কবিতা

  • জলিধান

    মাসুদ পথিক   আগাছার বিপরীতে যে হারানো শস্যের বিহবল মুখ তার নাম জলি, জলি চাষার মেজো মেয়ে   আমি চুপিচুপি দেখেছি তার মনোলোভা বুক পুষেছি তার গোপন অসুখ   ওগো ধান, ওরে জলি তুই মাঠের শেষ গান তবে কে আঙিনা মাড়িয়ে নিয়ে যায় তোর সোনা রূপ   আমি আজ মূক, আমি নয়তো মাঠের বিষণ্ণ মুখ

  • ভুবন বেদেনির পাড়া

    আহমেদ বাসার   এখনো নেভেনি আলো – আরো কিছুদূর হেঁটে যাও ভুবন বেদেনির পাড়া হতে কিছুটা পশ্চিমে হেলে যে-পথ চলে গেছে জীবন-মাঝির কুটির ঘেঁষে তার শেষপ্রান্তে ঝুলে আছে আদিম হারিকেন যদিও নিভুনিভু – হাতে তুলে নিয়ে কিছুটা উসকে দাও আলো, চড়া দামের কেরোসিন যদি সম্ভব হয় কিছুটা কিনে নিও প্রগতির দোকান থেকে সভ্যতার সমস্ত বাতি…

  • অজ্ঞেয়

    সাবিনা ইয়াসমিন   কে জানত শুকিয়ে যাবে এইসব বিসত্মীর্ণ নদী মরে যাবে লাল চাঁদ এমনকি টইভুইজুড়ে জ্বলদর্চির মতো জ্যোৎস্নায় অপেক্ষারত অনড় অহল্যার শরীরে জন্ম নেবে দীঘল শষ্প আর, শীতঘুম ভেঙে কোনো এক ঘোরলাগা ভোরে কবি ফিরবেন বলে ওমে চোখ মেলবে আদুরী রোদ?   এও কি জ্ঞেয় ছিল ভালোবাসার চেয়েও বেশি কিছু জঙ্গম আছে সঞ্চারণশীল, প্রাণ…

  • তিনটি কবিতা

    জিনাত জাহান খান দ্বিধা   আসমান থেকে নেমে আসা মেঘ-সিঁড়ি দ্বিধা ভারাতুর পায়ে, সে কী ভেঙেছিল?   দিঘির শালুকে একা কাঁপছে সময় – কাঁপছে ক্ষনেক জল, চোখের পাতায়।   মনে নেই, হাতে হাত রেখেছিল কিনা রেখেছিল কিনা মন মনের ভেতরে।     হুইসেল   অদ্ভুত সুন্দর এক শাদা কাগজ! পৃষ্ঠা জুড়ে আঁকা অসংখ্য চুল্লি­, প্যারেড…

  • তাহলে আয়েশা, তোমাকে

    আলোময় বিশ্বাস   যে রাতে হাঁসগুলি গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে সেই আঁধারেই পাখা মেলেছে আলোকসুন্দর পাখিরা। শোনা কথায় ঢুকে পড়েছে সৌভাগ্যের কপাল আর ঝাঁপি খুলে ধরেছে পঞ্চতন্ত্র হ্যাঁ একেই বলে ত্রাসের যজ্ঞ। সে-রাতে সব কাক একসাথে ডেকে উঠেছিল সে-আঁধারে নক্ষত্র জ্বলে উঠেছিল বনবাদাড়ে কালো ছায়ায় বট শেওড়ার আড়ালে লুকিয়ে কাঁপছিল বাড়ির বেড়াল-কুকুর ঘটিবাটি গলে যখন…

  • আরো গভীরে আরো ভিতরে

    শিউল মনজুর এখানেই শেষ নয়। সামনে রয়েছে আরো অসংখ্য রহস্যময় পথের বাঁক। রয়েছে সোনালি পথের ধূলি। বাঁকে বাঁকে শালিক, টিয়া, ময়না ও নানা রং পাখিদের মুখ রয়েছে লুকিয়ে। আর মনে রেখো পথের ধূলিতে উড়ছে দশকে দশকে হারানো ডাক পিয়নের চিঠি অথবা মার্বেল খেলার দিন। অথবা কোথাও কোথাও দাঁড়িয়ে আছে নক্ষত্র বেদনার পাঠশালা। এখানেই শেষ নয়।…

  • একটি ঘোষণা

    চঞ্চল শাহরিয়ার   লেখার স্টাইল চেঞ্জ হবে আগামী সপ্তায় নদী, মাছ, সমুদ্দুর ক্যাম্পাসের মিষ্টি বড় আপু সহপাঠীদের উজ্জ্বল হাসি, খামোকা রিকশায় ঘোরার দিন রেললাইন ধরে হেঁটে আসার সুখ গলির মোড়ে ফুরিয়ে যাওয়া বালিকা মসজিদের আজানের ধ্বনি দুঃস্বপ্নে কাটানো কৃষকের রাত ময়দানে নেতার ভাষণ ফিরে আসবে নতুন নির্মাণে।   দীর্ঘকাল আমি-তুমি, তুমি-আমি অনেক হয়েছে একটু আলাদা…

  • রাধামোহনপুর

    স্নেহাশিস পাল   জীর্ণ সৌধে নামহীন মরশুমি ফুল প্রজাপতি খোঁজে কচি পাপড়ির মৃদু বাঁক দূরের মরমি ভাটিয়ালি-ঘেঁষা ঝুরো কূল গোধূলি-হাওয়ায় ট্যুরিস্ট-দল যে নির্বাক   আমিও আহুতি, দুঃখ ঝরনা ঢালি শুধু কোন বিশ্বাসে সব পথ হয় নির্মাণ না-বুঝে সাজাই শুকনো পাতায় ধুধু পাগলের শিসে আহত পাখির শেষ গান   অবহেলা আর খেলার মাঝে যে-সাঁকো সেসব পেরিয়ে…

  • দৌড়

    দিব্যেন্দু রায়   ছুটছে শহর, ছুটছে মানুষ, সকাল, দুপুর, বিকেল ছুটছে শতাব্দী, রাজধানী, দুরন্ত এক্সপ্রেস   পাঁচতলা শপিংমলে জমেছে কেনাকাটা ঝকঝকে বিজ্ঞাপন আলোর রোশনাই তিনটে কিনলে একটা ফ্রি বাড়তি উপহার।   সওদা করে ঘরে ফেরে ভিনগাঁয়ের চাষি বউ মন উচাটন, ধান মেলেছে রোদ্দুরে চড়ুই শালিক মেতেছে পিকনিকে।   আকাশ ছুঁয়েছে টাওয়ার যেন শহরের অহংকার।  …

  • মানুষ তুমি

    মাহবুব বারী   সংসারে আর একটি সংসার কেন পেতেছ এ কি তবে শুধু খেলা? সংসারে আর সংসারে এ-খেলাতে কোন বেলাতে কখন কোথায় থাকো যে মানুষ তুমি কেমন করে পার হও তুমি আবার আসো ফিরে দিনে-রাতে আসা-যাওয়ার পথে, কত শত মতে সঙ্গী পাবে কাকে, বন্ধু হবে কারা, গুরু হবে কে যে মানুষ তুমি পথের মতো যেতে…

  • আত্মসমর্পণের খসড়া

    প্রবালকুমার বসু   জলে ডুবে যাই, জলে ভেসে উঠি, চারপাশে কোলাহলে কাছে দূরে দেখি ঘর, বাড়ি, পাড় – শব্দেরা ভেসে চলে   আমিও ঝাঁপাই শব্দের পিছু, কী নিয়ে লিখব তবে সময় ফুরোলে কিছু শব্দেরা মানেহীন ঠিকই হবে   জলে ডুবে যাই, জলে ভেসে উঠি, জমাবে অভিপ্রায়ে জল থেকে দেখি শব্দগুলোকে মেয়ে এক লুকোতে চায়  …

  • মানুষের কথা

    শ্যামলকান্তি দাশ   মানুষ বড়ো হচ্ছে। একটু একটু উঁচু। মঞ্চ থেকে যাতে লোকে দেখতে পায়। চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলছে। জিভ আলগা। দাঁত ফাঁকা। হুহু করে কথা বেরিয়ে যাচ্ছে। তার আঙুল ঘূর্ণ্যমান। পাখনা উড়ন্ত। উড়তে উড়তে সে এস্পস্ন্যানেড যাচ্ছে। পার্ক স্ট্রিট যাচ্ছে। খিদিরপুরের ট্রাম খুঁজতে খুঁজতে ফুটপাতে গলা ভিজিয়ে নিচ্ছে।   তার গায়ে চুন। মুখে কালি।…