কবিতা

  • জীবনের বাঁশি

    মাহবুব সাদিক জানালার বাইরে তাকাই বসন্তের মধুর হাওয়ায় নেচে ওঠে মেহগনি গগন শিরীষ – ডাল থেকে উঁকি-মারা নতুন পাতায় বেজে ওঠে জীবনের গান, কালঘুম ভেঙে যেন সবাই উঠেছে জেগে আমি শুনি দূরাগত জলের কল্লোল – জীবনের মোহময় বাঁশি; সবুজ পাতার আলো পিছলে নেমে গিয়ে ভোরবেলাটিকে আগাগোড়া ঢেকে দেয় সবুজে-সোনায় – মিঠে আঁচে ঝলসানো স্মৃতির তেলালো…

  • সাতাশ জুলাই

    সুরজিৎ দাশগুপ্ত সূর্যদেব যখন আকাশ জুড়ে সেই এক জুলাই-দুপুরে মৃত্যু বের হলো তার নিষ্ঠুর শিকারে – কখন ঝাঁপাবে কার ঘাড়ে, কার টুঁটি টিপে ধরে টুঁ শব্দটি না করে বিদ্যুৎ ঝলকে চতুর চিতার মতো পালাবে পলকে। সেই মৃত্যু খুঁজে খুঁজে এসে পেল কি না মনুয়াকে শেষে!

  • দুটি কবিতা

    আলতাফ হোসেন নিজের পায়ে নিজের পায়ে নিজের পথে নিজের নাকি পায়ে, নিজের নাকি পথে ঋত্বিককুমার ঘটকের নাকি বই সরল যন্ত্রপাতি নিয়েই নাকি কাজ চালাতেন আগেকার কারিগরেরা পরে অনেক হার্ডল রেস এসেছে যা আবার আগে থেকেও ছিল অন্ধকার ছিল তবু আই লাভ ইউ বলতে গিয়ে বই পড়া হয় নাটকীয় পাত্রপাত্রীদের নাম লেখা খুঁজে বেড়াই একেবারে মোক্ষম…

  • দেহতরী মনতরী

    মুহম্মদ নূরুল হুদা হৃৎদুনিয়ার বীজে ফুটে যদি এ-মৃৎদুনিয়া ব্রহ্মফুলে ম-ম ত্রিভুবনে সোনার খামার, মানুষ, তরু ও প্রাণী-অপ্রাণীর সকাতর হিয়া অলক্ষে ফুটিয়ে তোলে যুগলাত্মা তোমার আমার। তখন দুহাত মেলে উড়ে যাই দূরের আকাশে, যুগল পাদুকা বৈঠা ঘাই মারে নদীজলে উদাম বাতাসে, আমাদের দুই চোখ দিনরাত চাঁদ ও সুরুজ হয়ে হাসে। যতদূর যেতে চাই, ততদূর যাই চলে…

  • তিনটি কবিতা

    অনিতা অগ্নিহোত্রী জোনাকি আমাদের জনারণ্য আজ একটি জোনাক-জ্বলা গাছ জ্বলা ও নেভার ছন্দে পথ কাঁপে, কলরোলে অট্টালিকাগুলি দুলে ওঠে, আজ আমাদের ভয় নেই পথের দুপাশে বাতি জ্বলে নির্মম নির্জনতা নেই, মানুষের হৃদয়ের গানে মুখর আঁধার খিন্ন পথ। শুধু সেই নিহত মেয়েটি শতচ্ছিন্ন শাড়িটি জড়িয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে একধারে; আমাদের গান ও কবিতা ফেরাবে কি তাকেও জীবনে?…

  • তুলনামূলক সন্ধি

    হাবীবুল্লাহ সিরাজী সামান্য ঠেলেঠুলে কিংবা একটু কাত ক’রে রাতকে গর্তের মুখে নামিয়ে দিলে অথবা গুহার ঘাড়টি সোজা রেখে অন্ধকারে চুবিয়ে নিলে ভূগোল বই খুলতে পারতাম। বরফপাতের দৃশ্যটি এখনো অমুদ্রিত … হইচই ক’রতে-ক’রতে ভূমিকম্প বেরিয়ে প’ড়লো যতোটা স্পর্শ করা যায় একটু টেনে বা কাঠ-খড় দিয়ে কিছুটা হ’লেও আগলিয়ে যদি বুঝ দেয়া যেতো রাঙা প্রভাত এবং গরম…

  • ধান্যসংস্কৃতির এই মৃত্তিকা

    রবিউল হুসাইন যুদ্ধ প্রেম শিল্প আর রাজনীতির কোনো স্থায়িত্ব নেই সর্বদাই পরিবর্তনবান্ধব জীবিত না থাকলে মানুষ বা প্রাণীর মৃত্যু হয় না যার কিছু নেই, সে কীভাবে নিঃশেষ হবে যে ঘর থেকে বেরই হয় না, সে কী করে পথ হারাবে জলে পড়লে অতলে ডুবতে হয়, তা না হলে সাঁতার নিহত হতে হলে আগে আহত হতে হয়…

  • এই তো সেদিন… এখন আর

    আশিস সান্যাল এখন আর তোমার কথা ভাবি না। তোমার কথা ভাবতে গেলেই আমার শরীরে একটা অবসাদ দাপাদাপি করতে থাকে। অথচ তোমার জন্যেই একদিন আমি নির্মাণ করেছিলাম এই আশ্চর্য তোরণ আসলে এর মধ্যেই তুমি পালটে ফেলেছ তোমার খোলস। তাই চকচক করছে মেরুদ-হীন তোমার শরীর। লোভ আর হিংসায় এখন বিষাক্ত করতে চাইছ আমাকেও। এখন তোমার কথা ভাবতে…

  • এই তো সেদিন

    মোহাম্মদ রফিক এই তো সেদিন, মা ডাকেন, দাওয়ার ওপর থেকে, খোকা, এই খোকা, বাইরে শীত, জামা গায়ে দিয়ে যাও; এই তো সেদিন, দাদি কন, পাটিটা বিছিয়ে নিয়ে ভালো করে দুধে কলা, এবার মাখিয়ে নেও, সোনামণি; এই তো সেদিন এই বাবার সাইকেলে পিছে চেপে বৈটপুর সাইনবোর্ড বাদাল বনগাঁ তারপর কত দূর কত তেপান্তর, মরা খালে নদী…

  • ফাউ অর্থাৎ কনজুমার্স সারপ্লাস

    আসাদ চৌধুরী টিকা-টিপ্পনী-বিহীন জ্বলে-ওঠা আড্ডা-লাইব্রেরি (প্রকাশনা-সন-তারিখের নাম গন্ধ নেই)। তাত্ত্বিক এবং অ্যাকটিভিস্ট সিগারেট ভাগাভাগি করে, বাক্যে গরম হরফ নেই, তাদের আস্তিন যথাস্থানে, হয়নি গোটাতে। আমার নিজস্ব জ্ঞান-চর্চা এই মতো, বাপ-চাচাদের কাছ থেকে পাওয়া, (প্লিজ, আমাকে না দেখাবেন এথেন্স শহর, না হাইকোর্ট)। মনে-মনে আরো একবার হেমন্তের ইয়াব্বড়ো চাঁদটিকে শশি বলে ডেকে উঠলাম। এই নামে নবাগতা এক…

  • চড়াইভাতি

    নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী শীতকালে দু-দুটো দিন ছুটি পাওয়া যায়। পঁচিশে ডিসেম্বরের বড়দিন আর পয়লা জানুয়ারি। তারই মধ্যে ওরা একদিন দল বেঁধে এই অজ পাড়াগাঁয়ে পিকনিক করতে এসেছিল। ওরা মানে মাইল পঁচিশেক দূরবর্তী এক শহরের এক দঙ্গল ছেলেমেয়ে। যে মিনিবাসে ওরা এসেছিল, তা থেকে সেদ্ধ ডিম, কলা, পাউরুটি, সবজি ও মাছ-মাংসে ভর্তি গোটাকয় প্ল্যাস্টিকের থলিও নামে আর…

  • হয়তো

    পার্থ রায়   একদিন – পৃথিবীর সব ঘড়িগুলো থেমে যাবে, সব কোলাহল থমকে থাকবে নিথর দিশেহারায়; জেনে নিও – সমাজের কানুনি কিতাব খেই হারিয়ে গ্রন্থাগারের নীরবতাকে মেনে নেবে; তখন – তুমি মাথা রেখ আমার প্রাচীন কাঁধে, হয়তো – নিশুতি শীতের রাতে ঝরা পাতাদের সাথে একটা ছেঁড়া কবিতার পাতা দূত হবে ভালোবাসার বার্তা নিয়ে।