অনুবাদ : বিকাশ গণ চৌধুরী
অন্তরের বৃক্ষ। এ-নামেই সূচিত ওক্তাবিও পাসের, যাঁর শেষ অধ্যায়ের জন্য তিনি ব্যবহার করেন সেই একই নাম, এক সম্পৃক্ত বুননের নিদর্শন হিসেবে। অন্তরের বৃক্ষ, ইস্পানি ভাষায় যা, Arbol adentro, ওক্তাবিও পাস তা রচনা করেন ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যবর্তী সময়ে এবং তা পুস্তকাকারে প্রকাশ পায় ১৯৮৭ সালে। এখানে প্রকাশিত পাঁচটি কবিতা ওই গ্রন্থের শেষ অধ্যায়ের অন্তর্গত; এই শেষ অধ্যায়ের মোট কবিতাসংখ্যা দশ, যার দ্বিতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম ও নবম ক্রমাঙ্কের কবিতাগুলো এখানে প্রকাশিত হলো; কবিতাগুলো যথাক্রমে –
‘পয়লা জানুয়ারি’ (Primero do enero), ‘বনপরীর যুদ্ধ’ (La guerre de la dridaída), ‘বেসুরো গান’ (CanciÓn desentonada), ‘থাম’ (Pilares) এবং ‘রাত, দিন, রাত’ (Noche, día, noche)।
গ্রন্থে কবিতাগুলোর প্রান্তিক অবস্থান থেকে এরকমটা ধারণা করা বোধহয় অন্যায় হবে না যে, এই কবিতাগুলো ১৯৮৬-৮৭ সময়কালে বা তার আশপাশের সময়েই লেখা। এখানে আমরা পরিচিত হই পাসের সেই উচ্চারণের সঙ্গে, যেখানে স্বপ্নের সঙ্গে গলা মিলিয়েছে মৃত্যু, আমরা দেখতে পাই নদীর কিনারা বেয়ে উড়ে চলা এক শব্দের বাগান।
পয়লা জানুয়ারি
ভাষার মতো,
অজানার দিকে
বছরের দরজাগুলো খোলা।
গতরাতে তুমি আমায় বলেছিলে :
আগামীকাল
আমরা সংকেত নিয়ে ভাববো,
একটা ল্যান্ডস্কেপ আঁকবো, একটা নকশা বানাবো
দিন আর কাগজের
জোড়া পাতায়।
আগামীকাল, আমরা আরেকবার
উদ্ভাবন করবো,
এই জগতের বাস্তব।
দেরি করে চোখ খুললাম।
এক অনুপল,
অনুভব করলাম আজটেকদের অনুভব,
দিগন্তের ফাটল দিয়ে
ফিরে আসা অনিশ্চিত সময়ের
অপেক্ষায় থাকা,
শৈলদ্বীপের ঝুঁটি।
না, বছর ফিরে আসে।
ভরিয়ে তোলে ঘর
আর আমার দৃষ্টি তাকে যেন ছুঁয়ে থাকে।
সময়, আমাদের কোনো সাহায্য ছাড়াই
অবস্থান করে
সঠিক শৃঙ্খলায়, গতকাল যেভাবে থাকে
রিক্ত রাস্তার সব বাড়ি,
তুষারমাখা সব বাড়ি,
নৈঃশব্দ্যমাখা সব তুষার।
তুমি ঘুমিয়েছিলে
আমার পাশে।
তোমায় উদ্ভাবন করেছিল দিন
কিন্তু তুমি মেনে নিতে পারোনি
দিনের সেই উদ্ভাবন।
– আমার সত্তার উদ্ভাবনও নয়।
তুমি ছিলে অন্য একটা দিনে।
তুমি ছিলে আমার পাশে
আর আমি তোমাকে দেখছিলাম,
তুষারের মতো,
উপস্থিতির ওপর ঘুমুচ্ছো,
সময়, আমাদের সাহায্য ছাড়াই,
উদ্ভাবন করেছে ঘর, রাস্তা, গাছ,
আর ঘুমন্ত নারী।
যখন তুমি চোখ খুলবে
আমরা আরেকবার হাঁটবো,
প্রহর আর তাদের উদ্ভাবনের মধ্যে,
আর উপস্থিতির মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী করবো নিজেদের,
আমরা তো শুধু সময় আর তার ধাতুরূপের সাক্ষী।
আমরা দিনের দরজা খুলবো,
আর প্রবেশ করবো অজানায়।
বনপরীর যুদ্ধ
বিশাল কুকুরটা তার চোখ খুললো,
লাফিয়ে উঠে, শক্ত করে চারটে থাবা গেড়ে,
পিঠ বেঁকিয়ে দাঁড়াল,
ডেকে উঠল এক অন্তহীন ডাক :
ওর ছটা ছুঁচফোটানো চোখে ও কী দেখেছিল?
ওর তিনটে নাক নিয়ে কার দিকে খেঁচিয়ে উঠেছিল?
ও দেখেছিল বিদ্যুৎগর্ভ মেঘ,
ও দেখেছিল একজোড়া চোখ, আর একটা বন্য বিড়াল,
বেড়ালটা লাফিয়ে পড়েছিল কুকুরটার ওপর,
কুকুরটা পেড়ে ফেলেছিল বিড়ালটাকে,
বিড়ালটা খুবলে নিয়েছিল কুকুরটার একটা চোখ,
কুকুরটা হয়ে গেল একটা ধোঁয়ার বুনন,
ধোঁয়া উঠে গেল আকাশে,
আকাশটা বদলে গেল ঝড়ে,
বিদ্যুতের অস্ত্র হাতে নেমে এলো ঝড়,
বিদ্যুৎ ছাই করে ফেললো সেই বন্য বিড়াল,
বিড়ালের ছাই ছড়িয়ে পড়লো
ব্রহ্মা–র চার কোনায়,
ঘরটা বদলে গেল সাহারায়,
গরম বালু উড়ে এসে তাপে শুকিয়ে ফেললো আমায়,
জলের দেবতাকে আহবান করলাম আমি,
ছাদে-ছাদে লুটোপুটি খেতে লাগলো বজ্রবিদ্যুৎ,
আকাশের কলসি ভেঙে খুলে গেল,
চল্লিশটা বজ্র দেগে হয়েই চললো বৃষ্টি,
ঘরের ছাদ ছুঁলো জল,
তোমার বিছানা দুলতে থাকলো ঢেউয়ের মাথায়,
বিছানার চাদর দিয়ে তুমি পাল খাটালে জাহাজের,
একটা দেবদূত আর চারটে ফেনার ঘোড়ায় টেনে নিয়ে যাওয়া
তোমার মাতাল তরণীর মাথায় দাঁড়িয়ে,
আগুনের ঢেউয়ের মতো তোমার বিদ্যুৎকুন্তল,
তুমি নোঙর তুলে স্থাপন করলে ঝড়ে,
আর বেরিয়ে পড়লে সমুদ্রে,
তোমার কামানগুলো,
জাহাজের ডানদিক থেকে গর্জে উঠলো,
ভেঙে ফেললো আমার ঘরদোর,
ছেঁতরে দিলো আমার সব পথের নির্দেশ,
তোমার আগুনের মুকুর,
জ্বালিয়ে দিলো আমার সব বিশ্বাস,
আমি পালিয়ে এলাম রান্নাঘরে,
কুঠুরির ঝাঁঝরি ভেঙে ফেলে,
নালি দিয়ে পালালাম,
মাটির নিচে একটা খরগোশের গর্ত পেলাম,
অনিদ্রা এর মোমবাতি জ্বালালো,
এর ঝিকিমিকি ভরিয়ে তুললো আমার রাত,
প্রেরণা, ষড়যন্ত্র, নৈবেদ্য,
সবুজ ক্রোধে উন্মত্ত এক কচি অগ্নিশিখা,
আর ‘তোমাকে এর দাম দিতে হবে’র বাঁকানল!
আমি বানিয়ে নিলাম শেষ বিচারের খঞ্জর,
ড্রাগনের রক্তে নেয়ে উঠলাম,
গর্তের দেয়াল বেয়ে আমি বেরিয়ে এলাম,
মাথা নিচু করে দর-দালান পেরিয়ে খুলে ফেললাম দরজা,
আয়নায় সব দেখছিলে তুমি, হাসছিলে,
আমায় দেখে এক ঝলকে দৃশ্য হলে তুমি,
সেই আলোর মধ্যে দিয়ে ছুটে গেলাম আমি,
জিজ্ঞাসাবাদ করলাম কমোডে থাকা চাঁদকে,
ঘুসি মারতে থাকলাম পর্দায় থাকা ছায়ায়,
নাস্তির মধ্যে লাগানো কোনো গাছের মতো,
সুনসান চকে দাঁড়িয়ে থাকা মূর্তির মতো,
বেষ্টনীর মধ্যে থাকা শব্দের মতো,
বন্ধ ঘড়ির গায়ে আমার হাত,
মুঠোয় ভরা প্রতিধ্বনি নিয়ে পরিত্যক্ত আমি,
আমার খুলির গুহার ভেতরে
অশরীরী অক্ষরের নাচ,
হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে তুমি ফিরে এলে,
তোমার ডান-হাতে একটা ছোট্ট সূর্য,
আর বাঁহাতে চুনিভরা ধূমকেতু,
নক্ষত্ররা পাক খায় আর গান গায়,
উড়ান দিয়ে নকশা আঁকে,
ওড়া জোড় দেয় আর ভাঙে আর জোড় দেয়,
ওরা দুই, ওরা এক, ওরা কিছুই না,
আগুনের জোড়া পাখি,
আমার কানে বাসা বাঁধে,
আমার ভাবনাকে জ্বালিয়ে, স্মৃতিকে ছিন্নভিন্ন করে,
আমার মাথার কারাঘরে গান গায়,
রাতের সমুদ্রের বাতিঘরের জন্য একক সংগীত,
আর হাঙরদের বিবাহের স্তব,
ফুলে-ফুলে ঢেকে যায় খঞ্জর,
তিন মাথাওয়ালা কুকুর তোমার পা চেটে দেয়,
দর্পণ এক গতিহীন স্রোত,
তুমি ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়ে হাসো,
তুমি একটা গলানো আলোর থাম,
তুমি বলেছিলে, ফিরে গিয়ে ইউক্যালিপটাস হও,
আমার শাখাদের নাড়িয়ে দিয়েছিল বাতাস,
আমি চুপ করে ছিলাম, আর বাতাস কথা বলছিল
ফিসফিসে সব শব্দ, যা ছিল পাতা,
সবুজের মর্মরধ্বনি, জলের জবান,
ইউক্যালিপটাসের গোড়ায় পা ছড়িয়ে বসো,
গোপন শাখার দোলায়,
তোমার তুমি হয়ে-ওঠা, মলয়পবন, যা ফিরে এলো।
বেসুরো গান
Non visto color de verdigay
Nin trobo discor ni fago deslay
– Juan Alfonso de Baena
দিন ছোট,
দীর্ঘ প্রহর।
গতিহীন আমি ফিরে খুঁজি তার পদক্ষিপ,
বেয়ে উঠি তার প্রার্থনা সংগীতের কোমল স্বর,
বাতাসের সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসি,
আর স্বচ্ছ দরদালানে আমি হারিয়ে যাই
– তবু আমি আমাকে খুঁজে পাই না,
আর দেখতে পাই না তোমাকেও।
দিন ছোট,
দীর্ঘ প্রহর।
যে-হাতে লিখি, আমার সেই জেদি হাতটাকে দেখতে পাই,
কাগজের ওপর লেখা গোলগোল শব্দরা,
পাতার ওপর আমি আমার ছায়াকে দেখতে পাই, দেখি
প্রহরের ফাঁকা কেন্দ্র থেকে আমার পতন
– তবু আমি তোমাকে খুঁজে পাই না,
আর দেখতে পাই না আমাকেও।
দিন ছোট,
দীর্ঘ প্রহর।
সময় টেনে নিয়ে যায়, লুকোয়, উঁকি মারে,
সময় চাপা থাকে, বাতাসের পি- হয়ে যায়,
সময় ছিটকে বেরোয়, যেন এক বাতাসের থাম,
– তবু আমি আমাকে খুঁজে পাই না,
আর দেখতে পাই না তোমাকেও।
দিন ছোট,
দীর্ঘ প্রহর।
আমি ভিড়, গলিঘুঁজি আর প্রতিধ্বনির মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাই,
আমার হাত তোমাকে ছোঁয় আর তুমি হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যাও,
আমি তোমার চোখে চোখ রেখে দেখি আর অদৃশ্য হয়ে যাই,
প্রহর খুঁজে ফেরে, মুছে ফেলে, আবিষ্কার করে তার প্রতিফলন,
– তবু আমি তোমাকে খুঁজে পাই না,
আর দেখতে পাই না আমাকেও।
দিন ছোট,
দীর্ঘ প্রহর।
সময়ের মধ্যে বীজ ঘুমায়,
অক্ষরের বিস্ফোরণে ফেটে পড়ে বাতাসে,
একটা শব্দ, কথা না বলেই যে বলে,
সময়ের, তোমার আর আমার নাম,
– তবু আমি আমাকে খুঁজে পাই না,
আর দেখতে পাই না তোমাকেও।
নামেরা সব ফল, পেকে ঝরে পড়ে;
অনন্ত প্রহর তার নিজের ভিতরেই ঝরে পড়ে।
থাম
আর যখন আমাদের আত্মারা দরাদরি করে,
আমরা শ্মশানে পাথরের মূর্তির মতো শুয়ে থাকি…
জন ডান
নগরচত্বরটা ছোট।
কুষ্ঠরোগগ্রস্ত চারটে দেয়াল,
জল ছাড়া একটা ফোয়ারা,
দুটো সিমেন্টের বেঞ্চ,
কয়েকটা জখমি গাছ।
নাগরিক নদীদের
দূর আন্দোলন,
বিশাল আর অনিশ্চিত,
রাত ফিরে আসে, ঢেকে দেয়
বিষণ্ণ স্থাপত্য।
ছায়ার সাগরে,
প্রতিটি কোনায়, প্রতিটি দরজায়,
গজিয়ে ওঠে থাম, প্রাণবন্ত,
স্থির : যুগলেরা
জড়াজড়ি আর চাপাচাপি
দিয়ে বুনে চলেছে ফিসফাস,
হৃৎস্পন্দনের থাম।
অন্য গোলার্ধে
মেয়েলি রাত্রি,
অঢেল, জলজ।
সেইখানে দ্বীপ জ্বলে
আকাশের জলের ভেতর।
ছায়াদের হরিৎ করে
কলাপাতা।
মহাকাশের মধ্যে, আমরা
এখনো জড়াজড়ি করেই আছি,
একটা গাছ, যেটা শ্বাস নেয়।
আমাদের শরীর ঢেকে থাকে
অক্ষরের আঙুরলতায়।
গুঞ্জনের পল্লবগুচ্ছ,
ঘুমন্ত ঘাসে থাকা
অনিদ্রায় ভোগা ঝিঁঝিঁদের দল,
নক্ষত্রেরা সাঁতরাচ্ছে
ব্যাঙেদের ডোবায়,
গ্রীষ্ম জোগাড় করছে
আকাশে রাখা তার সব ঘড়া,
দৃশ্যমান হাতে
বাতাস খুলে দিচ্ছে দরজা।
তোমার কপাল সেই দেহলি
যা পছন্দ করে চাঁদ।
মুহূর্ত বড় বড়ো,
দুনিয়াটা এখন ছোট।
আমি তোমার চোখের ভিতর হারিয়ে যাই,
আর হারিয়ে গিয়ে দেখি,
তুমি আমার চোখের ভিতর হারিয়ে যাও।
পুড়ে যায় আমাদের নাম,
চলে যায় আমাদের শরীর।
আমাদের স্থান চৌম্বকীয়
কেন্দ্রের মধ্যে – কোথায়?
মেক্সিকোর বাগানে
স্থাণু যুগল,
কিংবা এশিয়ার উদ্যানে :
অনেক তারার নিচে
যিশুর নৈশভোজ হয় প্রতিদিন।
মশালের সিঁড়ি বেয়ে
আমরা উঠি নামি
ওপর থেকে নিচ,
শিকড়ের রাজত্ব,
ডানার গণতন্ত্র।
নিমীলিত চোখের
গ্রন্থিবদ্ধ শরীরসব
আত্মার গ্রন্থ :
আমার স্পর্শ আর জবান দিয়ে
তোমার শরীরে আমি
দুনিয়ার ধর্মশাস্ত্র লিখি।
নামহীন জ্ঞান :
পৃথিবীর স্বাদ।
বীজাধার আর শুক্রাণুর
হঠাৎ বিস্ফারের মতো,
দীপ্তি আর অন্ধত্বের জন্য
অল্প আলোই যথেষ্ট।
শুরুর আর শেষের মধ্যে,
সময়হীন একটি মুহূর্ত,
রক্তের এক নাজুক খিলান,
শূন্যতার উপরের সেতু।
জোড়বাঁধা, শরীর দুটি
খোদাই করে অশনির আলো।
রাত, দিন, রাত
১
আলোর প্রবাহ : একটা পাখি
খোলা ছাদে গান গায়।
তোমার শরীরের উপত্যকায়
আর পাহাড়ে পাহাড়ে ভোর হয়।
২
আগুন রাতে ঘুম যায়,
জল হাসতে-হাসতে জাগে।
৩
পাতার মতো তোমার চুলের শামিয়ানার নিচে
তোমার কপাল :
এক কুঞ্জঘর,
ডালপালার মাঝে এক অমলতায়।
আমি বাগান নিয়ে ভাবি :
বাতাস হয়ে তোমার স্মৃতিকে দোলাতে চাই,
রোদ হয়ে তোমার ঝোপঝাড় পরিষ্কার করতে চাই!
৪
আদিম, লম্বা, এক
তালগাছের তলায়,
যোদ্ধা সূর্যের পটে সবুজ তরঙ্গে
তুমি বিশ্রাম করো।
তোমার শরীর
ছায়ার মধ্যে থাকা নিশ্চল জল।
স্তব্ধতা। ব্যাপ্ত দুপুর
কোনোমতে স্পন্দিত হয়।
তোমার দুপায়ের মধ্যে দিয়ে অবাধ্য সময় বয়ে যায়।
৫
সূর্যের একটা শিরা, জিয়ন্ত সোনা,
খাঁজ, কাটাকুটি, সর্পিল,
সবুজ নক্ষত্রপুঞ্জ :
তেকোনা পোকাটা
ঘণ্টায় তিন-চার মিলিমিটার করে
ঘাসের দিকে এগোচ্ছে।
ধরো, তোমার হাতের তেলোয়
তুমি ওটাকে রাখলে
(যেখানে নিয়তি খুঁজে বেড়াচ্ছে আঁকাবাঁকা রেখাবিন্যাসের
গূঢ় রহস্য) :
সম্ভবত রানীপরীর হাত থেকে ঝরে পড়া
একটা জিয়ন্ত মানিক, একটা জিয়ন্ত জীব,
– আর সশ্রদ্ধচিত্তে তুমি ওটাকে যেতে দিলে,
মহান সবকিছুর দিকে ফিরে যেতে।
৬
দিন, পরম এক ফুল,
ঘণ্টার পর ঘণ্টা যা পুড়ে যায়।
আরেকটা কালো ফুল, মঞ্জরিত হয়।
ইন্দ্রিয়ের অগোচরে তুমি অতিক্রম করো
সব ছায়া আর প্রবেশ করো,
রাত্রির দেবীতে।
বড়োজোর একটা ঢেউ,
বড়োজোর সাদা একটা সৌরভ,
তুমি আমার বিছানায় আড়মোড়া ভাঙো।
আর আবার এক নারী হয়ে যাও।
৭
সাদা সব পাতা
আর কালো সব কায়া,
কামনার জোয়ার
আর স্বপ্নের সাজানো সব বাগান।
৮
একটা অলীক গ্রাম,
তোমার চোখের পাতার নিচে ঘুমায় :
ক্ষুধার্ত ঘূর্ণিঝড়,
স্পর্শের সন্তানসব মাংস হয়ে যায়,
রক্ত পান করে, বদলাতে থাকে
কামনার নানান রূপে
আর সবসময় একইভাবে :
মুখের পরে মুখ
জীবনের যা মৃত্যু,
মৃত্যুর যা জীবন।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.