কবিতা

  • চারজন লোক হেঁটে আসে তারা

    ইকবাল আজিজ   চারজন লোক হেঁটে আসে তারা একলাশ কাঁধে বহুদূর থেকে; আকাশে আকাশে তুষারিত মেঘ সাদা গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো। চারজন লোক বিড়বিড় করে; পৃথিবীর পথে হেঁটে যায় তারা – চলতে চলতে দেখেছে যে তারা অনেক আকাশ দুর্ভিক্ষ শাসকের নীল কূটনীতি কতো কাঁটাতার চারদিকে; চারজন লোক দেখেছে যে তারা ব্যথা-বেদনার সুরগুলি সব পথে পথে ঝরে;…

  • আমার পা

    মমতাজ বেগম   টলোমলো পায়ে ভর করে কখন প্রথম ভূমিতে দাঁড়িয়েছি জানিনে কতবার পড়েছি-উঠেছি তা মনে নেই তারপর হাঁটা – অবিরাম হাঁটা চিরকালের বিশ্বস্ত সঙ্গী আমার।   কখনো তেমন করে মূল্য বুঝিনি তোমার আলো বাতাসের মতো তুমি আমার আজন্মের সাথি চিরকাল বহন করবে ভার এ রকমই বিশ্বাস। তুমি যে কখনো ক্লান্ত হতে পারো একথা কখনো…

  • কী করে তোমাকে ভুলি

    মাহবুব সাদিক   কী করে অধরা গ্রহণশেষের আংটির মতো হীরে ঝলকানো তোমাকে কী করে ভুলি? নক্ষত্রের মতো তুমি শেষে দূরভুবনের কেউ!   তোমাকে খুঁজেছি সংগোপনেই কীর্তিনাশার তীরে এখানে-ওখানে কোনাকানছিতে বুলিয়েছি শ্যেনচোখ আকাশে-পাতালে খুঁজে গেছি নিরাময় – হৃদয়ের ক্ষত হয়তো তাতেও ঢাকবে না কোনোমতে নিরিবিলি ভোজ জুটবে না মাঝরাতে নিরাশার খাতে স্থিরতর হতে দেবে না আমাকে…

  • গ্রহণ-বর্জন

    কালীকৃষ্ণ গুহ   অনেক রাত হলো অনেক পুণ্য – জানি এ-অর্জন বহু প্রতীক্ষার বলি না কোনো কথা গহন সময়ের অন্তরিক্ষে এ এক ভিক্ষা।   রাত্রি বহমান সকলই তুচ্ছ গ্রহণ-বর্জন নশ্বরের ঘুম ঈশ্বরীয় জাগা সকলই খেলা শুধু বাঁচাই শেষ কথা আনত ফাল্গুন।   ‘অনেক রাত হল’ প্রাচীন কণ্ঠ।

  • ইস্ট সী, পোল্যান্ড, ২০১৪

    অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত   সিন্ধুমরালের ডাক নবজাত শিশুর কান্নার সঙ্গে মিশে গিয়ে তৈরি করে নতুন সিম্ফনি   সমুদ্রকিনারে আমি লেখার কেবিন থেকে দেখি স্নানার্থীরা জলের ভিতরে অকাতরে মজে গিয়ে পুনর্বার সৈকতে তাদের নিজ-নিজ অবসরচর্চার ঝুপড়িতে ঢুকে যায়, ইসাবেল আলেন্দের বই পড়ে, পড়তে-পড়তেও করুণামিশ্রিত ব্যঙ্গে আমাকে অবলোকন করে।   এমন সময় বেলাভূমির বিস্তীর্ণ বালুকায় ভূমিষ্ঠ নবজাতক কঁকিয়ে…

  • বিশ্বাস-অবিশ্বাসের গল্প

    শহীদ কাদরী   সেদিন দুপুরবেলা অন্যমনে ছিলাম ব’সে মন্দির-চত্বরে আমার কৈশোরের এক ছায়াচ্ছন্ন দিনে।   এয়ারগানের ছর্রাবেঁধা নিহত কাকের কলকাতাকে স্মৃতির একটি গুচ্ছে মিলিয়ে নিয়ে, সংহত ক’রে, বসেছিলাম আমরা তিনজন (আমি, জাহাঙ্গীর আর সুকুমার)। আবাল্য অবাধ্য কথক আমি নতুন   বন্ধুদের শোনাচ্ছিলাম কলকাতার ফুটপাথ থেকে ফুটপাথে ঘুরে ঘুরে আমার (জন্মদিনে পাওয়া) এয়ারগান কত-না চড়ুই আর…

  • কালো তিল

    সুমন রায়হান   আকাশের ওপারে আকাশের নীল মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়ে নীল আবারো দীপ্তিময় হয় নীলের আধিপত্য কাগজ কুড়াতে কুড়াতে কাগজ কুড়ানি মেয়ে থলের মধ্যে ভরে নেয় টুকটুকে লাল গোলাপ দীপ্তিময় আর উদ্যানের আলোকিত আকাশে সবুজের সমারোহ ভরে নেয় বাগানের ঘাসফুল। দীপ্র দুপুরের ঝলকানিতে রোদেলা আগুন পুড়ে পুড়ে নিঃশেষ শীতের সন্ধ্যা তারারা কক্ষচ্যুত নতুনের আগমনে…

  • কপট ঘুমের মোম

    হারিসুল হক   মেঘ চিরে নেমে আসা আলোর প্রপাত তাকে আমি কোন মাপে গাঙচিল ডাকি তাকে আমি কেন তবে পোষাপাখি ভাবি যে-পাখি আমার নয়, এমনকি স্বপ্নেও তার জন্য কোনো খাঁচা করিনি নির্মাণ   কীভাবে মানুষ চেনে জীবনের চাবি কীভাবে মানুষ খুঁজে মানুষের ঘর বিতল সাগর আর অরণ্যের বুনো আবহাওয়ায় কীভাবে ইচ্ছের জিভ প্রসারিত হতে থাকে…

  • নীলকণ্ঠ অথবা বিনিদ্র রজনি

    অভিজিৎ দাশগুপ্ত   আমরা হেঁটেছি একশ উপবন চলে গেছি আবার ফেরত এসেছি হা-ভাতে। আমরা হেঁটেছি জ্বলেপুড়ে   রোদ ও বাতাস টের পায়, একদলা অগ্নিও সঙ্গে যেতে চায়… সমস্ত অশ্বের হ্রেষাধ্বনি বাগানবাড়ি পিছনে ফেলে রেখে বিনিদ্র রজনি   কীভাবে জেনেছে লালমুন্ড ছোঁয়াতেই ফুলে ওঠে পৃথিবীমাতার গর্ভাধার

  • পরিতাপের পরিধি

    হাফিজ রশিদ খান   চিপা গলি আমার ভালো লাগে না খালি ঠেলে খালি ফেলে দেয় উঠে দাঁড়াতেই দিচ্ছে না এসব মহল্লার সমাজকর্মীরা   তাহারা দারুণ শ্মশ্রুমন্ডিত সুন্দর – বায়তুল্লায় নিতুই গতায়াত নিবিড়-নিবিড়তম সেজদায়   উহাদের ঝলমলে শামিয়ানাযুক্ত রোশনাইভরা দাওয়াতে গবাদিপশু কতো খুশবু ছড়িয়ে রান্না হয় স্বচ্ছ পলিথিন ভরে চৌকস কর্মীরা চাঁদাদাতাদের ঘরে-ঘরে পৌঁছে দেয় কায়দাসমেত…

  • মায়াটান

    ওবায়েদ আকাশ   মায়াটান একাই বেড়াতে আসে, হাসে – তোমার কি বড়সড় ঘর, চোখমুখ, গ্রীবাকাঁধ সঙ্গে নিয়েই ভ্রমণবিলাসী হওয়া যাবে?   দীর্ঘায়ু মুঠো করে আলোয় উড়িয়ে দেওয়া মনোবল এখনো কি বোতলে নিবদ্ধ জারক, মেঘের রুপালি জলে অবিকল ফিরে পাওয়া যাবে?   এক হাতে বাঁশি আর তৃষ্ণা দুধে ভাতে বলো তো পরিচ্ছন্ন ঘুমে স্বপ্নেরা খেয়েপরে ঘুম…

  • তাবরেজির তবলাবাজি

    মারুফ রায়হান   তিনি জাদুকর : ঝালাই-ঢালাই শব্দে কড়ি ও কোমলে তাল ঠুকে দেন গাল যত বিসদৃশ বেভুল বিটেল বোল তুলে অাঁকছেন ভোল পালটানো বহুল ভ্রান্তি ঠোঁট টিপে স্বচ্ছন্দে সাধছেন সম, নেই বিন্দুসম শ্রান্তি পুব বা ঈশান কোণ হতে আনেন একটি স্বরবর্ণ জোড় খুঁজে নেন তার সুদূর নৈঋত নভঃ ছেনে আওয়াজ বিনাই শব্দ দিয়ে মুহুর্মুহু…