কবিতা

  • কফিনকাব্য

    মামুন মুস্তাফা আট জুতা সেলাইয়ের ভেতরে জেগে থাকে অনুকাব্য। প্রতিটি ফোড়নে বেরিয়ে আসে ‘জুতা আবিষ্কার’। মুচির আত্মার মতো করুণ ভালোবাসা নিয়ে জুতা হেঁটে যায়। মুচি ফিরে চলে মেঘের ভেতরে। যেখানে স্বপ্নেরা স্নান সারে। উৎকণ্ঠ বিশ্বাস নিয়ে মুচি পেরেক ঠোকে কফিনের কাঠে। সারাবেলা বসে থেকে কফিনকাঠ মেলে ধরে ঝিনুক-উত্তর। তোমারও সঙ্গী কেবল প্রতারণাটুকু! মুচির চোখের গোলকে…

  • বসন্তছন্দের সবুজ রক্ত

    পিয়াস মজিদ বহু বাউল-বছর পেরিয়ে তুমি আজ রাজসভার রক্তপাতে। তোমাকে যতই ডাকি আমার দিকে; তুমি একবার ব্রেক্সিটপন্থায় তো অন্যবার ট্রাম্পে। মরচেপড়া স্টেনগান সব ক্ষুধাই শাণিত নীরক্ত এই করবীর কালে। কত নৃত্যময় রক্তের কল্লোল জীবনের উজানভাটায় দেখে থাকে – তোমার হৃদয়হ্রদে আমার কবিতার এই অক্ষম অক্ষর ভেসে যায় জলের আগুন-আকারে।

  • একটি পুরনো স্বপ্ন

    জলধি হালদার গভীর রাতে এই শহরের জেব্রা ক্রসিং পার হয়ে, সে উদোম রাস্তাগুলো মরা জ্যোৎস্নার ভেতর ঢুকে গেছে তার নির্জন বারান্দায় ঘুরে ঘুরে একজন লোক পুরনো স্বপ্ন কুড়োয়। কুড়োতে কুড়োতে উপচে পড়ছে কাঁধের ঝোলা ভেঙে যাওয়া স্বপ্নের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধুর টুংটাং। বয়সের গাছপাথর না-থাকা লোকটি বেশ কুঁজো হয়ে ঝোলা বইছে। এগুলো নিয়ে কী হবে? সারারাত…

  • পাথর আলাপ

    দিলীপ কির্ত্তুনিয়া পাথরও একটা কারণ অনেক কিছুর। পাথরও নিস্তব্ধ বুকের উদাহরণ – অনেক সময়ে। পাথর আমাদের লাগে কাজে অনেক কাজে। পাথর কাজে লাগে ব্যবহৃত হলে কথা বলা শুরু করে। যে পাহাড়ের পাথর সেই পাহাড় আড়মোড়া ভাঙে আর চলতে শুরু করে। পাথর আলো জ্বালে ঘরবাড়ির পাথর জ্বালায় শিখা রাস্তাঘাটের পাথরের বুকে ঝরনার গান নামে। পাথরের বুকে…

  • গল্পের শেষ থেকে শুরু

    জরিনা আখতার অকস্মাৎ সমূলে উৎপাটিত হলো গাছটি নানারকম শব্দ করতে করতে অনেকটা খেলার মাঠে বালকদের হইচই করার মতো, তারপর উত্থাপিত হলো নানা প্রশ্ন – গাছটি এইভাবে উপড়ে পড়লো কেন কেউ কি শত্রুতা করে গোপনে গোড়ার মাটি কেটে গাছটিকে আলগা করে দিয়েছিল নয়তো মাটিরই আর ধারণক্ষমতা ছিল না গাছটিকে বহন করবার অথবা ফিনিক্স মাখির মতো গাছটিরই…

  • শালফুল

    মজনু শাহ শালফুলের গন্ধে ভরে উঠল এই অ্যাম্ফিথিয়েটার। হেসে চলেছে বর্ণচোরা। কুঞ্জ নামের মেয়েটি তাকে থামানোর চেষ্টা করছে। আরো কে কে এলো রে, রতœপাথরে হেলান দিয়ে আছে বুঝি কোনো অন্ধ চাঁদ! চাইছি এখন বুনোগদ্য, দেবতার হাসি, ঘুম আর সমস্ত রুমঝুম। যে-ছন্দে ভ্যাগাবন্ড ঘোরে জঙ্গলে। গানে গানে ফর্দাফাই হয় বুলবুলি। যে-ছন্দে মুছে যায় উড়ন্ত ঈগলের কায়া।…

  • প্রেম ও মাইক্রোসফ

    মোস্তফা তারিকুল আহসান ছেলেটি তাকিয়ে আছে মেয়েটির চোখের দিকে বুভুক্ষের মতো মেয়েটি কথা বলছে নদীর ছলছল জলের শব্দের মতো সেখানে মাথার ওপর এক টুকরো মেঘ ছিলো তাদের পেছনে অস্পষ্ট শাদা দেয়াল ছিলো আমি তাকিয়ে ছিলাম দুজনের কথা বলার ভঙ্গির দিকে মেয়েটির ভ্রু কাঁপে, সে বাঁ হাত দিয়ে তার চুল শাসন করে পাতলা কলাপাতা রঙের ওড়নার…

  • সমুদ্রসংগীত

    তুষার কবির সমুদ্রও মাঝে মাঝে গেয়ে ওঠে তার রাতচেরা সেরেনাদ – মাঝরাতে আরো শোনা যায় তার মার্মেইড স্বরে কান্না – দূর তাঁবু ও বাতিঘর থেকে উঠে আসে রিনরিনে সাইরেন – মাস্তুলের হাওয়ায় ভেসে আসে নৈঃশব্দ্যের ঘুমঘোর বীণা! ঝিনুকের বুকঝিম্ ঘুম আর প্রবালের দুঃখগাথা নিয়ে সমুদ্রও মাঝে মাঝে বলে ওঠে জলনূপুরের জমানো কিন্নরী – ফুঁসে ওঠা…

  • শিশুপুত্রের অভিলাষ

    ওবায়েদ আকাশ টেবিল থেকে লাফিয়ে নামছে কবিতার খাতা আমার শিশুপুত্র কবি হতে চেয়ে বায়না ধরেছে এ-বছর খাতাটি লাফিয়ে নামছে মাটিতে আর ছেলেটি তার নিচ দিয়ে অনায়াসে ঢুকতে পেরে এক অসামান্য খেলায় মেতে উঠেছে পড়ে যাওয়া খাতার শরীরে হাত দিয়ে দেখি তপ্ত জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে গা ছেলেটি মা মা করে কাঁদছে আর বাবার সংগ্রহ থেকে একটি…

  • বিশ্বায়ন বিপণিবিতান

    হাফিজ রশিদ খান বাস্তবতা নামের আগ্রাসী জানোয়ারের কবলে দিনগুলো যাচ্ছে বোবা ও বধির বিশ্বায়ন বিপণিবিতানে সুচেতা দেশজ শুভাশিস কল্যাণে বিস্তৃত লোকপ্রেম দীপময় আলাপচারিতা বিশ্বাস ও নিশ্বাসের বহমান ঘ্রাণ কান্নারত লবণের ঘাম – এ-জন্তু কেবলি কুপিয়ে-কুপিয়ে খাচ্ছে অথচ এ-রক্ত মৃত্যুবিদারী মহান ফাল্পুনের দশদিকের আবর্তে পা রাখা কঠিন সত্যচারী সেনানীর সংবহনতন্ত্রে তাই জাগছে বিলাপ : আনো রুধির…

  • দেশভাগের মানুষ

    মাসুদুজ্জামান আকাশ একটা নীল তুলি হাতে নিয়ে এঁকে চলেছে মৃত্যু ও বিষাদ সেই থেকে বিষাদ একটা প্রগাঢ় আয়না যতই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নিজেকে দেখো আমাদের মুখগুলি সেখানে কাচের মতো স্বচ্ছ ও ভঙ্গুর তোমার জ্বলন্ত গ্রীবা মেঘের মধ্যে ম্রিয়মাণ ছিল কিন্তু সে তুলে আনলো জল ভালোবাসার হিমশীতল বরফকুচির রক্তাভ সব টুকরো টুকরোগুলি জোড়া দিতে দিতে আমরা গড়ে তুললাম…

  • প্রহরগুলো প্রহরে নেই

    তারিক সুজাত ১. অপেক্ষায় ছিল সকাল না চাইতেই দুপুর এসে গেল বিকেলকে বলে রাখি ইশারায় তুমি দেরি করে এসো… বহুদিন পর দুপুরটাকে বেঁধেছি ভোরের স্নিগ্ধতায়! ২. রোদ, তুমি কতটা পুড়েছো বোঝেনি বিহ্বল সকাল! কাল নিরবধি – দুপুর গড়িয়ে গেল, সন্ধ্যা আসন্ন… অথচ সকাল শূন্যতার আঙুল ছুঁয়ে এখনো প্রতীক্ষায়; দুপুর দুপুর তুমি কি পথ হারিয়েছো?