদ্র শয়ানে   সারাদিন আমার কী কাজ এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি, টুক্টাক্ ঘর-গেরস্থালি   বুড়ো মানুষের যা হয় – তাতেও ভুল করি, দৌড়ে জানালার কাছে যাই এক অচেনা সাইকেল পিয়ন এপাড়া দিয়ে যায় – আমাকে চিঠি লিখবে কে   তুমি বদ্ধ-উন্মাদ…

  • সেলাইকল

    সুজন হাজারী   যে মেয়েটি মা তার চোখে মুখে কোনো উলস্নাস দেখি না।   মা দিবসে নাড়িছেঁড়া ধন দুধভাতের সন্তান আনন্দে লাফায় পায়রা বাকবাকুম।   পায়রা বেচার দুঃখে কাতর পায়রাঅলাকে মা সমবেদনা জানায় মাতাজির হাটে।   কয়লাখনিতে ধর্মঘট হে শহরে মিছিল নামে বাবাদের।   মা দিবসে মায়ের মুখ পুড়ে চুন মে দিবসে গার্মেন্টস বালিকারা অনুপস্থিত…

  • কোরাস

    সেলিম মাহমুদ   সন্ধ্যা থেকে রাত, নিড়ানি দিলাম সন্ধ্যাতারা-সন্ধ্যামালতী কোরাস ধরল ঝিঝিট-এ মালকোষ বেঁধে সমতলে ঝরালাম ঝর্ণাধারা   তারা উদারা মুদারা এসব কান-প্রতিবেশী হলে অর্ধেক পথ পার হয়ে আর অর্ধেকে বসাতাম দিবস-যামিনী আমি যে তাহারে স্মরি সেও কি এমন-ই?

  • মিথ্যে

    তানিয়া চক্রবর্তী   জিভ যা চায় তাই বলছ? বলতে বলতে তোমার চামড়া ঝুলে যাবে বৃদ্ধ মর্মে তুমি কারাগারে বন্দি আর সত্যিরা বাইরে তোমার শবদেহের আরতি করছে –

  • গ্রহণ

    রোকসানা আফরীন   নিজের ভেতরে থাকি ডুবে যাই শামুকের মতো কষ্ট পাই, কষ্ট পাই, কষ্ট পেতে থাকি পুড়ে যেতে পারি বলে ভয় হয় দ্বিধা-থরোথরো ওই অবিশ্রাম বাতাসের হাতে   তুমি কি করেছো ক্ষমা? তুমি কি দিয়েছো নীল হাত? হাতের আঙুল হতে ডেকে কি দিয়েছো নীলফুল   আমি যে যাচনা করি আমি যে রচনা করি প্রেম…