দেবাশিস লাহা

  • লাকডাউন

    লাকডাউন

    ‘কি গো তোমার কাছে নারকেল হবে?’ ফলমূলের পসরা সাজিয়ে বসা মোটাসোটা দোকানি। তার দিকেই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন সেই অধৈর্য ভদ্রমহিলা। ক্যারিব্যাগভর্তি বাগদা চিংড়ি। কেজিখানেক তো হবেই। মুখের গোমইটা আর একটু শক্ত করে ধরে আবার সেই একই প্রশ্ন –    ‘নারকেল হবে নারকেল?’ গোমই! এখন সবার মুখে মুখে! বাবুরা অবশ্য মাস্কো না কী সব বলেন!…

  • নতুন বছর

    দেবাশিস লাহা নতুন বছর যাকে বলো পৃথিবীর বুকে সে আর এক সকাল, মহাকাল দিয়ে যায়, নিয়ে যায় তাকে; প্রিয়া ডেকেছো যাকে, সেও এক নারী – ভালোবাসা দিয়ে যায়, নিয়ে যায় তাকে – ওই দ্যাখো, হাঁসের পিঠের মতো পড়ে আছে কাল, কোনো অশ্রুর দাগ লাগে না সেখানে! লীলাময়ী রাত মেখে তুমিই প্রাচীন হও, শৈশবে হেঁটে যায়…

  • আমিই তোকে ছুঁতে পারি

    আমিও তোকে ছুঁতে পারি, যেমন করে তুমুল নদী, ফুঁসছে তবু নিরবধি, রাত ঘনালে কূলের ওপর আলতো করেই ঝাঁপিয়ে পড়ে! আমিও তোকে ছুঁতে পারি; যেমন করে নদীর ঢেউয়ে হেই সামালো দামাল নেয়ে বাঁচবে বলেই স্রোতের ভেতর শেষ প্রহরের বৈঠা নাড়ে! আমিই তোকে ছুঁতে পারি, যেমন করে কচুর পাতায় বেবাক জলের টুপটুপানি, তোর সে রাঙা পদ্মখানি ভিজিয়ে…

  • মৃতকে নিয়ে খিল্লি করতে নেই

    দেবাশিস লাহা মৃতকে নিয়ে খিল্লি করতে নেই – সে যেখানে গেছে, তুমিও সেখানে যাবে; বরং ফিসফিসিয়ে জেনে নাও, সেখানে ফুলদানিতে ফুল রাখার কোনো রেওয়াজ আছে কিনা, পেস্ট কিনতে ভুলে গেলে মুখ ধোয়ার বিকল্প ব্যবস্থাটি কেমন; ভালোবাসা খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া মেয়েটার সাথে দেখা হওয়ার সম্ভাবনাই বা কতটুকু! মৃতদের নিয়ে খিল্লি করতে নেই; তারা যেখানে গেছে,…

  • দুয়োরানির খোকা

    দেবাশিস লাহা হাতের মুঠোয় অষ্টাদশী মেঘ, মাখছে মাটি তবু দুটো পা, চোখের নিচে বাউন্ডুলে স্বেদ; দিন ফুরোলেই নদীর জলে ঘা – ওপার জুড়ে রাত নেমেছে আজো নদীর জলে আংটিপরা মুখ, এপার জুড়ে আঁধার হলো শুধু এপার জুড়ে কান্না হওয়ার সুখ – ওপারটা তাই সুয়োরানির কোল, চোখ পিটপিট সোনার বরণ ছা, এপার আজো দুয়োরানির খোকা, আঁধার…

  • জিজ্ঞাসা

    দেবাশিস লাহা এই যে এত এত লেখ, বিনিময়ে কী পাও? হাঁসের ডানার মতো কেঁপে ওঠা ঠোঁটে পুনরাবৃত্তির কোনো মেঘ লেগে নেই, অথচ মেসোপটেমিয়া, মিশর থেকে সিন্ধু, টাইগ্রিস, সক্রেটিস, পেস্নটো থেকে গোর্কি, কাফকা – পৃথিবীর সমুদয় সারসের দিকে আবহমান এই জিজ্ঞাসাই উড়ে গিয়েছিল, এই যে এত এত ওড়ো, বিনিময়ে কী পাও? এথেন্সের পথে তখন সন্ধে নেমেছে,…

  • বহ্নি বালিকা

    দেবাশিস লাহা   তোমাকে কতটা চিনি বহ্নি বালিকে? মধ্যাহ্নের যূথবদ্ধ রোদে অন্ধকার অশ্বারোহী আমি, যতটা নৈর্ব্যক্তিক হলে অবিন্যস্ত পথ ধুলোর প্রলাপ থেকেও প্রার্থিত সনেট খুঁজে নেয়, অথবা অনলভ্রমে পতঙ্গের লাফ যতটা আন্তরিক হলে নিটোল লিরিক, ততটা নির্নিমেষ কী আমি হতে পারি? তোমাকে কতটা জানি বহ্নি বালিকে? যতটা তোমাকে চেনে চিবুকের তিল, অথবা নদীর স্রোতে লুকানো…

  • সংখ্যালঘু

    দেবাশিস লাহা  সংখ্যালঘু হয়ে পড়ছি ধর্মাবতার! নোম্যানস ল্যান্ডে আটকে থাকা মৃতদেহে এখনো কোনো শকুন নামেনি; ওষ্ঠে ম্যাগট, নাসারন্ধ্রে মাছি; তবু সৎকার থেকে বহুদূরে আমার বিতর্কিত ঘিলু; মানুষ আছে, কাঁধও নেই এমন নয়, রামের হাতে মশাল, রহিমের হাতে কোদাল! গীতা, কোরান দুই-ই পড়া হচ্ছে! কিন্তু ইঁদুর ভক্ষিত শিশ্নটি মাটি না আগুন ঠিক কিসের জন্য বলিপ্রদত্ত কিছুতেই…

  • বারান্দা

    বারান্দা

    জানালাটা বন্ধই থাকত। গাড়ি-ঘোড়ার আওয়াজ, ধোঁয়া, ধুলো, হাড়বজ্জাত মাতালের মাতলামি কোনোটিকেই কারণ হিসেবে দায়ী করা যাবে না। তথাকথিত ফ্ল্যাট-বাড়ির জানালাও এটি নয় যে, অন্ধের কি-ই-বা দিন কি-ই-বা রাত! শুধু ছিটকিনি খোলার অপেক্ষা। হুড়মুড়িয়ে রোদ আর বাতাস। আহা কী দিনই না ছিল! শুধু কি জানালা! দরজা খুললেই চওড়া বারান্দা। শীতের সকালে আরামকেদারা আর খবরের কাগজ। পিতৃপুরুষের…