শ্রদ্ধান্জলি

  • পান্ডুলিপি করে আয়োজন

    মধুময় পাল তিনি পান্ডুলিপি তৈরি করছিলেন। তাঁর আঙুলগুলো সাদা কাগজের ওপর নড়াচড়া করছিল। আঙুলে কখনো ধরা গাম টিউব, কখনো কাঁচি। অস্ত্রোপচারের জ্ঞানী আঙুল। শূন্য পাতার মধ্যভাগে জড়িত করছিলেন মুদ্রিত কাগজের টুকরো দ্বীপভূমি। মুখ তুলে আমাকে বসতে বললেন। পরপর তিনটে চেয়ার। বসি। টেবিল ল্যাম্পের নিচে তাঁর হাতের সহৃদয় কুশলতা দেখতে থাকি। ওই যে লেখাগুলো বেরিয়েছে, সেসব…

  • বাবার শেষ দিনগুলি, রাতগুলি

    ইন্দ্রাণী গুহরায় ৩০ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে কবি ভূমেন্দ্র গুহ’র কবিতা দুই খ– প্রকাশিত হয়। কবি ভূমেন্দ্র গুহ, ডা. বি.এন. গুহরায়, আমার বাবা। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে রাহুল পুরকায়স্থ আন্তরিক ও নিরলস প্রচেষ্টায় এবং বাবার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসায় তাঁর সমস্ত কবিতা ও প্রাসঙ্গিক রচনা জোগাড় করেছেন। আমার বাবার কাছে তাঁর নিজের লেখা অধিকাংশ কবিতার বই-ই…

  • উৎপলকুমার বসু : ভ্রাম্যমাণ এক কবি

    সৌভিক রেজা জার্মান কবি রিলকে-সম্পর্কে উৎপলকুমার বসুর শ্রদ্ধার কথা অনেকেরই জানা আছে। সেই রিলকে তাঁর মালটে লরিডস ব্রিগের নোটবুকে (The Notebooks of Malte Laurids Brigge) বলেছিলেন, ‘শুধু আবেগ নয়, কবিতা আমাদের অভিজ্ঞতা। একটি কবিতা লেখার জন্য তোমাকে দেখতে হবে অনেক শহর, মানুষ আর বস্ত্ত, জানতে হবে কোন ইশারায় ফোটে ভোরের ফুল; অপরিচিত স্থান সব, অচেনা…

  • উৎপলকুমার বসুর কবিতা ও অন্যান্য

    পিয়াস মজিদ কবিতা এবং কবিতা প্রথম কবিতাগ্রন্থ চৈত্রে রচিত কবিতার (১৯৬১) ‘নবধারাজলে’ কবিতায় উৎপলকুমার বসু (১৯৩৭-২০১৫) বলেন – মন মানে না বৃষ্টি হলো এত সমসত্ম রাত ডুবো-নদীর পারে আমি তোমার স্বপ্নে-পাওয়া আঙুল স্পর্শ করি জলের অধিকারে। …   …   … স্পর্শ করে অন্য নানা ফুল অন্য দেশ, অন্য কোনো রাজার, তোমার গ্রামে, রেলব্রিজের তলে, ভোরবেলার রৌদ্রে…

  • প্যারীচাঁদ মিত্র : ফিরে দেখা

    বিশ্বজিৎ ঘোষ উনিশ শতকের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক প্যারীচাঁদ মিত্র (১৮১৪-৮৩)। প্যারীচাঁদকে আমি স্রষ্টা এবং কর্মযোগী মানুষ হিসেবেই দেখতে ভালোবাসি। জন্মের পর দুশো বছর অতিক্রান্ত, মৃত্যুর পরও আমরা পেরিয়ে এসেছি একশ বত্রিশ বছর – তবু বাংলাভাষী মানুষের কাছে এখনো তিনি এক স্মরণীয় নাম। ভাষাবিদ্রোহী, সমাজনিষ্ঠ, কথাকার, মানব-উন্নয়ন সংগঠক, সাংবাদিক, অধ্যাত্মচিন্তক – কতভাবেই তো তাঁকে…

  • তপনদা ও হাসিদিকে যেমন দেখেছি

    নূরজাহান বোস তপন রায়চৌধুরীর কথা শুনেছি বরিশালবাসীর কাছে। বিখ্যাত কীর্তিপাশা জমিদারবাড়ির সন্তান হিসেবে। আমাদের কাছে আরো বড় ছিল ওই পরিবারের অনেকের স্বাধীনতা-সংগ্রামে অংশ নিয়ে জেল খাটার খবর। তপনদাও জেলখেটেছেন। ওঁরা ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময়ে সপরিবারে ভারতে চলে যান। তপন রায়চৌধুরী উচ্চশিক্ষিত হয়ে নানা জায়গায় কর্মজীবন কাটিয়ে অক্সফোর্ডে ইতিহাসের অধ্যাপক হিসেবে থিতু হয়ে বসেছেন – ভারতীয়…

  • চিত্তপ্রসাদ : মর্মযাতনার রূপকার

    শরীফ আতিক-উজ-জামান চিত্তপ্রসাদ (১৯১৫-৭৮) বাংলাদেশের চট্টগ্রামের মানুষ, জন্মেছিলেন ১৯১৫ সালের ২১ জুন নৈহাটিতে। ব্রাহ্মণের ছেলে, কিন্তু কখনো নামের সঙ্গে ভট্টাচার্য উপাধি ব্যবহার করেননি। কোনো পৈতেও পরতেন না। জাতিপ্রথার বিরুদ্ধে এ ছিল তাঁর নিজস্ব ও নীরব এক প্রতিবাদ। প্রবল ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য নিয়ে তিনি সারাজীবন পথ চলেছেন। ১৯৩২ সালে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে চট্টগ্রাম সরকারি…

  • দ্য স্পিগ্যালকে গুন্টার গ্রাস ভাষা ক্রমাগত নবায়ন হবে

    অনুবাদ : আতাউর রহমান রাইহান ১৯২৭ সালে পোল্যান্ডের গ্যাডন্সক শহরে জন্ম নেওয়া গুন্টার গ্রাস সেনাবাহিনীর চাকরি ও যুদ্ধবন্দি থাকার পর খামার এবং খনি-শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। গ্যাডন্সক তখন ডানজিগ নামে পরিচিত ছিল। লেখাপড়া করেন জার্মানির ডুসেলডর্ফ ও বার্লিনে। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি চারুশিল্পী হিসেবেও পরিচিত। নিজের বইয়ের সব কাভার করেছেন নিজ হাতেই। ১৯৫৯ সালে তিনি লেখেন…

  • শতবর্ষের শ্রেষ্ঠ ড্রামবাদক গুন্টার গ্রাস

    ভূমিকা ও অনুবাদ : আন্দালিব রাশদী ‘শিল্পে কোনো সমঝোতা নেই, কিন্তু জীবনটাই সমঝোতায় ভরা।’ ‘মানুষের মাথা পৃথিবীর চেয়ে বড়।… মানুষের মাথা দানবীয়।’ ‘বিশ্বাস করা মানে আমাদের নিজেদের মিথ্যাকে বিশ্বাস করা। আমি বলতে পারি, আমি কৃতজ্ঞ যে, এই শিক্ষাটা আমি খুব বয়সেই পেয়েছি।’ – গুন্টার গ্রাস গুন্টার গ্রাস (১৬ অক্টোবর ১৯২৭-১৩ এপ্রিল ২০১৫) দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তর স্বপ্নহীন…

  • অরুণাভ সরকারের কবিতা

    রেজাউদ্দিন স্টালিন যে-আপনজন বেঁচে নেই; তাঁকে নিয়ে লেখা দুরূহ। কারণ তিনি আলোচক কিংবা কবিতার ব্যাখ্যা শুনতে অপারগ। বেঁচে থাকলে আরেক রকম ব্যাখ্যা হতো। এ পর্যন্ত কবিতা ও কবিবিষয়ক মহৎ সব আলোচনার সিংহভাগ সাধিত হয়েছে কবির অবর্তমানতায়। কিন্তু সব আলোচনা যদি হয় কবির মৃত্যুর পরে, তাহলে চলবে কীভাবে? কবি জীবদ্দশাতেই জানতে চান – তাঁর কাব্য-ভাবনা কতটা…

  • কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর ও তাঁর লেখার বিষয়-অনুষঙ্গ

    আহমেদ মাওলা জীবন ফুরিয়ে যায়, কথা শেষ হয় না। সরব জীবনকে মৃত্যুই নীরব করে দেয়। কী দুঃসহ সময়ে ডুবে আছি আমরা! এরই মধ্যে না ফেরার দেশে চলে গেলেন কথা পত্রিকার সম্পাদক কথাসাহিত্যিক কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর (১৯৬৩-২০১৫)। মৃত্যু হঠাৎ যেন ছিনিয়ে নিয়ে গেল তাঁকে। শহীদুল জহিরের মতোই যেন ফুলের কলি না ফোটার আগেই ঝরে পড়লেন। এরকম অকালপ্রয়াত…

  • বেগম আখতার ফিরায়ে দিয়ো না মোরে শূন্য হাতে

    আবুল আহসান চৌধুরী   চলচ্চিত্র ও সংগীতে উত্তরকালে খ্যাতির শীর্ষ স্পর্শ করেছেন – যেমন পৃথ্বিরাজ কাপুর, কুন্দনলাল সায়গল, আখতারি বাই, রাজকাপুর, তালাত মাহমুদ কিংবা অমিতাভ বচ্চন – কলকাতা ছিল বাংলা মুলুকের বাইরে থেকে আসা এইসব শিল্পীর প্রেরণার মরমি ধাত্রী। এঁদের পাশাপাশি ভারতীয় মার্গসংগীতের কিছু প্রসিদ্ধ কলাবতের নামও স্মরণ করতে হয়। কেউ এসেছিলেন জীবিকার সন্ধানে, কেউ…