স্মৃতি

  • নানা-নানি : দ্বিতীয় পর্ব

    নানা-নানি : দ্বিতীয় পর্ব

    যে-কোনো সমাজব্যবস্থা তার সংস্কৃতি ও ভাষার চলনকে নির্ধারিত করে দেয়। পুরুষশাসিত সমাজ বলে নানাকে আগে আনতে হয়। পরে নানি। যদিও আমার কাছে আমার জীবনের প্রথম দশ বছরের প্রিয় মানুষ ছিল নানি। সুখে-দুঃখে নানি-নির্ভর। মা-র চেয়ে বেশি। সেখানে নানা ছিলেন বলতে গেলে শাসক। আমার ক্ষেত্রে খলনায়ক। কর্তাব্যক্তিরা বাকিদের কাছে একরকম খলনায়ক হয়েই দাঁড়ায়। কারণ তিনি নিয়ম-কানুনের…

  • বাল্য ও কৈশোর

    বাল্য ও কৈশোর

    পাঠশালা থেকে ইস্কুল, যেন এক লাফ। শহরের যে-প্রান্তে তখন আমাদের বাস তার সন্নিকট ছিল পাঠশালা। একটু এঁকেবেঁকে সেই পায়েচলা পথ – কিঞ্চিৎ বেতবনের পরেই এক সদ্যকাটা পুকুরপাড়, তারপর সিধে এক মাঠমতো বিস্তারের ধার ঘেঁষে গিয়ে বড়োরাস্তায় ওঠা, উঠে ডাইনে এগোলেই ওই টিনে-ছাওয়া চারচালা বাড়ি, যার নাম কিশোরীমোহন পাঠশালা। বারান্দায় কি পাঁচটে দরজা, নাকি একটাই? কিন্তু…

  • নানা-নানি : প্রথম পর্ব

    নানা-নানি : প্রথম পর্ব

    জ্ঞান হওয়া থেকে নানিকে সবসময় পাশে পেয়েছি। নানা কলকাতায় এক ব্রিটিশ জাহাজ কোম্পানির ডাক্তারের সহকারী, অর্থাৎ কম্পাউন্ডার। কম্পাউন্ডারের কাজ হলো ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী শুকনো ওষুধ অনুপাতমতো মিশিয়ে মিক্সচার তৈরি করে দেওয়া। ওষুধের শিশি স্বচ্ছ বা পাটকিলে রঙের হতো। এই শিশির গায়ে কাঁচি দিয়ে নকশা করে কাগজ কেটে লেই দিয়ে সেঁটে দেওয়া। দিনে ক-দাগ খাবে তা…

  • স্বপ্ন ও সত্যি

    স্বপ্ন ও সত্যি

    ছেলেবেলায় আমি প্রায় প্রতি রাতে স্বপ্ন দেখতাম। কোনোটা মধুর। কোনোটা ভীতিকর। আর ভীতিকর হলে ঘুম ভেঙে যেত। মধুর স্বপ্ন না ভাবাই ভালো। আমাদের মানস-প্রক্রিয়ার বিচিত্র জালে মানুষ জড়িত। একে জানার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মনোবিদগণ। আজকে মনোবিদ্যা একটি পৃথক জ্ঞান-ভাণ্ডার হিসেবে বিবেচিত এবং বিশ^বিদ্যালয় স্তরে পঠন দেওয়া হয়। বিশেষ করে জোর দেওয়া হয় মনোবিকলনের ওপর।…

  • অশোক মিত্রের স্মৃতিতে ঢাকা

    অশোক মিত্রের স্মৃতিতে ঢাকা

    ‘ঘোড়ায়-জিন-লাগানো সময়, এক দমকায় যেন ষাটটি বছর পেরিয়ে গেছে, তিরিশের দশকের গোড়ার দিকের সেই দিনগুলিকে তবু মনে হয় হাতে ধরা যায়। সম্ভবত ১৯৩২ সাল, সম্ভবত তার পরের বছর, হালে যারা বি-বা-দী-তে পর্যবসিত, সেই বিনয়-বাদল-দীনেশের পীঠস্থান আমাদের ঢাকা শহর, উত্তেজিত গল্প, যা কিংবদন্তী হয়ে দাঁড়ায়; কী ক’রে মিটফোর্ড হাসপাতালের প্রাঙ্গণে লোম্যান না হাডসন সাহেবকে পর-পর তিনটি…

  • প্রথম স্মৃতি

    প্রথম স্মৃতি

    মানুষের প্রথম স্মৃতির কথা জানতে চাইলে সবাই একটা ধাঁধায় পড়ে যায়। মনে করতে থাকে প্রথম স্মৃতিচিত্র। অনেক ছবি ভেসে ওঠে সমান মর্যাদায়। প্রথমটা চিহ্নিত করতে বেশ বেগ পেতে হয়। কোনটা প্রথম? সব জড়াজড়ি করে সুপার ইম্পোজড হতে থাকে। আলাদা করা দুষ্কর। সবার মতো আমারো হয়েছে তাই। তবে একরাশ নয়, দুটি দৃশ্য পরস্পর জড়াজড়ি করে উঁকি…

  • চৈত্রপালা

    চৈত্রপালা

    জন্মের ঠিকুজি জানার সবচেয়ে প্রাথমিক উৎস মা। বাবা নন। মা জন্ম দিয়েছেন। বাবা পাশে থাকতেও পারেন, না-ও পারেন। থাকলে দিনক্ষণ বলতে পারবেন। নচেৎ শোনা কথা। বা নোটবুকে টুকে রাখা। কোনো মানুষই তার জন্মক্ষণ সম্বন্ধে বলতে পারে না। কারণ তার স্মৃতিকাণ্ড শুরু হয় ধীরে। এবং কয়েক বছর কেটে যায়। আমার সূত্র মা। তাই দ্বিধার কোনো বালাই…

  • ছেলেবেলার কথা

    ছেলেবেলার কথা

    অধ্যাপক অমিয় দেব তুলনামূলক সাহিত্যের যশস্বী শিক্ষক। দীর্ঘকাল অধ্যাপনা করেছেন যাদবপুর বিশ^বিদ্যালয়ের তুলনামূলক ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে। তাঁর হার্দ্য, অনুভববেদ্য বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি সাহিত্য সমালোচনার নৈর্ব্যক্তিক ঘরানার গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন, যা বিশ্লেষণের পাশাপাশি নিরন্তর পাঠকের সাহিত্যপাঠের পদ্ধতিকে প্রশ্নে তাড়িত করে এবং সাহিত্যের সঙ্গেই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উপাদানকে সম্পৃক্ত করে নেয়। বুদ্ধদেব বসু ও সুধীন্দ্রনাথ দত্তকে নিয়ে তাঁর লেখা…

  • জগৎ জুড়ে প্রাণের মেলা

    জগৎ জুড়ে প্রাণের মেলা

    হাতেখড়ির পালা একবারে তো আর শেষ হয় না। পড়ে থাকে দ্বিতীয় অধ্যায়। সেটি গণিতের জগৎ। আমরা সবাই দুটি মাত্রায় সীমাবদ্ধ। এক, ভাষা – দুই, গণিত। অ আ শেখার পর আসে রাশি শিক্ষার পালা। তো বর্ণপরিচয় শেখার পর শুরু হলো গণিত পাঠ। এক থেকে দশ পর্যন্ত লেখা চলল। এই প্রথম সিঁড়ি ভাঙার পর এগারো থেকে কুড়ি।…

  • তালগাছ

    তালগাছ

    তালজ্ঞান না থাকলে সংগীতজগতে জায়গা পাওয়া মুশকিল। সুর-লয়-তাল সংগীতের কাঠামো। গান-বাজনা পরে। অনেকে জন্মলগ্ন থেকে এগুলো পেয়ে থাকে। এমন ভাগ্যবান না হলে শিখতে হয়। গুরু ধরে। হতে পারে মা-বাবা বা পরিবারের কেউ। তাছাড়া গুরুমশাই। সংগীতেরও আছে হাতেখড়ি। এখানে হাতেখড়ি কণ্ঠ ও যন্ত্রসহযোগে। আর পেছনে থাকে তাল-যন্ত্রটি। যাকে আমরা বাঁয়া-তবলা, মৃদঙ্গ, খঞ্জনি, করতাল, ঢোল ইত্যাদি বলে…

  • রায়পুরা থেকে ময়মনসিংহ

    রায়পুরা থেকে ময়মনসিংহ

    সাতচল্লিশ ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে আমাদের ছেলেমেয়েরা ছুটিতে দেশে এলে আমরা সবাই একসঙ্গে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। ১৫-২০ দিন আমরা কলকাতা ছাড়াও আরো কয়েকটি জায়গায় গিয়েছি। এর মধ্যে অজয় রায়ের শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিজড়ানো বারানসও ছিল। প্রধানত আমরা বিমানে চলাচল করলেও অজয় রায় ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর শরীর লম্বা ভ্রমণের ধকল বইতে পারছিল না। ছেলেমেয়েদের তিনি…

  • রায়পুরা থেকে ময়মনসিংহ

    রায়পুরা থেকে ময়মনসিংহ

    চুয়াল্লিশ বেড়াতে আমার খুব ভালো লাগে। নতুন নতুন জায়গায় বেড়াতে আমার কোনো ক্লান্তি লাগে না। আমার রেবা মামি বলতেন, ‘জয়ন্তীর পায়ের নিচে সরিষা দেওয়া আছে। ও স্থির থাকতে পারে না।’ কথাটা মিথ্যা নয়। ঘুরতে আমার মজা লাগে। নতুন জায়গা যেমন আমাকে টানে, তেমনি নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতেও আমার ভালো লাগে। তাই বেড়ানোর কোনো…