কবিতা

  • মৃত চাঁদ

    সুহিতা সুলতানা শহরের সবচে’ মতলববাজ ছোকরা স্বেচ্ছাসেবিকার হাত ধরে পালিয়েছে গতকাল। তারপর মানুষের ঈর্ষা বলে কথা! স্তব্ধ রাতের অন্ধকারে অগ্নিদগ্ধ পথে ক্ষ্যাপা বাউল গেয়ে ওঠে জীবনের গান। দূরে বহুদূরে দৃশ্যত এক বৃদ্ধ মাতাল সুরম্য নাস্তিক সেজে বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যক্তিগত গলা। এ সময় কে যেন ঝড়ো বৃষ্টির মধ্যে দৌড়তে থাকে। কী চায় সে? সে কি আত্মহত্যা…

  • জীবনের ক্লোরোফিলে রোদে

    হাসান হাফিজ বনেই ফোটে না শুধু ফুল আমরা জানি ভুল হয়ে মনেও সে ফোটে রাতের কুহেলি ছিঁড়ে চমৎকার নবজাতকের মতো ক্রন্দনে জানান দিয়ে আলুথালু সূর্যও তো ওঠে রোদ্দুর গড়িয়ে পড়ে শিশু রোদ আলো মুঠি মুঠি এতক্ষণে আঁধারের পর্ব শেষ আপাতত লম্বাটে বিশ্রাম নিরঙ্কুশ ছুটি কবিও কি ছুটি চায় গুটিগুটি পায়ে চলছে স্বপ্নশিশু তার কবি তো…

  • বদলে যায় পথের প্রকৃতি

    মাহমুদ কামাল পাড় ভাঙতে ভাঙতে কত পথ নদী হয়ে গেল চলতে চলতে কত বন্ধু বন্ধুর পথের মাঝে ভেঙে দিলো প্রীতি জীবনযাপনের নানা চক্রযানে দুর্ঘটনা সাক্ষী হয় কৌশলের কাছে যেমন ঝড়ের পর তাণ্ডবের চিহ্নসূত্রগুলো ক্ষতিকেই বৃদ্ধি করে দ্রুত তেমনই বন্যার পর শুশ্রƒষার মতো পলিমাটি বর্ণময় করে তোলে পার্থিব জীবন পাড় ভাঙতে ভাঙতে যত পথ নদী হয়ে…

  • পদচিহ্ন

    শেলী নাজ প্রাণ পেতে বসে আছি পাবো বলে তোমার পায়ের চিহ্ন তোমাতে আক্রান্ত রাতে অনিদ্রা শুয়েছে চক্ষুতে ব্রজধামে পাঁজর পেতেছি তোমার বজ্রপাত নেব বলে নিষেধের আংটা খুলে ধরিত্রী আমার লুটিয়ে পড়ল তোমার রক্তাভ পায়ের পাতায় ধরা দিতে দেখা পাবো ভেবে চোখ পেতে নিচ্ছি এই অদর্শন মুমূর্ষু শরীর, বেজে ওঠে øায়ুতল তোমার উপলে বৃক্ষের নবীন রং…

  • ব্যক্ত কিংবা অব্যক্ত জীবনানন্দ

    ওবায়েদ আকাশ জীবনানন্দ ঘুরে গেলেন। বসেছিলেন সজনেতলায়, ভোরে… তার মুখ থেকে কার্তিকের হিম খসে পড়ে গেলে তখন ভোর হয়, তখন জ্বর ওঠে ঝিঁঝি পোকার দেহে কিছু বললেন কিছু হাসলেন বলে জানাল বাড়ির অস্থিরপ্রাণ পাখি আমার ঘুম পেল, তোমার আগ্রহ ছিল, ঘুমে – তার মুখশ্রীর শেষে তোমার-আমার বিভ্রান্তি নিয়ে আজ যে কাঁটাতার বৈঠকের কথা; মাননীয় মেঘলাদিন…

  • অন্ধকারের রবীন্দ্রনাথ

    বিশ্বজিৎ চৌধুরী রবীন্দ্রনাথের জীবনের কথিত অন্ধকার নিয়ে প্রচুর আলোচনা হচ্ছে রকে-রেস্তোরাঁয়; এত যে আলো জ্বেলেছেন তিনি হঠাৎ সব তুচ্ছ হয়ে গেল, শুধু অন্ধকার অন্ধকার নিয়ে চিত্তাকর্ষক সব গবেষণা কাদম্বরী দেবী শেষ চিরকুটে কী লিখেছিলেন কাহিনি বিস্তারের সে কী উত্তেজনা! এত রস ও রসদ জমা ছিল কালের ভাঁড়ারে ভ্রাতৃবধূ, ভ্রাতুষ্পুত্রী কিংবা দূর-বিদেশিনী প্রতিটি সম্পর্ক ঘিরে যৌনগন্ধী…

  • ভাষা

    শুভাশিস সিনহা তুমি যে-ভাষায় কথা বলো তাকে একবার পাখি করে উড়িয়ে দিও আমাদের উঠানের গাছে এসে যেন বসে সে ডাকলেই যেন আমি শিখে নিতে পারি ভুলে যাওয়া স্বর আর সুরগুলো আমরা যেদিন এক হয়েছিলাম সেদিন ভাষাটিকে পুড়িয়েছি দুজনের অন্তর্গত আগুনে পুড়ে খাঁটি হয়েছিল আমাদের ভাষা আজ আমরা পরস্পর ছিন্ন কেউ কাউকে ছুঁতে পারি না জ্বলে…

  • মিলনের দ্বন্দ্ব

    টোকন ঠাকুর ভাষা কি সামর্থ্য রাখে, আলো দেওয়ার, তাকে, যে অন্ধ? ‘দাম্পত্য মধুর মিলন’ বইটি মুখস্থ করেও আপা-দুলাভাইয়ের দ্বন্দ্ব এক ইঞ্চিও কমল না, বরং তা বাড়ল, বেড়ে এখন বত্রিশ ইঞ্চি… একদা পালিয়ে প্রেমের বিয়ে করা ছিল প্রথম বিপ্লব, ভেঙে অনুশাসনের ছন্দ আজ ছন্দহীন দিন, ফ্যাকাসে-মার্কা-রঙিন, আমিও হয়েছি মামা এবং আপা-দুলাভাইয়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে, প্রায় নেই…

  • বিলাপ

    হাফিজ রশিদ খান রঙ্গময় বারবনিতার মতো রাত আসে দিন যায় রংচটা বিলাপ, একটি চুক্তির জন্যে শুভ সংবাদ কোথাও নেই কালো অক্ষরের দৈনিক বিন্যাসে বনভূমি বড় দুঃখে ভুলে যাচ্ছি সমভূমি সুজনের ধাম তির্যক রোদের মতো জীবিকার লাল জিভ চেটে-চেটে কেবলি বদলে দিচ্ছে পরিত্রাণের পবিত্র নাম রাতের ভেতরে দিন দিনের ভেতরে রাত পরস্পর এইভাবে কুপোকাত

  • নগ্নতা

    ফরিদ আহমদ দুলাল এক নগ্নতার প্রস্রবণ ছুঁয়ে শুয়ে থাকা সারারাত নগ্নতা উদার আকাশ বনভূমির কাঁধে পূর্ণিমা-মৌতাত সরিষার ক্ষেতে পতঙ্গের ভিড় ফুলের সুগন্ধ শোভা কামরাঙা-বরই-মটরশুঁটি ফুলের নগ্নতা মনলোভা; দুব্বার চূড়ায় জমে শিশিরে মুক্তোর দ্যুতি, জেগে ওঠে ভোর মেঘের নগ্নতা ছুঁয়ে সুদর্শন ওড়ে চিলের চিকন কণ্ঠে বাজে শোর, বৈদ্যুতিক তারে নগ্নতা কাকের বৃষ্টিতে ভেজার নেশা কাঁটাতারের দিগন্ত…

  • আমার সকল ইন্দ্রিয় অপরাধী

    খালেদ হোসাইন রাতের অন্ধকারে বা জোছনায় আমি হাঁটি আমি হাসি আমি কথা বলি – এত অপরাধ? নাকি অপরাধটা কাউকে ভালোবাসার? মাননীয় আদালত, আপনাকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসা যাবে না এই পৃথিবীতে? ব্রিজের পাশে ছাতিমগাছ ব্রিজের নিচ দিয়ে জল বয়ে যায় এপাশ থেকে ওপাশে জলের এই চলাচলে আমি শুনি ঝরনার কল্লোল – অপরাধ? মাননীয় আদালত, আমি…

  • সেই সন্ধ্যাগুলো

    চঞ্চল শাহরিয়ার সেই সন্ধ্যাগুলো কাকে তুমি দিয়ে দাও রোজ টিভি রুম থেকে বেরিয়ে বারান্দা তারপর পড়ার টেবিল আর হালকা সাউন্ডে আসিফের গান। আজ কার কথা ভেবে পার করো সন্ধ্যা কফিতে মুখ রাখতে গিয়েও ভাবছো এই বুঝি এলো দুরন্ত কিশোর। অবুজ কিশোর আর ফিরবে না কোনোদিন তবু কার জন্য যতেœ রাখো সন্ধ্যা কেন ভাবো যদি একবার…