2012

  • আনন্দ উড়ান

    মৃণাল বসুচৌধুরী তোমার প্রশ্রয়ে যখন অলস মেঘ আকাশরেখার পাশে জমে থাকা স্বপ্নকণা ছুঁয়ে নেমে আসে আমাদের আয়ুহীন চোখে যখন নিসর্গ থেকে বিন্দু বিন্দু সুখ নিয়ে উড়ন্ত পায়রাগুলো নেমে আসে অন্ধকার ছাদে পরিশ্রান্ত বিমর্ষ শরীরে যখন বৃষ্টির শব্দ ছদ্মবেশী মারীচের তীব্র ছোটাছুটি নির্জন দালান জুড়ে পাখির পালক স্মৃতিজলে অভিমানী ম্লান যখন আপসহীন বিষণ্ন কপালজুড়ে বালিয়াড়ি মরুঝড়…

  • চোখে অনাদি জল

    শিহাব সরকার বিজন পাহাড়ে হেমন্তের হিমকুয়াশা বনপথে একা হাঁটি, দূরে আলোঝলমল সার্কাসে ধুন্ধুমার বাদ্যব্যান্ড অরণ্যমন্দিরে নিভু-নিভু লণ্ঠন, সমস্বর স্তবগান। শুনছো না ঝোপেঝাড়ে পিশাচের কানাকানি ডিস্কোতে মুখোশের আড়ালে দৈত্যদানো, শহরে চলছে খুব সান্ধ্যভাষা, গূঢ় সংকেত ভিড়ের মধ্যে অচেনা মুখ এই জাগে, হারায়। বনের ভিতর জমাট ঠান্ডা, তার চেয়ে ভয় আগুনের পটে রক্তের পিচকিরি অন্ধকারে ক্ষুধার্ত কালো…

  • রেলব্রিজে একা

    হারিসুল হক আস্তে আস্তে কমে আসছে চোখের জোর। বাঁ-চোখে অত আর ভালো দেখতে পাই না ক্রমে ক্রমে ডানটাও যাবে হয়তো বা (যাবার কি কোনো রোডম্যাপ, দিনক্ষণ ঠিকঠাক থাকে) আর অত দেখেই কী লাভ সুনীলদা – শুধু কষ্ট শুধু কষ্ট সহস্র বঞ্চনার নদী আমাদের ঘিরে বসতবাড়ির উঠোন জুড়ে খালি উইঢিপি অরণ্যে একাকী কাক মগডালে ঠোঁট  ফাঁক…

  • লসঅ্যাঞ্জেলেসের পথে

    কাইয়ুম চৌধুরী কুয়াশা কেটে যাওয়া রোদ মাখা শস্যক্ষেত যতদূর চোখ যায় দ্রুত অতিক্রম করে যাই জলপাই বাগান হেমন্ত হাওয়ায়। দূর পাহাড়ের সারি সোনালি তৃণে ঢাকা মুক্ত আকারে নীলাভ সবুজে জল টলটল তুলির ডগায় স্বচ্ছ রঙেতে আঁকা। সারি তোলা দ্রাক্ষাকুঞ্জ সমান্তরালে অপস্রিয়মাণ তৈরি করে উল্লম্বরেখা সিঞ্চিত জলধারা ঘূর্ণায়মান। বাড়িঘর, নদীনালা বিদ্যুৎ টাওয়ার, গোলাবাড়ি দিগন্তছোঁয়া চারণভূমি হলুদ…

  • না, শোকগাথা নয় (সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে উৎসর্গিত)

    অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত কখনোই তুমি চাওনি তোমার মৃত্যুসংবাদ চৌদিকে চাউর হয়ে যাক, সেজন্যেই বুঝি তোমার চলে-যাওয়ার সময়টায় পর-পর চারদিন জুড়ে কলকাতায় কোনো কাগজ বেরোয়নি, বেরোলেও বিলি হয়নি, আর হকারের সেই অপ্রত্যাশিত ছুটির উল্লাসে সুন্দরবনের আশেপাশে সপরিবারে বেরিয়ে পড়েছিল সবুজে সুনীলে পিকনিকের মহানন্দে Ñ তুমি যেরকম চেয়েছিলে। আমি তখন এলাহাবাদে প্রবাসী বাঙালিদের পূজার মণ্ডপে তোমার কবিতা নিয়ে…

  • সংগীতের মুক্তি বেঙ্গল-নিবেদিত উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের সূত্রে

    আবুল মোমেন ভারতসভ্যতার যেসব মহত্তম উত্তরাধিকার প্রাচীনকাল থেকে ধারাবাহিকভাবে আজ অবধি চলে এসেছে তার মধ্যে শাস্ত্রীয় সংগীতকে সবচেয়ে এগিয়ে রাখতে হবে। পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে কাল এই সংগীতে তার স্বাক্ষর রেখেছে, কিন্তু তা কখনো এই মহৎ শিল্পকে ক্ষয়িষ্ণু বা নেতিবাচক হতে দেয়নি। ক্রিয়াত্মক শিল্পে (perfoming art) প্রকাশের যে-সুযোগের প্রয়োজন তা হয়তো সবসময় একইভাবে মেলেনি, গুরু ও…

  • সংগীত ও সমঝদার

    আবদুশ শাকুর আমার মতে, ‘শর্তহীন’ সংগীত শব্দটি কেবল মৌলিক সংগীতই বোঝায় – তাকে মার্গসংগীত বলুন, শাস্ত্রীয়সংগীত বলুন, উচ্চাঙ্গসংগীত বলুন, রাগসংগীত বলুন, আর যা-ই বলুন। শৈলীপ্রধান গান, রাগপ্রধান গান, ধর্মপ্রধান গান, রঙ্গপ্রধান গান, লোকগান, পপগান ইত্যাদিকে বলা যায় ‘শর্তযুক্ত’ সংগীত বা যৌগিক সংগীত। এ ধারণার প্রেক্ষিতেই বর্তমান আলোচনাটি চলবে। প্রাচীন কালে দেবমন্দিরে নিবেদিত হতো ধর্মসংগীত। মধ্যযুগের…

  • শেষ নমস্কার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    রাজু আলীম ভালোবাসা, প্রেমের যেমন কোনো জাত হয় না, লেখকেরও কোনো জাত নেই। নেই কোনো দেশ। একজন লেখক, শিল্পী, সৃজনশীল মানুষ বিশ্বব্যাপী বিরাজমান। সে-কারণেই শেক্সপিয়র আমাদের, অ্যারিস্টটল, অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, প্লেটো, ও’ হেনরি, জ্যঁ পল সার্ত্রে, মার্কেস, হেমিংওয়ে কিংবা ভ্যান গঘ, পিকাসো – এঁরা সবাই আমাদের। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ দাশ, শরৎচন্দ্র কিংবা শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ,…

  • সুনীলের জন্যে শোক

    আহমেদ মাওলা বাংলা সাহিত্যের সুনীল আকাশ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (১৯৩৪-২০১২) আর নেই। চলে গেছেন না-ফেরার দেশে। কিন্তু তিনি ছিলেন এবং আছেন কোটি পাঠকের হৃদয়জুড়ে। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় থাকবেন চিরকাল আত্মার আত্মীয় হয়ে। আমাদের এই মল্লযুগে রবীন্দ্রনাথ বেঁচে ছিলেন না, আমরা রবীন্দ্রনাথকে দেখিনি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন আমাদের যুগের রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ যেমন ছিলেন বহুমাত্রিক, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন বহুলপ্রজ।…

  • যেমন দেখেছি

    বীথি চট্টোপাধ্যায় এই লেখা লেখবার আগে কিছুক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। মাঝরাত। সুনীলদা চাঁদ আর চাঁদের আলোকে পাগলের মতো ভালোবাসতেন। বলতেন, ‘মানুষ একদিন চাঁদেও হয়তো বেড়াতে যাবে, সেদিন আমি থাকবো না।’ সুনীলদা হয়তো এখন পৃথিবীতে নেই। কোথাও কি আছেন? গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে কোনো অণু-পরমাণু বা কণামাত্র হয়ে আছে তো? আমি যে বিশ্বসংসারে ঘুরছি-ফিরছি সেখানকার কোনো রূপে-অরূপে যেভাবেই…

  • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় : নির্ধারিত দূরত্ব থেকে

    প্রবালকুমার বসু ভাবছিলাম দশ পনেরো বা কুড়ি বছর পরে, যখন আমরা এই সময় থেকে আরো একটু দূরত্বে পৌঁছে যাব, ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাতে পারব আরো একটু নিস্পৃহভাবে, কীভাবে দেখব সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে? শুধুই একজন লেখক যিনি পাতার পর পাতা অক্লান্ত গদ্য-গল্প-উপন্যাস লিখে গেছেন অথবা একজন কবি যিনি বাংলা কবিতায় এনেছিলেন প্রথম আন্তর্জাতিক ভাষা? অথবা একজন সর্বাঙ্গীণ…

  • সুনীলদার সঙ্গে ’৮৯ সালের এক রাতে

    ইমদাদুল হক মিলন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ইন্টারভিউ করতে হবে কেন। বানিয়ে লিখে দাও না। তুমি তো আমার সম্পর্কে সবই জানো। বেশ খানিক আগে রাত এগারোটা পেরিয়ে গেছে। আমরা বসে আছি সৈয়দ আল ফারুকের ড্রয়িংরুমে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, তাঁর পাশে আমি। অন্য পাশে রফিক আজাদ। আমাদের মুখোমুখি পীযূষ ও রেবু আপা। এক পাশে স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়। সুনীলদা-স্বাতীদির সঙ্গে…