অনুবাদ গল্প
-
শুধু একবার নারী হও, হে প্রভু
অনুবাদ : জাভেদ ইকবাল [বানু মুশতাক (১৯৪৮-)। ভারতের কর্নাটক রাজ্যের কন্নড় ভাষার একজন প্রসিদ্ধ সাহিত্যিক। ছোটগল্প সংকলন হার্ট ল্যাম্প-এর জন্য লেখিকা ২০২৫ সালে আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার লাভ করেন।] লক্ষ লক্ষ বছর ধরে আমার মতো কোটি কোটি ক্ষুদ্রস্য-ক্ষুদ্র প্রাণ সৃজনের পর, আমাদের ভালো কাজের জন্য স্বর্গ আর মন্দ কাজের জন্য নরক বানিয়ে, যে সৃষ্টিকর্তা তুমি আমাদের…
-
ফিরে আসা
অনুবাদ : সম্পদ বড়ুয়া পথ বড় দীর্ঘ মনে হচ্ছে তার। যখনই সে এক পা সামনে এগোয়, ধুলায় আচ্ছন্ন ছোট ছোট ধোঁয়ার কুণ্ডলী রাগত চেহারা নিয়ে তার পেছনে উঠে আসে আর ধীরে ধীরে একসময় তা থিতু হয়ে বসে। তবে ধুলার একটা পাতলা আবরণ বাতাসে থেকে গিয়ে ধোঁয়ার মতো চারদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সে হাঁটতে থাকে, যদিও ধুলোবালি…
-
শূকর
অনুবাদ : সম্পদ বড়ুয়া সে দিন শনিবার বিকেলে খামারের মালিক তার শ্রমিকদের প্রাপ্য মজুরি পরিশোধ করছিল। সূর্যটা তখন পশ্চিমে হেলে পড়েছে। এ-কাজ করতে করতে অন্ধকার ঘনিয়ে এলো। রান্নাঘরের দরজায় যে লণ্ঠনটা ঝুলছিল সেটা থেকে হলদে আলোর রেখা লোকজনের যাতায়াতের পথে গড়াগড়ি খাচ্ছে। গাছগাছালি আর তার নিচে অন্ধকার মুখগুলো সে-আলোতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এই শনিবারে শ্রমিকরা…
-
অমরজাতি
অনুবাদ : আলম খোরশেদ সলোমন বলেছেন : পৃথিবীতে নতুন কোনো কিছু নেই। যেমনটি প্লেটো কল্পনা করেছিলেন, সকল জ্ঞানই বস্তুত স্মৃতিমাত্র, তেমনি সলোমনও এই সিদ্ধান্ত দেন যে, নতুন সমস্তকিছুই আসলে বিস্মরণ। – ফ্রান্সিস বেকন, রচনাবলী, ৪৭ লন্ডনে, ১৯২৯ সালের জুনের গোড়ার দিকে, দুর্লভ গ্রন্থের বিক্রেতা, স্মার্না শহরের জোসেফ কার্তাফিলাস রাজকুমারী দ্য লুস্যাঞ্জকে পোপ-বিরচিত ইলিয়াড-এর ছয় খণ্ডের…
-
প্রয়োজন
অনুবাদ : সাদাত উল্লাহ খান নাই পান হলেন প্রতিবেশী খ্যাতিমানদের একজন। তিনি খ্যাতিমান এ-কারণে নয় যে, তিনি একজন তারকা নৃত্যশিল্পী, নতুবা এমন নয় যে, তিনি নিজেকে রাজনীতি বা সাহিত্যে বিশিষ্ট করে তুলেছেন। সম্ভবত তিনি একজন প্রতিভা যার চমৎকার বিরিয়ানি রান্নাই তাকে অমরত্বের দাবিদার করেছে। তবে এমনকি তার রান্নাবান্নার উপহার বিশিষ্ট হয়ে না থাকলেও তিনি খ্যাতিমান…
-
অজাত
অনুবাদ : আলম খোরশেদ তুমি যখন আমাকে বলো, এত দূর অতীতের কথা আমি মনে করতে পারব না, সুস্থ মস্তিষ্কের কেউ তা পারেও না, এবং এখন আমার যথেষ্ট বয়স হয়েছে এরকম বোকার মতো কথাবার্তা বলে সময় নষ্ট না করার জন্য, আমি তখন চুপ করে যাই। তবে তা কেবল বাইরে বাইরেই। এসব বিষয়ে কথা বলার মতো কাউকে…
-
টোবা টেক সিং
অনুবাদ : ফাহমিদা আক্তার দেশভাগের দুই বা তিন বছর পর, ভারত ও পাকিস্তান সরকারের মনে হয়েছিল যে, বেসামরিক বন্দিদের স্থানান্তরিত করার পাশাপাশি পাগলা গারদে আশ্রিত বন্দিদেরও স্থানান্তর করা উচিত। অর্থাৎ তাঁরা তাগিদ অনুভব করেছিলেন, ভারতীয় প্রতিষ্ঠান থেকে মুসলমান পাগলদের পাকিস্তানে পাঠানো উচিত এবং পাকিস্তানি আশ্রয়স্থল থেকে হিন্দু ও শিখদের ভারতে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। তবে এটি…
-
বিয়ের আয়োজকরা
অনুবাদ : সম্পদ বড়ুয়া আমার নতুন স্বামী ট্যাক্সি থেকে স্যুটকেস বের করে ব্রাউনস্টোন দালানের একটা বিষণ্ন সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসে। বাতাস চলাচলবিহীন সংযোগপথে অতি ব্যবহারে ক্ষয়ে যাওয়া কার্পেটের ওপর পা রেখে একটা দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। সেখানে অসমভাবে হলদে ধাতুর তৈরি ২বি নম্বরটি আঠা দিয়ে লাগানো হয়েছে। ‘আমরা এসে গেছি’, সে বলল। যখন সে…
-
পুতুল-বিষাদ
ভাষান্তর : অনিকেত সুর আমার নাম স্টিফেন অ্যামোনি। পেশায় ডাক্তার। কর্মস্থল ও বসবাস লন্ডনে, টেমস নদীর ধারে। একটি পুতুলকে নিয়ে শুরু আমার এই গল্পের কাহিনি। গল্পটা অদ্ভুত হলেও সত্য। বছর পাঁচেক আগের অক্টোবর মাসের একটি দিন। দিনটির কথা আমার স্পষ্ট মনে আছে। প্রতিদিনের মতো আমি যখন ঘর ছেড়ে বেরিয়েছি, তখন টেমস নদীর বুকে প্রভাত-সূর্যের আলো…
-
বিদায় আফ্রিকা
অনুবাদ : শামসুজ্জামান হীরা মহিলাটি রান্নাঘরে কফি বানাচ্ছিলেন। এমনকি দিনের বেলায় যখন কাজের লোকেরা থাকে তখনো নিজ হাতে কফি বানাতে তিনি পছন্দ করেন। ভালো কফির গন্ধ তাঁকে প্রশান্তি দেয়। তাছাড়া, রান্নাঘর তাঁর এক নিজস্ব জগৎ। তাঁর স্বামী কখনো সেখানে যান না। স্বামী তাঁর এখন বসার ঘরে এবং তাঁর কাছে থালাবাটির ঠোকাঠুকিতে তৈরি আওয়াজ অন্য…
-
যখন পূবালী হাওয়া বয়
ভাষান্তর : ওয়াহিদা নূর আফজা গ্রাসিয়া ডেলেড্ডার জন্ম ১৮৭১ সালে ২৭শে সেপ্টেম্বর ইতালির সার্ডিনিয়ার নুওরোতে। তাঁর মৃত্যু ১৯৩৬ সালের ১৫ই রোমে। ডেলেড্ডার জন্ম এক সম্ভ্রান্ত কৃষক পরিবারে। তাঁর বাড়ির বৈঠকখানায় বসতো গল্পের আসর। কিশোরী গ্রাসিয়া উৎসাহ নিয়ে তা শুনতেন। সে-সময়ের ইতালির নিয়মানুযায়ী মেয়ে হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পেয়েছিলেন চার বছরের। বাড়িতে গৃহশিক্ষক ছিলেন। শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় মাত্র…
-
ছিনতাই
অনুবাদ : মেহবুব আহমেদ মেয়েটি দেখছিল একটি ছেলে গানের সুরে শিস দিতে দিতে এগিয়ে আসছে। একসময় সামনে এসে ছেলেটি দাঁড়িয়ে গেল, বিনীত ভঙ্গিতে জানতে চাইল, পপি স্ট্রিট কোন দিকে। প্রশ্নটির উত্তর দিতে মেয়েটি একটু দেরি করছিল, কিন্তু এটুকু সময়ে মধ্যেই যে ছেলেটি ওর গলার হার ছিনিয়ে নিয়ে দৌড় দেবে সে তা ভাবতে পারেনি। চিন্তামগ্ন মেয়েটি…