কবিতা
-
চেয়েছিলাম
শাহজাহান হাফিজ চেয়েছিলাম আলো, অনেক অনেক আলো! তার বদলে – আমাদের চারিদিকে এখন জমে উঠছে কেবলই অন্ধকার; বিশাল বিপুল অন্ধকার! এই কি আমাদের ভাগ্যলিপি, জন্মভূমি, জননী আমার? চেয়েছিলাম সুবজ শস্যভূমি, স্রোতময় বেগবতী নদী, উজ্জ্বল আলোকিত মানুষজন। তার বদলে – আমাদের চারিদিকে এখন শুধু শূন্য ফসলভূমি, জলহীন নদীহীন বিবর্ণ দেশ; বিপন্ন মানুষজন! এই…
-
লোনাজল
আলোক সরকার সাদা রঙের বড় ফুল। ভোরবেলায় শুরু করেছিল এখন তার কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। জনমানবহীন বাড়ি নিঃস্বতা বলছে। যাদের থাকার কথা ছিল তাদের থাকা অনাবশ্যক হলো। অনাবশ্যকতা প্রশ্ন হচ্ছে সাদা রঙের একটা ফুল আর সেই অজ্ঞানতা শূন্য ঊর্ধ্বমুখ হয়েছে। সে গ্রাস করতে চাইছে বৃক্ষ, তরুণ মেঘপুঞ্ছ। বারুকলা, কতটুকুইবা করবে। তার…
-
পতনের শব্দ মধুর
মিঠুন রাকসাম মাঝে মাঝে ওপর থেকে ছেড়ে দিতে হয় কাচের বাসন – ভরাট ব্যাংক দেখতে হয় কীভাবে ফাটে – কীভাবে ভাঙে শুনতে হয় ফাটার সুর – ভাঙার ছন্দ প্রিয় কোনো পাত্র হলে – পতন জমে ওঠে পাত্রের মালিক যেই হোক – জমে ওঠে চূর্ণপাত্রকণা কাচ বা মাটির পাত্র মেয়েদের প্রিয় সহজেই ফাটে বা…
-
একটা পথ শুধু চলে গেছে পপিফুলের
নভেরা হোসেন এক একটা পথ শুধু চলে গেছে পপিফুলের একটা ত্রিভুজ আয়না বাঁকা চাঁদ চোখদুটো বন্ধ, হাত দিগন্তে প্রসারিত শত শত প্রজাপতি শত শত ঘাসফড়িং বৃষ্টির পরের মাঠে তরঙ্গায়িত জল সময় বয়ে যাচ্ছে তোমরাও বয়ে যাচ্ছো সময়ের বিপরীতে দুই পেছন থেকে দেখা। দৌড়ে একটা বাস চার চাকার। পাশের সিটে বরাহনগরের ছেলে। কী এক…
-
ঘোড়া
সন্দীপ চক্রবর্তী যেখানে যা থাকার কথা থাকে না অন্ধিসন্ধি আনাচ-কানাচ ঘুরে নিজের কাছে দাঁড়িয়ে থাকি একা যে-নামে যার ডাকার কথা ডাকে না একটা জমাট অন্ধকার অন্ধ কয়েকজন পায়ের শব্দে জানতে চায় পিতৃপরিচয় কী করে বোঝাই আমার কোনো শেকড় নেই গড়ানে পাথর যেতে যেতে, দাঁড়াই কিছুক্ষণ যা কিছু ফুটে ওঠার কথা ফোটে না…
-
এলেংজানি নদী
শিহাব শাহরিয়ার এলেংজানি নদী বালুমুখে তুমি শুয়ে থাকো এইখানে এভাবেই শুয়ে থাকো শীতলপাটির শীতল-স্বরে অনুভবে তোমার পাশে জেগে আছে হিঙ্গানগর, মুর্তাবাগান সম্পাদক শামসুল হক তোরণের উদীপ্ত আয়োজন দ্বিতীয় দিনেও সন্ধ্যা নামে প্রথম অন্ধকারে জোনাকির মতো খুঁজি কুপিবাতি ধূপের ধোঁয়া পিসির হাসি অন্ধ উঠোনের কোনা রাতের পথে যারা ধূলির নিশানা খোঁজে আমরা…
-
সত্তরের বন্ধুদের প্রতি
আহমদ আজিজ পাতাঝরা প্রান্তরের মাঠে তুমুল ঘূর্ণির দিনে বিস্তারিত বৃক্ষের সারির দৃশ্যপটে নিশ্চুপ বৃক্ষের মতো আমিও ছিলাম – মনে পড়ে? আমাদের গেছে দিন একদিন শর্তহীনতায়। ভবঘুরে জীবনের মতো আমিও তো দাঁড়িয়েছিলাম একা অনির্দিষ্ট অপেক্ষার মতো কোনো সাধারণ অচেনা রাস্তার মোড়ে, ঝড়ো-জীবনের দিনে আমারও তো কেটেছে সময় ধোঁয়া আর ধুলা জমে-ওঠা অনর্থক অপেক্ষার চা-র…
-
অর্ঘ্য
(প্রয়াত বিজ্ঞানী অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলামের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে) শাহেদ রহমান যখন গেলেন চলে তিনি তার মুখখানি্ একখন্ড সোনার মতন জ্বলজ্বল করছিল সবুজসমৃদ্ধ চিরচেনা পাহাড়ের বুকে একটি বাড়িতে। যখন মানুষ পৃথিবীকে ফেলে চলে যায় ওপারে তারার জলসায়, যারা বেঁচে থাকে – বন্ধু ও স্বজন তারা সকলেই আসে আমন্ত্রণহীন – তারা আসে ছায়াঘেরা পথ…
-
বক্ষ্যমাণ অংশটুকু
হারিসুল হক বক্ষ্যমাণ অংশটুকু হাওয়া থেকে পাওয়া হঠাৎ বৃষ্টিতে বোধ যে-প্রকারে হয় সচেতন কিছুটা সেভাবে কিছুটা স্বভাববশে একাকী বারান্দায় অস্পন্দ দোতারা কোলে বসি তন্ময় অতিশয় সতর্কতায় পাতি উদ্গ্রীব কান অই বুঝি বেজে ওঠে গেরুয়ার প্রাণছোঁয়া তান বক্ষ্যমাণ অংশটুকু বন থেকে পাওয়া মৌয়ালিরা বন থেকে মৌচাক কাটে যে-কৌশলে দার্শনিক প্রজাপতি ফুল থেকে মধু টানে যে-প্রকারে…
-
ফাটল
জরিনা আখতার অকস্মাৎ দেয়ালের ফাটলটি প্রথম দেখে আমি অাঁতকে উঠেছিলাম – কেননা, নিয়ম অনুযায়ী ফাটলটি আরো বৃদ্ধি পাবে, একসময় খসে পড়তে থাকবে দু-একটি করে ইট, তারপর দেয়ালের বৃহৎ অংশ ধসে পড়বে সশব্দে – তাহলে তো উন্মুক্ত হয়ে যাবে, আমার সবকিছু, আমার দীর্ণ জীবন, জীর্ণশীর্ণ সংসার, হতদরিদ্র ঘর-গৃহস্থালি সবার চোখে ধরা পড়ে যাবে, আমার সমূহ…
-
জানি
আশিস সান্যাল এখন ঝড়ের রাত চারদিকে প্রবাহিত হাওয়া। কোনখানে আছ তুমি? হলো না তোমার কাছে আর ফিরে যাওয়া। এরপর জানি তুমি বন্ধ করে দেবে সব প্রান্তিক জানালা ছড়াবে ধূসর শুধু বুকের ভেতরে ক্রমে তীব্র হবে দূরত্বের জ্বালা। জীবনের সব কথা কে কবে জেনেছে অনেক গোপন কথা যায় না তো বলা পড়ে থাকে অন্ধকারে।…
-
না-ছুঁয়ে বলা
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত থাকে শুধুই আকাশি দূর – যে-নারী তার শাঁখাসিঁদুর নবোঢ়া নাম ঘুচিয়ে দিয়ে ছুঁল আমার কাঁধ, কনুই, কী করে তাকে আমিও ছুঁই! তাকে না ছুঁয়ে বলেছিলাম : থাকে শুধু এ হৃদয় জুড়ে আকাশি দূর বোরোবুদুর যেখানে কিনা একের পরে আরেকজন বুদ্ধ এসে কী ভালোবেসে ওষ্ঠাধরে জ্যোৎস্না জ্বেলে শূন্যতার আরতি করে তার…