মনি হায়দার

  • শূন্যের কারবার

    শূন্যের কারবার

    এ্যাই এ্যাই … তেড়ে এলেন সিরাজ মিয়া আমাদের দিকে। সিরাজ মিয়ার তাড়ায় আমরা চারজনে দরজা ঠেলে বাইরে এসে দাঁড়াই। হাসি। কিন্তু সিরাজ মিয়ার চোখেমুখে ক্রোধ। ঘরটার মধ্যে হাঁটছে আর ফুঁসছে। রুমটার মধ্যে দুটো খাট। পুবের দেয়াল ঘেঁষে বড় খাটটার নিচে সিরাজ মিয়ার বড় একটা টিনের ট্রাঙ্ক। ট্রাঙ্কের সামনে ঝুলছে বড় একটা তালা। বড় না কেবল,…

  • আহীর আলমের বাম পা

    আহীর আলমের বাম পা

    ক তুমি আবিদ রাজা! ঠিক বলিনি আমি? মোবাইলের ওপাশে কাঠফাটা চিৎকার। সেই হাসির তরঙ্গের সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে দিয়ে হাসে সিলভিয়া আখতার, হাসছো কেন? বলো আমি তোমাকে চিনেছি কি না! চিনতে হবে কেন? আমার নম্বর সেভ নেই তোমার সেটে? না, তোমার নম্বর আমার মোবাইল সেটে নেই। কণ্ঠস্বরে চিনেছি। একটু থেমে সিলভিয়া প্রশ্ন করে, রাজা এতদিন পর…

  • আবদুল মতিনের ছয় পর্ব

    আবদুল মতিনের ছয় পর্ব

    মনি হায়দার আবদুল মতিন বরাবরই ব্যতিক্রম। অথবা বলা যায় ব্যতিক্রম হওয়া, ব্যতিক্রম থাকাটাই পছন্দ, ওর হবি। প্রসঙ্গক্রমে মতিন বলে – সমাজের আর পাঁচজন মানুষের চেয়ে একটু আলাদা থাকা ভালো। তর্কে তর্ক বাড়ে। সে-পথে না গিয়ে বন্ধুরা ওর যুক্তি মেনে নেয়। যেমন মেনে নিয়েছে মিতা। মতিন সাইকোলজিতে মাস্টার্স শেষ বর্ষে। অর্থনীতিতে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে মিতা। দুজনার…

  • আদর্শলিপি

    মনি হায়দার কী হয়েছে তোমার? বসার ঘরে গম্ভীরমুখে শাহাদাতকে বসে থাকতে দেখে অবাক জাহাঙ্গীর। কথা বলতে বলতে বসে পাশে। শাহাদাত হোসেন সরকারি বড় কর্মকর্তা। থাকে ঢাকায়। জাহাঙ্গীরের ছোট বোনকে বিয়ে করেছে কয়েক বছর আগে। বিয়ের আগে শাহাদাত আর জাহাঙ্গীর বন্ধু ছিল। দুজনে মাস্টার্স করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। জাহাঙ্গীর মাস্টার্স করে চাকরি না খুঁজে ভা-ারিয়া উপজেলা…

  • সৈয়দ হকের নির্মাণ ও সৌধ : মার্জিনে মন্তব্য

    মনি হায়দার বাংলাদেশের ও পৃথিবীর বাংলাভাষীরা প্রতিদিন বলবে, সৈয়দ হক ছিলেন গহিন পরানের মানুষ। বাঙালি জাতির পরানের গহিন মানুষ সৈয়দ শামসুল হক। একটি জাতির পরানের গহিন মানুষ হওয়া এতই সোজা? নিশ্চয়ই না। পথ বন্ধুর। দুর্গম তো বটেই। সেই বন্ধুর ও দুর্গম পথ হেঁটে হেঁটে কুড়িগ্রাম কিংবা জলেশ^রীর থেকে তিনি পৌঁছেছেন বাঙালির চেতনামার্গের গভীরতম সোপানে। একজন…

  • তিমিরের তীরে

    মনি হায়দার   আপনারা আসমান আলীকে চিনতে পারবেন না। না, আসমান আলী কোনো আশ্চর্য প্রদীপ পায়নি। কিংবা হয়নি কোনো মন্ত্রী-টন্ত্রী। মানুষ হিসেবে ঠিকই আছে। রক্ত, মাংস, কাম, ক্রোধ-রিপু মিলিয়ে আগের মতোই আসমান আলী আছে আসমান আলীর মতোই। প্রশ্ন হচ্ছে – কী এমন ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটল যে আমরা, পরিচিতজনেরা আজ আসমান আলীকে চিনতে পারছি না?…

  • অস্তিত্ব

    মনি হায়দার   এগারোজন মানুষ আগুনের নীরবতায় একে অপরকে সহ্য করছে। তিনজন নারী, বাকি আটজন পুরম্নষ। আটজন পুরম্নষের মধ্যে পাঁচজন সৈন্য। দুজন বেসামরিক নাগরিক। পাঁচজন সৈন্যের একজন ক্যাপ্টেন দিদার। সুন্দর গোলগাল মুখ। নাকের নিচে হালকা কালো গোঁফ। ছিমছাম পেটানো শরীর। হাতে একটা ছোট্ট কিন্তু সুদৃশ্য লাঠি। মাঝে মাঝে হাতের লাঠিটি নাড়ানোয় নিঃশব্দ ক্ষমতার একটা দাপট…

  • মন-সংক্রান্তি

    মনি হায়দার নাহার এমনিতেই সুন্দরী। অফিসে যাওয়ার সময় হালকা সাজলে চোখ ফেরানো কঠিন। সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে ড্রয়িংরুমে ঢোকে। ড্রয়িংরুমে নিবিড়মনে পত্রিকা পড়ছে খালেদ। হাতে সিগারেট। মুখে আর নাকে ধোঁয়ার কুণ্ডলি। নাহারকে দেখে পত্রিকা থেকে চোখ তোলে – অফিসে যাচ্ছো? হ্যাঁ। তুমি কখন যাবে? যাবো একটু পর। খালেদের কথায় হাসে নাহার। তুমি হাসছো…

  • দশ জানুয়ারি ১৯৭২

    মনি হায়দার আফসানা খানম কাঁদছেন। সাত মাস ধরে তিনি নিয়মিত কাঁদছেন। না, তার কান্না কেউ শুনতে পাচ্ছে না। মনের ভেতরে গুমরে গুমরে কাঁদছেন। না কেঁদে উপায় কী? তার চারদিকে ভীষণ বিপদ। একমাত্র ছেলে বাড়ি নেই। স্বামী কোথায় আছে, কেমন আছে জানেন না। আদৌ বেঁচে আছে কি-না…। আর ভাবতে চাইছেন না। কিন্তু কোত্থেকে ভাবনা আর মনকান্না…