ছোট গল্প

  • গোশত

    পাপড়ি রহমান গেলবার শাহ আলমের হালের একটা গরু ধপ করে মরে গেল। অথচ গরুটার রোগবালাই-টালাই কিচ্ছু ছিল না। তখন নিদারুণ চৈত্রমাস। মাথার তালু ফাটিয়ে দেওয়া রোদ্দুর ঢুকে পড়েছিল একেবারে মগজের ভেতর। শাহ আলমের হাতে লাঙলের ফলা, বীজ বোনার আগে চৈত্রমাসের শেষ লাঙল দিচ্ছিল সে-জমিতে। তখুনি কিনা হঠাৎ করে একটা গরু বেকদমে চলতে শুরু করলো। ঘাড়ে…

  • ১৯৫৩

    আনিসুল হক হেমন্তকাল। হাটখোলার সরুপথে রিকশায় চলেছেন মুজিব। সকালবেলা। রোদ উঠেছে মিষ্টি। রাস্তায় শিউলি ফুল ঝরে পড়ে আছে, পাঁচিল ডিঙিয়ে মাথা বের করা শিউলিঝাড়ে পড়েছে সকালবেলার রোদ। শেখ মুজিব যাচ্ছেন এ কে ফজলুল হকের কাছে। কেএম দাস লেনের বাড়িটির গেট খোলাই ছিল। তিনি ভেতরে ঢুকে বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করলেন, ‘নানা, আছেন নাকি।’ বিশালদেহী ৮১…

  • অনুরক্ত তমাশা

    রেজাউর রহমান দিন-সপ্তাহ-মাস পেরিয়ে অন্তরা যখন হাসপাতালের পিঞ্জর থেকে বেরিয়ে আসে, তখন সান্ধ্য আকাশে চাঁদ ছিল না, তারা ছিল না, ছিল না কোনো রংও। আকাশে কোনো রং থাকে না, এমন দৃশ্য তার   বিশ-বাইশ বছরের জীবনে কোনোদিন দেখেনি। তারপরও সে ভাবে, মানুষের ভুল-ভ্রান্তি হয় না? হতেও পারে। সে হয়তো এমনটা দেখে থাকবে কোনোদিন, যা আজ তার…

  • কলকাতার কাক

    বুলবন ওসমান মৈত্রেয়ী অ্যাপার্টমেন্টের দোতলার ব্যালকনিতে বসে সুহাস অগ্রহায়ণের সকালের রোদ পোহাচ্ছিল। সামনে দৈনিক পত্রিকাগুলো শায়িত। দেখা প্রায় শেষ। এবার হয়তো এক কাপ চা পাঠাবে ভাদ্রবধূ বেলি। কলকাতার এই ট্যাংরা এলাকাটা বেশ পুরনো। চারদিকে এখনো  গাছ-গাছালি ও ঝোপঝাড় আছে। জায়গাটা তেমন সরল-সমতল নয়। বেশ উঁচু-নিচু। মৈত্রেয়ী পার হয়ে সামান্য ডানে গেলে একতা অ্যাপার্টমেন্ট। বছর দুয়েক…

  • সালিশের মানুষ

    হাসনাত আবদুল হাই জইতুনের স্বামী জব্বর যখন আর একটা বিয়ে করে অন্য গ্রামে গিয়ে নতুন সংসার পেতে বসলো তখন তার মাথায় বাজ পড়ার মতো হলো। তার স্বামী জব্বর যে সৎ মানুষ না সেটা জইতুন বিয়ের পরই বুঝতে পেরেছে। গঞ্জ থেকে দেরি করে বাড়ি ফেরে, হেরে গলায় গান গায়, কিছু বললে খিস্তি তোলে, এমনকি কুৎসিত গালও…

  • চতুষ্কোণ

    রেজা নুর সকালবেলার এই সময় জানালা খুলে বাইরে তাকায় মিনি। ছোট্ট জানালা। বাইরের খুব সামান্য দৃশ্য ভেসে ওঠে। ওপরে তাকালে আকাশটার এক কোনা চোখে পড়ে। সেই কোনায় আকাশ নীল ঘুড়ি হয়ে ঝুলে থাকে যেন। মাঝে-মাঝে মিনির ওড়নার মতো একটুকরো মেঘ এসে দাঁড়ায়। সরে যায়। আকাশ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ওর চোখ যায় পাশের সরু গরুগাড়ির রাস্তার…

  • জিনের মোহর ও ল্যালহা

    নীহারুল ইসলাম ল্যালহা ভোর-ভোর কালিপালের ডিহিতে ঝাড়া-ফিরতে আসে। গাঁ ছেড়ে মাঠের আল ধরে একটু হাঁটতে হয় ঠিকই, তবে জায়গাটা নির্জন। ঝোপঝাড় আছে। নানা ধরনের পাখি দেখা যায়। তাদের কলরব ভেসে আসে। এখানে এলে শরীরের সঙ্গে তার মনটাও বেশি খোলসা হয়। তেমন খোলসা শরীর-মন নিয়ে সে হেঁটে বেড়াচ্ছে ডিহির ওপর। গেল রাতে কখন বৃষ্টি হয়েছে, টের…

  • বিহঙ্গ পুরাণের অন্তিম পরিচ্ছেদ

    হুমায়ূন মালিক দীপ্রর খুব পাখি ধরার সাধ; কিন্তু সে না পারে পাখি ধরতে, না পাখি তারে ধরা দেয়। আসলে ও পাখি ধরতে চায় না পাখির ওড়াউড়ি নাকি ওদের বুনো জীবন! কারণ তার জন্য একটা গাড়ি কিনে আনা হলে প্রথমে সে দেখে চাকা ঘুরে ছুটছে গাড়ি, তারপরই সে একে একে গাড়ির চাকা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খুলে খোঁজে কোথায়…

  • হত্যা বা আত্মহত্যা

    সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় একটা লোক জলে ডুবে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছিল। এমন সময় সে একটা ডাক শুনল : থামো। – লোকটা পেছন ফিরে দেখল, দাড়িওলা মুখের আর একটা লোক তার হাত ধরে টানছে। দ্বিতীয় লোকটা বলল, ‘তুমি কী করতে যাচ্ছো, আমি জানি; কিন্তু কেন তুমি মরতে চাও?’ আত্মঘাতী-হতে-যাওয়া লোকটা বাধা পেয়ে বেশ বিরক্ত হয়েছিল। নিজের হাতটা ছাড়িয়ে…

  • এক টাকার মুদ্রা

    ঝর্না রহমান মরস ক্যান রুজিনা? লগে-লগে বাইজা গেল নাহি? বিটকাল পেতিœর মতো একটা হিহিহিহি হাসির ঝাপটার ভেতর দিয়ে টুকরো-টুকরো হয়ে কথাকটি বের হয়। রোজিনা পেট চেপে ধরে পাতাবাহারের ঝোপের আড়ালে বসে পড়ে। কথাটা শুনে একঝলক চেয়ে দেখে। একটু দূরে কোমরে দুহাত রেখে নাটুকে কায়দায় দাঁড়িয়ে আছে রানী। রাক্ষুসে দুটো ব্যাঙাচির মতো মাথা উঁচিয়ে টং ধরে…

  • ঝিঁঝি পোকার জীবন

    নলিনী বেরা আচমকা আমাদের বাবা ধুলোপায়ে কোত্থেকে প্রায় দৌড়–তে দৌড়–তে এসে মাথার ওপর হাত ঘুরিয়ে সমূহ সর্বনাশের ইঙ্গিত করে বলে বসলেন, ‘এখানে আর একদণ্ডও থাকাটা নিরাপদ নয়, আঁকাড়া বিপদ চারধার থেকে ধেয়ে আসছে ধাঁইধাঁই করে! সবকিছু ছেড়েছুড়ে এক্ষুনি পালাতে হবে। কই, ডাক তোর মাকে!’ জানি, বাবার মা অন্তপ্রাণ, তাই বলে আমি ও আমার বোন নাকফুঁড়িও…

  • একজন খারাপ লোকের গল্প

    বুলবন ওসমান স্বাধীনতা দিবসটা মফস্বলে কাটাতে হবে আলমকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা কাজে ঢাকা ছাড়তে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেস্টহাউসে ওঠেনি, এক বন্ধু তাকে একটা নিরিবিলি রেস্টহাউস পছন্দ করে দিয়েছে – এটা সায়েন্স ল্যাবরেটরির। মির্জাপুর মৌজায় – চৌদ্দপাই মোড়ে ফায়ার ব্রিগেডের বিপরীতে। প্রায় ৫০ একর জায়গাজুড়ে ল্যাবরেটরির চৌহদ্দি। উঁচু পাঁচিলঘেরা। রেস্টহাউসটা প্রায় মাঝখানে। খোলা জায়গায়। পাশে আমবাগান ও…