ছোট গল্প

  • ক্রাইসিস

    প্রবালকুমার বসু প্রথমটা বুঝতে পারেনি বিতান। ভেবেছিল গলায় ঘুমের রেশ লেগে থাকাটাই কারণ হবে হয়তো। সকাল থেকে দুজনকে ফোন করেছে। দুজনেই ওর খুব চেনা। নিয়ম মেনে প্রত্যেকদিন না হলেও প্রায় প্রতিদিনই কথা হয়। অথচ কেউই বিতানকে চিনতে পারেনি। ভালো করে চোখ-মুখ ধুয়ে এসে, জল খেয়ে বাসবীকে ফোন করল বিতান। বাসবী ওর কলিগ। পাশের টেবিলেই বসে।…

  • ধনবিজ্ঞানের শিক্ষকের খোঁজে

    দিলওয়ার হাসান এটা সেই সময়ের গল্প যখন অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালুর মাধ্যমে মফস্বলের ডিগ্রি কলেজগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে পরিণত করা হয়েছিল। বড় শহরে গিয়ে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ ছিল না যাদের তাদের জন্য ওই ব্যবস্থা এক স্বর্ণযুগের সূচনা করে। ছোটবেলা থেকে আমার নিজের স্বপ্ন ছিল ইংরেজি সাহিত্য পড়ব অনার্স নিয়ে। আমার সেই স্বপ্ন…

  • একটি ভূতের বাড়ির আজগুবি গল্প

    মীনাক্ষী সেন আমার বাবাকে আমার মনেই নেই। অথবা যতটুকু মনে পড়ে তা মায়ের মুখ থেকে শুনে শুনে। একটা মানুষ, বিরল প্রতিভা, অতল স্নেহ, অসীম সাহস আর স্বপ্নময়। কিন্তু বাবা যে নেই আমার জীবনে, সেই বাস্তবের পরিপ্রেক্ষিতে সত্য একটাই যে, মা-ই আমার জীবনে সবকিছু। আমাকে কোলে করেছে, বড় করেছে, গুনগুন করে ঘুমপাড়ানি গান শুনিয়েছে, গরাস মেখে…

  • আবু সালেকের কনফেশান

    বুলবন ওসমান সামনে কোনো গির্জা নেই, ফাদারও নেই, আবু সালেক ক্রিশ্চানও নয়, করেনি কোনো অপরাধ বা পাপ যে তাকে কনফেশান করতে হবে। তবু ফজল যখন তাকে প্রশ্নটা করে বসে, তার মধ্যে অকারণ একটা অস্বস্তি কাজ করতে থাকে। সেটা ঠিক অপরাধবোধ নয়, পাপবোধও নয়, তবু একটা ঊনতা মনকে  অস্বস্তিতে ভর দেয়। ব্যাপারটা যে কী, সে নিজেও…

  • অপঠিত পার্লবাক, প্রার্থনা ও বাজি

    নুশেরা তাজরীন আজকাল গুলশানের কথা বড় বেশি মনে পড়ে সন্ধ্যারাণীর। একটু খুঁটিয়ে দেখলে ঠিক গুলশান না, তার ঘরের তাকে রাখা কালচে-সবুজ মলাটের বইটার কথাই মনে পড়ে, প্রথম পাতায় নিউজপ্রিন্টের চোষকাগজে ফাউন্টেন পেনের নীল কালিতে শিরা-উপশিরা বের করা – ‘গুলশানকে শুভেচ্ছার নিদর্শনস্বরূপ ক্ষুদ্র উপহার, ইতি কাজল’ – লেখাটাও তার চোখে ভাসে। বইটা সে পড়েনি, শুধু দেখেছিল;…

  • গোলাপ ও মোহনলাল

    আহমেদ মুনির মোহনলাল এই পাড়ায় থাকত। ১৭ বাই সি হলুদ চারতলা বিল্ডিংয়ের নিচতলায়। কিন্তু সে-ব্যাপারে নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারে না। এখন সোবহান সাহেবকে জিজ্ঞেস করলে তিনি কপাল কুঁচকে পাল্টা প্রশ্ন করেন – ‘কোন মোহনলাল? পনেরো বছর ধরে এই বাড়িতে আমরাই থাকি। কই এমন নামে এখানে কেউ ছিল বলে শুনিনি তো।’ লিচুবাগানের গলিটা সরু…

  • নহ মাতা নহ কন্যা

    রফিকুর রশীদ কার্তিকের কুয়াশা এবার যেন আশ্বিনের গোড়াতেই ঘিরে ধরেছে চারিদিক। সন্ধ্যা ঘনিয়ে নামতে না নামতেই মিহি বরফকুচির মতো কুয়াশা পড়তে শুরু করে। সেই কুয়াশায় ভিজে ভিজে গ্রামের বউ-ঝিয়েরা আসে পূজামন্ডপে ঠাকুর দেখতে। প্রতিমা-দর্শনকে তারা বলে ঠাকুর দেখা। তাদের কৌতূহলের অন্ত নেই। সারাদিনের ঘর-গেরস্থালি সামলানোর পর স্নানটান সেরে বেশ একটা স্নিগ্ধ পবিত্রতা অন্তরে ধারণ করে…

  • ফাঁদ

    আহমাদ মোস্তফা কামাল বউয়ের কাছে ক্রমাগত অপদস্থ হতে হতে একসময় জামানের মনে হতে থাকে – এই ভোগান্তির জন্য সে নিজেই দায়ী, কিংবা তার সিদ্ধান্ত গ্রহণের অপটুতা দায়ী। সিদ্ধান্তটি ছিল শায়লাকে বিয়ে করা। তার দূরদৃষ্টি নেই, ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে সে-সম্পর্কেও কোনো আগাম ধারণা করতে অসমর্থ, ফলে বিয়ের আগে থেকে শায়লাকে চিনলেও এবং বহু ঘটনায় তার…

  • নিমগাছের নিচে ছয়জন

    আনোয়ারা সৈয়দ হক ছয়জনই দাঁড়িয়ে থাকে দাদার আমলের নিমগাছের নিচে। তারা শুধু দাঁড়িয়ে থাকে না, মাঝে মাঝেই ওঠবস করে, মাঝে মাঝে পায়চারি; অস্থিরতায় মাঝে মাঝেই নিজেদের হাতের আঙুল মটকায়, মটকানো আঙুলে মটমট শব্দ ওঠে, শব্দগুলো যেন হে আল্লা, আল্লাহু করে, প্রকৃতপক্ষে যাকে বিলাপ বলা যায়। তাদের বুকের ভেতরে যেন পাথরের ভার নেমে আসে, নিঃশ্বাস নিতে…

  • জীবনানন্দের খোঁজে

    জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত বনপথের প্রান্তে যার সঙ্গে দেখা সে যদি আবারো চলে যায় ওই বনপথের গভীরেই, কারো কিছু বলার থাকে না। আমারও ছিল না। শুধু ভাবনা, বরং বলা যাক, সামান্য অস্বস্তি – বনপথে দিশা হারাবেন না তো তিনি? এই সেই বনপথ নয়, বনদেবী এখানে পথ দেখায় না, খেলাও করে না। দেখা যাবে না বনমাঝে কোনো কুমারী…

  • চাষাভুসো মানুষের স্বপ্ন

    বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর আমার বাবা অদ্ভুত, নম্র স্বভাবের চাঁদে পাওয়া মানুষ। চাঁদ উঠলে বাবা বাইরে চলে যেতেন, একা একা মাঠে ঘুরতেন, আর কবিতা বানাতেন। বাতাস উঠলেও তাই, বাবা বাতাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়–তেন, আর কবিতা বানাতেন। বাবা অদ্ভুত স্বভাবের মানুষ। বাড়ির সামনে, রাস্তার পাশে, সুপারির বাতা দিয়ে তৈরি নামাজের স্থান। বাড়ি থেকে দূরে গাছগাছালি নেই,…

  • জলজাঙাল

    আবুবকর সিদ্দিক নাও এখন! ভোরবিহানের এই উঠতি বেলায় অপয়া হ্যাপাটা সামলায় কে বলোদিকিনি? ভিনগাঁওয়ের সেই পোঁদে পোক পড়া মর্কুটে কুত্তাটা মরে চিতিয়ে আছে বাঁশতলায়। কে যাবে ওটাকে বিলভাগাড়ে ফেলে দিয়ে আসতে? রোদ্দুর চড়তে না চড়তেই গন্ধ ছাড়তে লাগবে; তার বেলা? কাদুবিধবা নাকে আঁচলচাপা দিয়ে বলে, মরণ! ছাদুমুন্শি বিড়বিড় করে, অস্তাগফের…! আলামত নাজুক! দুই মাসটা কী,…