আবুল আহসান চৌধুরী
-
বাঙালি লেখক-শিল্পীর গ্রামোফোনপ্রীতি ‘হিন্দুস্থান রেকর্ড’ সম্পর্কে অজানা অভিমত
একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাঙালির ঘরোয়া বিনোদনের প্রধান মাধ্যম ছিল ‘গ্রামোফোন’ – কালের হিসাবে ১৮৭৯ থেকে বিশ শতকের আশির দশক পর্যন্ত। একটু বিস্মিতই হতে হয় এ-কথা জেনে যে, টমাস আল্ভা এডিসনের ‘গ্রামোফোন’-যন্ত্র আবিষ্কারের (১৮৭৭) মাত্র দু-বছরের মধ্যেই এই যন্ত্রটি বঙ্গদেশে পৌঁছে যায়। পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান : ১৮৮৯ সালে স্যামুয়েল হ্যারাডেন ‘একটি নিম্নমানের ফোনোগ্রাম যন্ত্র’…
-
শতেক বরষ পরে উদাসী তালাশ রাখলেন সাঁই কূপজল করে
অন্নদাশঙ্কর রায় (১৯০৪-২০০২) পেশা সূত্রে অখণ্ড বঙ্গে বিভিন্ন জেলা ও মহকুমায় ম্যাজিস্ট্রেট, মহকুমাশাসক, জেলাশাসক ও জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেকালের নদীয়া জেলার কুষ্টিয়ায় মহকুমা শাসক হিসেবে তিনি কর্মরত ছিলেন ১৯৩৫-৩৬-এ। এই কালপর্বে নানাসূত্রে যেসব মানুষের সঙ্গে তাঁর অন্তরঙ্গ সম্পর্ক রচিত হয়, তাঁদের কথা সময়ের দীর্ঘ-ব্যবধানেও তিনি বিস্মৃত হননি। কুষ্টিয়ায় তাঁর কর্মস্থলে একজন উদার-অসাম্প্রদায়িক মুক্তমনের…
-
মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু মৈত্রেয়ী দেবীর সাক্ষ্য
মৈত্রেয়ী দেবী (১৯১৪-৯০) এত রক্ত কেন? নামে একটি বই লিখেছিলেন, সে-বই কলকাতায় প্রকাশ পায় ১৯৮৫-এর আগস্টে। রবীন্দ্রনাথের (১৮৬১-১৯৪১) রাজর্ষি (১২৯৩) আখ্যানে হাসি নামের একটি ক্ষুদ্র বালিকা মন্দিরে পশুবলির ‘রক্তস্রোতের রেখা’ লক্ষ করে সবিস্ময়ে রাজাকে প্রশ্ন করে, ‘এত রক্ত কেন!’ এই প্রশ্ন রাজার মনেও জাগে অভিন্ন কাহিনির ভিন্ন প্রেক্ষাপটে – রবীন্দ্রনাথের বিসর্জন (১২৯৭) কাব্যনাটকে। এখানে মন্দিরে…
-
বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও অংশুমানের গান
সংগীতের আবেদন যে-কত গভীর ও মর্মস্পর্শী এবং লোকরঞ্জনের অনন্য উপকরণ হতে পারে, তার সাক্ষ্য মেলে নিচের এই পঙ্্ক্তি-ক’টিতে : ‘… উপস্থিত হয়ে দেখলাম … আব্বাসউদ্দিন সাহেবকে দেখবার জন্য হাজার হাজার লোক সমাগম হয়েছে। বাংলার গ্রামে গ্রামে আব্বাসউদ্দিন সাহেব জনপ্রিয় ছিলেন। জনসাধারণ তাঁর গান শুনবার জন্য পাগল হয়ে যেত। তাঁর গান ছিল বাংলার জনগণের প্রাণের গান।…
-
আবুল হাসনাত : রোদ্দুর ঢেকে যাচ্ছে কালো মেঘে
চলে যাওয়ার কয়েক মাস আগে জার্নিম্যান বুকস থেকে তাঁর শেষ বই বের হয় – হারানো সিঁড়ির চাবির খোঁজে – অন্তরস্পর্শী এক স্মৃতির আখ্যান। সে-বই শেষ হয়েছে এক দার্শনিক-উপলব্ধির ভাষ্যে : ‘জীবন প্রবহমান। জীবনের পথে এখনও হেঁটে চলেছি। দেখা যাক চলতে চলতে কোথায় গিয়ে তা শেষ হয়। পথের শেষ কোথায়? তবু আমার এই পথ চলাতেই আনন্দ।’…
-
আনিসুজ্জামান : তাঁর মনীষী-বীক্ষণ
স্মৃতিই হারিয়ে যাওয়া সময় ও মানুষকে ফিরিয়ে আনে। ‘স্মৃতি সততই সুখের’ – প্রবচনতুল্য এই কথাটির দ্যোতনা অস্বীকার না করেও বলা যায়, এই সুখের আড়ালে আবার লুকিয়ে থাকে কত না দুঃখের ইতিহাস, শোক-বেদনা-বিচ্ছেদের দীর্ঘশ্বাস আর হাহাকার – বিস্ময়ের জাগরণ, লুপ্ত রত্নের উদ্ঘাটন। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মনীষী-বীক্ষণ দুই পর্বে বিন্যস্ত : বিদ্যাসাগর ও অন্যেরা (২০১৮) গ্রন্থে আলোকপাত করেছেন…
-
জন্মশতবর্ষের শ্রদ্ধা-স্মরণ মোহিনী চৌধুরী : প্রণয় বিরহ মুক্তি জাগরণের গীতিকবি
একসময়ে গ্রামোফোন রেকর্ডের জন্যে যাঁরা গান লিখতেন বা সুর করতেন, রেকর্ড লেবেলে তাঁদের নাম ছাপা হতো না। তিরিশের দশক থেকে ধীরে ধীরে এই নিয়মের পরিবর্তন ঘটে, শিল্পীর পাশাপাশি গীতিকার-সুরকার উভয়ের নামই রেকর্ডে উল্লেখ পেতে থাকে। তখন থেকে জানা সম্ভব ও সহজ হয় গীতিকারের নাম। কাজী নজরুল ইসলামের পর আধুনিক বাংলা গানের পর্ব শুরু হলো। কথা,…
-
বঙ্গবন্ধু : অন্নদাশঙ্কর রায়ের স্মৃতি-অনুধ্যানে
আবুল আহসান চৌধুরীঅন্নদাশঙ্কর রায়ের (১৯০৪-২০০২) পরিবার বংশপরম্পরায় বহুকাল ধরে উৎকলের প্রবাসী বাঙালি। তিনিও জন্মেছিলেন সেখানে – দেশীয় রাজ্য ঢেঙ্কানালে। তাঁর পূর্বপুরুষের বাস ছিল পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায় ভাগীরথীর তীরে কোতরং গ্রামে। পূর্ববঙ্গের সঙ্গে তাই তাঁদের কোনোকালেই যোগাযোগ ছিল না, তা সম্ভব হলো তাঁর চাকরির সুবাদে। ১৯৩১-এ বাঁকুড়া থেকে পদোন্নতি পেয়ে অন্নদাশঙ্কর প্রথম পূর্ববঙ্গে আসেন নওগাঁয় মহকুমা…
-
প্রাকজন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি সুধীরলাল চক্রবর্তী রজনী গো যেও না চলে
উনিশশো বিশে জন্ম, উনিশশো বাহান্নোতে বিদায় – মোটে বত্রিশ বছরের জীবন। এই সংক্ষিপ্ত আয়ুর কারণেই হয়তো গানের নেশায় মজেছিলেন শৈশবে – সংগীতে হাতেখড়ি হয়েছিল মাত্র এগারো-বারো বছর বয়সে। এই সীমিত আয়ুরেখার ভেতরেই তাই একটি অসমাপ্ত জীবন যেন একধরনের পূর্ণতা পেয়েছিল। সুরের ভুবনে যে অসামান্য অর্জন সম্ভব হয়েছিল দুই দশকেরও কম সময়ে, তাতে আশ্চর্য হতে হয়।…
-
কাজী মোতাহার হোসেন মার্জিনে মন্তব্য ও আরজ-দর্শন
একটি-দুটি শব্দ বা বাক্যে নির্মিত সে-মন্তব্য কখনো প্রশংসামূলক, আবার কখনো বা রসাত্মক